ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বিশ্ব পরিবেশ দিবসে এগিয়ে আসছে ২১৪ জন ‘ক্লাইমেট চ্যাম্পিয়ন’  

এম এ আজিজ  কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ঝালকাঠি 

প্রকাশিত: ১৩:৫৯, ৫ জুন ২০২৫

বিশ্ব পরিবেশ দিবসে এগিয়ে আসছে ২১৪ জন ‘ক্লাইমেট চ্যাম্পিয়ন’  

ছবি- দৈনিক জনকণ্ঠ

বিশ্বজুড়ে যখন জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক সংকট হিসেবে মানবসভ্যতার ভবিষ্যৎকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে, তখন বাংলাদেশের ঝালকাঠি জেলার শিক্ষার্থীরা হাতে তুলে নিয়েছে পরিবেশ রক্ষার পতাকা। বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত “ইকো অলিম্পিয়াড ২০২৫” হয়ে উঠেছে এই সংকটময় সময়ে শিক্ষার্থীদের পরিবেশ সচেতনতা ও নেতৃত্ব বিকাশের এক অনন্য উদাহরণ।

আজ,৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস-এ 'Eco Olympiad' ফেসবুক পেইজে আনুষ্ঠানিকভাবে ইকো অলিম্পিয়াড ২০২৫ এর প্রিলিমিনারি রাউন্ডে উত্তীর্ণ ২১৪ জন শিক্ষার্থীর নাম প্রকাশ করা হয়েছে। এই নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা অংশ নেবে ইকো অলিম্পিয়াড ২০২৫-এর ফাইনাল রাউন্ডে, যেখানে তাদের পরিবেশগত জ্ঞান, নেতৃত্বের দক্ষতা এবং সমস্যা সমাধানের চিন্তাভাবনা বাস্তবভাবে মূল্যায়ন করা হবে। এছাড়া তারা অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে একটি বিশেষ আয়োজন “ইকো সামিট”, যেখানে তরুণরা মতবিনিময় করবে, সমাধান খুঁজবে এবং নিজেদের অঞ্চলের জলবায়ু সমস্যা নিয়ে সুপারিশ উপস্থাপন করবে।

“ইকো অলিম্পিয়াড ২০২৫” আয়োজন করেছে আন্তর্জাতিক তরুণ সংগঠন “ইয়ুথনেট গ্লোবাল এর ঝালকাঠি টিম”, এবং এই ব্যতিক্রমী আয়োজনের সহ-আয়োজক হিসেবে পাশে রয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর, ঝালকাঠি।

১৪ মে ২০২৫ তারিখে শুরু হওয়া এই অলিম্পিয়াডের প্রিলিমিনারি রাউন্ড সম্পন্ন হয় ২২ মে ২০২৫ তারিখে। এতে ঝালকাঠি জেলার ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ২০০০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায়, যাদের পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন, নবায়নযোগ্য শক্তি, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs), পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান যাচাই করা হয়।

অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য: ঝালকাঠি সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি হরচন্দ্র বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উদ্বোধন মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ অন্যান্য আরও সাতটি সনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

এই প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিবেশ সম্পর্কে জ্ঞানের পাশাপাশি তাদের কৌতূহল, সচেতনতা ও দায়িত্ববোধ গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। অলিম্পিয়াডের কনভেনার 'সাজিদ মাহামুদ' বলেন: “আমরা যখন শিশুদের চোখে পরিবেশ রক্ষার স্বপ্ন দেখি, তখন আশার আলো দেখি ভবিষ্যতের। তাদের আগ্রহ ও অংশগ্রহণই প্রমাণ করে- স্কুল জীবন থেকেই যদি আমরা তাদের পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ে সচেতন করে তুলতে পারি, তাহলে তারাই একদিন হয়ে উঠবে বাংলাদেশের ‘সোহানুর রহমান’ কিংবা বিশ্বের ‘গ্রেটা থুনবার্গ’। আমরা একটি প্রজন্ম তৈরি করতে চাই যারা প্রকৃতির সুরক্ষায় শুধু সচেতনই নয়, বরং একেকজন জলবায়ু আন্দোলনের অগ্রদূত।”

এই অলিম্পিয়াড শুধুমাত্র একটি প্রতিযোগিতা নয়, এটি একটি সময়োপযোগী জলবায়ু আন্দোলন, যা শিশু-কিশোরদের স্কুল জীবন থেকেই জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সচেতন করে তোলে। আয়োজনের পরবর্তী ধাপে, নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজন করা হবে ‘ক্লাইমেট লিটারেচী ওয়ার্কশপ’, যেখানে তারা জলবায়ু অভিযোজন ও স্থানীয় পরিবেশ সমস্যার সমাধানে সক্রিয় ভূমিকা পালনের দক্ষতা অর্জন করবে।এই আয়োজনের মাধ্যমে যে বার্তাটি উঠে এসেছে, তা হলো: পরিবেশ রক্ষা আজ আর বড়দের একার দায়িত্ব নয়, এতে শিশুদেরও কণ্ঠস্বর থাকা জরুরি।আর এই কণ্ঠস্বরেই আজ ধ্বনিত হচ্ছে পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি।

নোভা

×