
ছবিঃ সংগৃহীত
বিশ্বজুড়ে অসংখ্য হ্রদ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য এবং পর্যটনের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি হ্রদ রয়েছে এমন কিছু দেশের নাম ও পরিসংখ্যান। কানাডা, রাশিয়া ও ফিনল্যান্ডের পর যে দেশগুলো এই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সুইডেন, ব্রাজিল, নরওয়ে, আর্জেন্টিনা এবং কাজাখস্তান।
যুক্তরাষ্ট্র – ১,০২,৫০০টি হ্রদ:
যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে এক লক্ষেরও বেশি হ্রদ। এর মধ্যে গ্রেট লেকস (Great Lakes) অঞ্চল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, যেখানে পাঁচটি বিশাল হ্রদ (লেক সুপিরিয়র, মিশিগান, হুরন, ইরি ও অন্টারিও) অবস্থিত।
ইয়েলোস্টোন, লেক তাহো, ও মিনেসোটা অঞ্চলের হাজারো হ্রদে কায়াকিং, হাইকিং ও ফিশিং-এর জন্য পরিবেশবান্ধব ট্যুরিজম ব্যবস্থা রয়েছে। ইউএস এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি (EPA) হ্রদ ও জলাধারের পানির মান রক্ষা ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত মনিটরিং চালায়।
চীন – ২৩,৮০০টি হ্রদ:
চীনে হ্রদের সংখ্যা প্রায় ২৪ হাজার। বিশেষ করে তিব্বত ও জিনজিয়াং অঞ্চলে বহু প্রাকৃতিক হ্রদ দেখা যায়। এসব হ্রদ কৃষি, সেচ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। চীন জলাভূমি সংরক্ষণ আইন এবং ‘ন্যাশনাল ওয়েটল্যান্ড কনজারভেশন প্ল্যান’-এর আওতায় হাজার হাজার হ্রদকে পুনর্জীবিত করছে।
কুইংহাই ও তিব্বতের হ্রদাঞ্চল আন্তর্জাতিক পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়, যেখানে পরিবেশ-সম্মত ভ্রমণের ব্যবস্থা রয়েছে।
সুইডেন – ২২,৬০০টি হ্রদ:
‘ল্যান্ড অব দ্য মিডনাইট সান’ খ্যাত সুইডেনে রয়েছে প্রায় ২৩ হাজার হ্রদ। সুইডেনের ‘ওয়াটার ফ্রেমওয়ার্ক ডিরেক্টিভ’ অনুযায়ী প্রতিটি হ্রদের জন্য আলাদা সংরক্ষণ নীতিমালা রয়েছে। এই হ্রদগুলোর পানি স্বচ্ছ এবং দূষণমুক্ত হওয়ায় এগুলো স্থানীয়দের পানির উৎস ও অবকাশযাপনের আদর্শ স্থান হিসেবে বিবেচিত।
ব্রাজিল – ২০,৯০০টি হ্রদ:
আমাজন নদীর দেশ ব্রাজিলে রয়েছে প্রায় ২১ হাজার হ্রদ। বহু হ্রদ বিশাল রেইনফরেস্টের ভিতর অবস্থিত, যা এখানকার জীববৈচিত্র্যের বড় অংশ ধারণ করে আছে। গ্রীনপিস ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের যৌথ প্রকল্পে হ্রদাঞ্চলকে রক্ষার জন্য স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে
নরওয়ে – ২০,০০০টি হ্রদ:
নরওয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম উপাদান এর অসংখ্য হ্রদ। বরফ গলে তৈরি হওয়া এই হ্রদগুলো সারা বছর জুড়েই পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এখানে রয়েছে বিশ্বের অন্যতম গভীর হ্রদ ‘Hornindalsvatnet’। আর্জেন্টিনা – ১৩,৬০০টি হ্রদ: দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটিতে রয়েছে বহু হ্রদ, বিশেষ করে আন্দিজ পর্বতমালার পাদদেশে। নাহুয়েল হুয়াপি ও লেক আর্জেন্টিনা জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, যেখানে শুধুমাত্র পরিবেশ-সম্মত কার্যক্রমই অনুমোদিত। পর্যটনে ভারসাম্য: ট্রেকিং, বোটিং, ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফি—সবকিছুই সীমিত সময় ও অনুমতির ভিত্তিতে হয়।
কাজাখস্তান – ১২,৪০০টি হ্রদ: মধ্য এশিয়ার দেশ কাজাখস্তানে রয়েছে ১২ হাজারেরও বেশি হ্রদ। এর মধ্যে বালকাশ, জাসাইঙ্গার ও আলাকল হ্রদ উল্লেখযোগ্য। এই হ্রদগুলো দেশটির কৃষি ও প্রাকৃতিক বাস্তুসংস্থানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।
কাজাখ সরকারের নতুন উদ্যোগে হ্রদের পাশে কমিউনিটি বেইজড ইকো-লজ চালু করা হয়েছে, যা স্থানীয়দের আয় বাড়াতে সহায়তা করছে।
এই দেশগুলো শুধু প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নির্ভরশীল নয়, বরং দায়িত্বশীল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষা, সামাজিক উন্নয়ন ও পর্যটন শিল্পে টেকসই অগ্রগতি সাধন করেছে। এসব দেশ হতে পারে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য এক দারুণ অনুপ্রেরণা।
পৃথী