
পুরুষের যৌন অক্ষমতা (Erectile Dysfunction) এক সময় চিকিৎসকরা মানসিক রোগ বলে মনে করতেন। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস, অথেরোসক্লেরোসিস (atherosclerosis) ও বার্ধক্যজনিত রোগ অক্ষমতার জন্য দায়ী। আবার রক্তসঞ্চালন সমস্যা, নাইট্রিক এসিডের অভাব বা নার্ভ ইনজুরির কারণেও এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। করোনায় আক্রান্তের পর সুস্থ হয়ে অনেকের মধ্যেই এ অক্ষমতা দেখা দিয়েছে। তবে যথাযথ চিকিৎসায় এ রোগ থেকে সহজেই মুক্তি মেলে। বার্ধক্য, পেইরোনির সমস্যা (Pezronies disease), পুরুষাঙ্গের কান্ডের স্নায়ুর (cavernous nerve) আঘাতজনিত সমস্যা শারীরিক অবস্থার সঙ্গেও এ রোগটি জড়িত। এগুলো প্রস্টেট ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ বলে বিবেচিত হয়। এ সমস্যাগুলো লিঙ্গের নিউরোভাসকুলার (neurovascular bundles) ধ্বংস এবং লিঙ্গের স্বাভাবিক উত্থান ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। ফলে কার্পাস ক্যাভারনাসে (corpus cavernosa) যে ক্ষত সৃষ্টি হয়, সেখান থেকে আর কোনভাবেই স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরানো সম্ভব নয় বলে এখন পর্যন্ত সবার ধারণা। অটোলোগাস স্টেমসেল বা নিজ দেহ থেকে সংগৃহীত স্টেমসেল যৌন অক্ষমতা থেকে মুক্তি দিতে নতুন আশার আলো হিসেবে দেখা দিয়েছে, যার প্রমাণ লক্ষণীয়।
* স্থায়ী চিকিৎসা : স্বীকৃত যে নাইট্রিক অক্সাইড ফসফোডাইস্টিরেস টাইপ-৫ ইনহিবিটর বাড়াতে মূল ভূমিকা পালন করে এর মধ্যে রয়েছে, সিলডেন ফিলা (ভায়াগ্রা, রিভাটিও), ভারডেনফিল (লেভিট্রা) ও টাডালাফিল (এডসিরকা ও সিয়ালিস)। কিন্তু নাইট্রিক অক্সাইড প্রবাহ ব্যাহত হলে এসব ওষুধ কোন কাজ করে না। এছাড়া এসব ওষুধে যৌন অক্ষমতার অন্তর্নিহিত কারণ দূর হয় না। তাই যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক চলে ও ওষুধ খেলেই এর স্থায়ী সমাধানের পথ।
* নিউরোপ্যাথি ও এন্ডোথেলিয়াল কর্মহীনতা : neuropathy and endothelial dysfunctionmn উচ্চমাত্রার ডায়াবেটিস, মেটাবলিক সিনড্রোম, নাইট্রিক অক্সাইড সিনথেসের নিম্নগামী নিষ্ক্রিয় প্রবণতাসহ নাইট্রিক অক্সাইডের মাত্রা কমে যায়, এমন কোন রোগ থাকলে তা সাধারণ প্রোস্ট্যাটেকটমি (radical prostatectomy), atherosclerosis,, অতিরিক্ত বয়স এবং hzpogonadism-এর পর লিঙ্গের টিস্যু অক্ষম করে দিতে পারে। চাহিদানির্ভর চিকিৎসার দিক থেকে বর্তমানে উল্লিখিত ওষুধগুলোর (PDE5-i) কার্যকারিতার হার ৬০-৭০ শতাংশ। যেসব পুরুষ PDE5-র ব্যবহার করেও কোন সুফল পান না, তাদের জন্য প্রোস্ট্যাগ্লানডিন ই-১ (prostaglandin E1) ও পাপাভেরাইন (papaverine e.g. bimix, trimic, etc) vasoactive substances-এর ইন্ট্রাকেভারনাস (intracavernous) ইনজেকশন দেয়া হয়। এতে ব্যর্থ হলে রোগীকে সার্জারির পরামর্শ দেয়া হয়। এটা পরিষ্কার যে, যৌন অক্ষমতার বিদ্যমান সব চিকিৎসাই সাময়িক উপশমের জন্য। এর কোনটিই সমস্যার পূর্ণাঙ্গ নিরাময়ের জন্য নয়।
* চিকিৎসা পদ্ধতি : উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে রোগের সম্পূর্ণ নিরাময় প্রধান বলে বিবেচনা করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে নিজ দেহ থেকে সংগৃহীত বা অটোলোগাস (autologous) স্টেমসেলের মাধ্যমে পুরুষের যৌন সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব এবং ইতোমধ্যেই এটি প্রমাণও হয়েছে।
* স্টেমসেল : স্টেমসেল হলো মানবদেহের একটি আদি কোষ। মানুষের দেহে প্রায় ২০০ রকমের কোষ আছে- এর সবগুলো মূলত একটি কোষ থেকে উৎপন্ন হয়। মানবদেহের মূল উৎস সেই কোষটিই হলো স্টেমসেল। জন্মের পর থেকে মানুষের শরীরে নতুন নতুন কোষ তৈরি হলেও আদি সেই কোষটি শরীরে থেকে যায়। এটি ব্যবহার করে নতুন যে কোন ধরনের কোষ তৈরি করা যায়। স্টেম সেলের এই গুণ কাজে লাগিয়ে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষকরা নতুন নতুন চিকিৎসা ব্যবস্থা উদ্ভাবন করছেন। স্টেমসেল ব্যবহার করে পুরুষের অক্ষমতার স্থায়ী সমাধান দেয়া হচ্ছে।
স্টেমসেল নিজে নিজে অবিকল নতুন সেল তৈরি করতে পারে এবং মেরামত বা প্রতিস্থাপনের জন্য সহজেই পৃথক করা যায়। কোন স্টেমসেল যখন মূল সেল থেকে পৃথক করা হয়, তখন এর দুই অংশই স্টেম সেলের সমতুল্য হয়ে ওঠে অথবা পেশি, হাড়, তরুণাস্থি, রক্তনালি, স্নায়ু বা মস্তিষ্কের মতো বিশেষ ধরনের কোন সেলে পরিণত হয়। ফলে এ ধরনের স্টেমসেল শরীরের অকেজো হয়ে যাওয়া রক্তনালি সচল করা, ক্ষত সারানো, ক্ষতিগ্রস্ত স্নায়ু পুনরুজ্জীবিত করা, স্বাস্থ্যকর নাইট্রিক অক্সাইড রিসেপেক্টর ফিরিয়ে আনতে স্থায়ী ভূমিকা রাখতে পারে। তাই অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সুস্থ জীবনযাপন করুন।
ডাঃ জাহেদ পারভেজ
লেখক : চর্ম, যৌন ও এ্যালার্জি রোগ বিশেষজ্ঞ, সহকারী অধ্যাপক,
চেম্বার : ডাঃ জাহেদ’স হেয়ার এ্যান্ড স্কিনিক সাবামুন টাওয়ার (ষষ্ঠতলা)
পান্থপথ ঢাকা
০১৭১৫-০৫০-৯৪৯