ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করলেন সোনিয়া-জান্নাতুল

নিজস্ব সংবাদদাতা, সাভার, ঢাকা

প্রকাশিত: ১৮:১৬, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করলেন সোনিয়া-জান্নাতুল

পরীক্ষার হলে সোনিয়া-জান্নাতুল। ছবি: জনকণ্ঠ

সোনিয়া পা দিয়ে লিখে ও কবজিবিহীন দুই হাত দিয়ে লিখে জান্নাতুল ফেরদৌস নামে সাভারের দুই শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় এ বছর কৃতকার্য হয়েছেন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে সোনিয়া পেয়েছেন জিপিএ ৪.৩৩ ও জান্নাতুল পেয়েছেন জিপিএ ৫।

জন্ম থেকেই সোনিয়ার দুটি হাত নেই, একটি পা ছোট অন্যটি বড়। সোনিয়া তার পরিবারের সঙ্গে পৌর এলাকার ব্যাংক কলোনি মহল্লায় ভাড়া থাকেন। তার মা আকলিমা আক্তার অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। বাবা শাহাদাত হোসেন বেকার। দরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা সোনিয়া পরিবারের উৎসাহে পা দিয়ে তার পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন। 

২০২০ সালে সাভার অধর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৩.২৮ পেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেন। এ বছর সাভার কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ ৪.৩৩ পেয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়েছেন।

সোনিয়া বলেন, ছোটবেলা থেকেই পা দিয়েই অনেক কিছু করার চেষ্টা করেছি। আমার মা-বাবা লেখাপড়া, খাওয়াসহ সব সময় আমার পাশে ছিলেন। দুটি হাত না থাকায় চলাফেরা করতে অনেক কষ্ট হয়। তবুও আজ পা দিয়ে লিখে যখন পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হতে পেয়েছি সব কষ্ট ভুলে গেছি।

সোনিয়ার মা আকলিমা আক্তার বলেন, ওর জন্মের পর মানুষের কটু কথায় অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম। পরে ভেবেছি, ওকে কারও বোঝা হতে দিব না। ছয় বছর বয়স থেকেই ওর পায়ে পেন্সিল দিয়ে পা দিয়ে লেখানোর চেষ্টা শুরু করি। এরপর পার্শ্ববর্তী মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার একটি প্রতিবন্ধী স্কুলে ভর্তি করাই। পরবর্তীতে একটি মাদ্রাসা থেকে আমার মেয়ে পিইসি পরীক্ষা দেয়। এরপর আস্তে আস্তে আজকের এ জায়গায়। 

এখন যদি প্রধানমন্ত্রী আমার মেয়ের মেধার মূল্যায়ন করে ওর জন্য দুটো কৃত্রিম হাতের ব্যবস্থা করতেন তাহলে আমার মেয়েটা আরো ভালোভাবে তার পরবর্তী শিক্ষা জীবনটুকু অতিবাহিত করে দেশের একজন সফল নাগরিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারতো। 

অন্যদিকে ২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারি আশুলিয়ার নবীনগর এলাকায় ভাড়া বাসার ছাদে বিদ্যুৎ সঞ্চালক তারে জড়িয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসের দুই হাত পুড়ে যায়। পরে তার দুটি হাতের কবজি কেটে ফেলা হয়। এরপর কবজিবিহীন হাত নিয়ে অদম্য ইচ্ছা শক্তি সম্পন্ন জান্নাতুল এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৭২ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। 

এবার এইচএসসি পরীক্ষায় আশুলিয়ার বেপজা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। জান্নাতুলের বাবা জাহাঙ্গীর আলম তার মাকে তালাক দিয়ে অন্যত্র চলে গেলে অভাব-অনটন বাসা বাঁধে তাদের ঘরে। প্রায় বন্ধ হয়ে যায় লেখাপড়া। পরে ধামসোনা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জান্নাতুলের পড়াশোনার দায়িত্ব নেন। জান্নাতুলের স্বপ্ন ডাক্তার হয়ে সবার সেবা করা।

 

এসআর

×