ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২

জুলাই-আগস্টকে দু’মাসে বেঁধে ফেললে কোনোদিনও কিছু করতে পারব না:রাবি উপাচার্য

রাবি সংবাদদাতা :

প্রকাশিত: ২০:৪৬, ১৫ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২০:৪৬, ১৫ জুলাই ২০২৫

জুলাই-আগস্টকে দু’মাসে বেঁধে ফেললে কোনোদিনও কিছু করতে পারব না:রাবি উপাচার্য

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেছেন, ‘জুলাই-আগস্টকে শুধুমাত্র দু'মাসে বেঁধে ফেললে হবে না। তাহলে আমরা কোনোদিনও কিছু করতে পারব না। কারণ এই দু'মাসের তাৎপর্য অনেক বেশি। যখন আন্দোলন চলমান, তখন কিছু ছাত্র আমার কাছে এসেছিল। আমি তাদের বলেছিলাম, তোমাদের কোটা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। তোমরা বাচ্চা ছেলে, তাই ভাবছো কোটা নিয়ে আন্দোলন করছো। তোমরা কি জানো কিসের জন্য আন্দোলন করছ? তোমরা ইনসাফের জন্য আন্দোলন করছো। কোটা একটা ছোট্ট শব্দ। রাষ্ট্রের ইনসাফ, সুবিচারের কাছে কোটা কিছুই না।’

‘চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালা’ উপলক্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে আয়োজিত ‘জুলাই ২০২৪: ছাত্রজনতার ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের গাথা’ শীর্ষক সেমিনারে উপাচার্য এসব কথা বলেন। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের আয়োজনে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, ‘যত বড় বিপ্লব বাংলাদেশে হয়েছে, মনে হয় না পৃথিবীর আর কোনো দেশে এত বড় বিপ্লব হয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এই অল্পসময়ের বিপ্লবে একজন শাসকের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনার নজির খুবই কম। বাংলাদেশের ইতিহাসে যত আন্দোলন সফল হয়েছে, তার প্রতিটির পেছনেই ছাত্রসমাজের অগ্রণী ভূমিকা ছিল। যখনই ছাত্ররা ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে এসেছে, তখনই বিজয় সম্ভব হয়েছে।’

সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. ফরিদ উদ্দীন খানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন উপস্থিত ছিলেন। আলোচক হিসেবে ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম রফিকুল ইসলাম, আইন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল হান্নান এবং ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক মো. আমজাদ হোসেন। সভাটি সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার।

আলোচনায় অধ্যাপক এম. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে যত আন্দোলন সফল হয়েছে, তার প্রতিটির পেছনেই ছাত্রসমাজের অগ্রণী ভূমিকা ছিল। যখনই ছাত্ররা ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে এসেছে, তখনই বিজয় সম্ভব হয়েছে। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান সেই ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি। এটি আবারও প্রমাণ করে, আমাদের দেশে ছাত্রশক্তি কোনো আন্দোলনে সম্পৃক্ত হলে তা সফল হতে বাধ্য।’

আরেক আলোচক অধ্যাপক আবদুল হান্নান বলেন, ‘চব্বিশের জুলাই আন্দোলন অল্প সময়ের আন্দোলন হলেও দীর্ঘ দিনের প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, অসন্তোষ দূর করতে সফল হয়েছে। এই আন্দোলন ছিল একটি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। ঢাকা নেতৃত্ব দিলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই আন্দোলন করেছিল। তারচেয়ে বড় কথা, শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ই নয় বরং সকল মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল সকল ক্ষেত্রের অনিয়ম দূর করা।’

অধ্যাপক মো. আমজাদ হোসেন বলেন, ‘যত বড় বিপ্লব বাংলাদেশে হয়েছে, মনে হয় না পৃথিবীর আর কোনো দেশে এত বড় বিপ্লব হয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এই অল্পসময়ের বিপ্লবে একজন শাসকের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনার নজির খুবই কম। এই বিপ্লবের তাৎপর্য খুবই গভীর ছিল।’

সেমিনারে জুলাই আন্দোলনের স্মৃতিচারণ করেন আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সানজিদা ঢালি। স্মৃতিচারণ শেষে তিনি বলেন, ‘আমি একাত্তরের বিজয় দেখিনি, তবে জুলাই-আগস্টের বিজয় দেখেছি। দেখেছি মানুষ কত খুশি হতে পারে। একইসঙ্গে চিন্তিত ছিলাম, যারা মারা গিয়েছে, যারা রক্তাক্ত হয়েছে, তারা কিভাবে আছে? আতঙ্কিত, ভীত। এই মানুষগুলোর রক্তের দাম আমরা কি পরিশোধ করতে পারব? তাদের স্বপ্ন কী পূরণ করতে পারব? তাদের স্বপ্ন পূরণ হোক এই প্রত্যাশা রেখে যেতে চাই।’

সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যদ্বয় অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন খান ও অধ্যাপক মো. ফরিদ উদ্দীন খান। আলোচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষক-কর্মকর্তাসহ শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

আফরোজা

আরো পড়ুন  

×