ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

বীরেন সোমের রেখাচিত্রে বৈভবময় জীবনের প্রতিচ্ছবি

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:১৪, ১ অক্টোবর ২০২২

বীরেন সোমের রেখাচিত্রে বৈভবময় জীবনের প্রতিচ্ছবি

লালমাটিয়ার শিল্পাঙ্গন গ্যালারিতে রেখায় রূপ শীর্ষক প্রদর্শনীর ছবি দেখছেন দর্শনার্থীরা

সাদা রেখার টান দীপ্তি ছড়িয়েছে কালো জমিনের ওপর। নিপুণ সেই ড্রইংয়ের ভেতর থেকে উদ্ভাসিত হয়েছে বিষয়। কখনও আবার সাদা জমিনের ওপর বৈভব ছড়িয়েছে কালো রেখার আঁচড়। উদ্ভাসিত হয়েছে বিবিধ বিষয়। যার সঙ্গে মিশে আছে এই বাংলার জীবন, জনপদ ও প্রকৃতি। জীবনের সৌন্দর্যকে মেলে ধরা তেমন এক ক্যানভাসে চাঁদের আলোয় ভিজতে থাকে রমণী। তার মাথার ওপর বসে থাকে পাখি।

কালো কাগজ আশ্রিত আরেকটি চিত্রপটে পুরান ঢাকার সড়কে ছুটে বেড়ায় ঘোড়ার গাড়ি। নগর জীবনের উল্টোদিকে একতারাকে সঙ্গী করে গ্রামীণ পথে গান গায় বাউল। সহজিয়ার রেখার ছোঁয়ায় চিত্রিত হয়েছে মানবতার মর্মবাণীকে আলিঙ্গন করা ফকির লালন সাঁইয়ের প্রতিকৃতি। ভালবাসার গল্পময় এক ছবিতে হাতে ফুল নিয়ে প্রিয়জনের প্রতীক্ষায় থাকে নারী। কিছু ছবি আবার এই ভূখণ্ডের সংগ্রামী অধ্যায়ের বয়ান হয়ে ধরা দিয়েছে।

সেই সুবাদে উঠে এসেছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ। সাদা ও কালো কাগজের ক্যানভাসে কলমের কালিতে ছবিগুলো এঁকেছেন প্রখ্যাত চিত্রকর বীরেন সোম। বৈভবময় জীবনের প্রতিচ্ছবি মেলে ধরা সেসব ছবি নিয়ে লালমাটিয়ার শিল্পাঙ্গন গ্যালারিতে চলছে প্রদর্শনী। ড্রইংনির্ভর এই শিল্পোয়োজনের শিরোনাম রেখায় রূপ।
শুক্রবার সন্ধ্যায় এই প্রদর্শনীর সূচনা হয়। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন লেখক, গবেষক ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আইএফআইসি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক গীতাঙ্ক দেবদীপ দত্ত এবং চিত্রশিল্পী ও সমালোচক জাভেদ জলিল।
অনুভূতি প্রকাশে বীরেন সোম বলেন, রেখার মাধ্যমে জীবনের রূপকে মেলে ধরেছি। প্রকৃতির কথা বলেছি। নগর থেকে গ্রামের ছবি এঁকেছি। এই ভূখ-ের আন্দোলন-সংগ্রাম থেকে নিসর্গের সৌন্দর্যকে মেলে ধরেছি। চিত্রপট বিন্যাসে ড্রইংয়ের আশ্রয় নিয়েছি।

এখানে রেখাচিত্রই আমার শিল্প সৃষ্টির মূল শক্তি। কোনমতে অবয়ব বা বিষয়কে দাঁড় করিয়ে তার ওপর ইচ্ছেমতো রং ঢেলে চিত্রপট সাজাইনি। সেভাবে ছবি আঁকতে ভাল লাগে না। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন থেকে পটুয়া কামরুল হাসান কিংবা এস এম সুলতানের মতো শিল্পীরা মূলত ড্রইংনির্ভর কাজ করেছেন। তাদের শক্তিশালী সেই রেখার টান আমাকে পথ দেখিয়েছে। সে কারণেই শিল্প-জীবনের শুরু থেকেই রেখানির্ভর কাজ করেছি। পেইন্টিংয়ের চেয়ে রেখাচিত্রই আমাকে বেশি আকর্ষণ করে। কারণ এই মাধ্যমে কাজ করতে হলে শিল্পীকে তার দক্ষতার পরিচয় দিতে হয়।
বীরেন সোমের কাজের মূল্যায়নে মফিদুল হক বলেন, আমি এই শিল্পীর যাত্রাপথের একজন সঙ্গী। তার কাজের মাঝে মিশে থাকে দেশ, সমাজ ও জীবনের সম্পৃক্ততা। এবার তার সেই শিল্পিত পথে যেন নতুন মাত্রা যুক্ত হলো। কারণ ড্রইংয়ের মাধ্যমে শিল্পকে উপস্থাপন করতে হলে একজন শিল্পীকে সাধনার পথ পাড়ি দিতে হয়। অর্জন করতে হয় বিশেষ দক্ষতা। রেখাচিত্রনির্ভর এই প্রদর্শনীটি শিল্পীর সেই সাধনা ও দক্ষতাকে মেলে ধরেছে। শিল্পরসিকদের ভিন্নতার স্বাদ দিয়েছে।
রেখাচিত্রের সঙ্গে কিছু প্রিন্টের যুক্ত হয়েছে প্রদর্শনীতে। সব মিলিয়ে চিত্রকর্মের সংখ্যা ৪৮টি। আগামী ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে এই শিল্পায়োজন। প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

×