ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হবু ডাক্তারদের পিঠা উৎসব 

সানজিদা জান্নাত পিংকি

প্রকাশিত: ২১:২৫, ২১ জানুয়ারি ২০২৩

হবু ডাক্তারদের পিঠা উৎসব 

পিঠা বাঙালি সমাজে এক অনন্য উপাদানের নাম

পিঠা বাঙালি সমাজে এক অনন্য উপাদানের নাম। এর বাহারি স্বাদ, নকশা আর প্রকার যেন মুখরোচক করে তুলে দেশীয় লোকজ সংস্কৃতিকে। পিঠাকে কেন্দ্র করে এদেশে গড়ে উঠেছে নানা ধরনের ঐতিহ্য। এক সময় সকল আতিথেয়তা, আত্মীয়তা, সামাজিক-সম্প্রীতির বন্ধনে পিঠাই ছিল প্রধান উপকরণ।

হেমন্তে নতুন ধান ঘরে তুলে, শীত থেকে বসন্ত অব্দি বাংলাজুড়ে চলত পিঠা খাওয়ার ধুম। মূলত, শীত এলেই ঘরে ঘরে বয়ে যেত পিঠা উৎসব। স্বাদের সঙ্গে সুন্দর সংস্কৃতির যে আমেজ দেখা যেত তাতেই প্রাণবন্ত হয়ে উঠত গোটা বাংলা। এই পিঠা তৈরিতে নারী সমাজ নিপুণ কৌশলে যে শৈল্পিক দক্ষতা প্রয়োগ করতেন তা সকল নৈপুণ্যকে নিমিষেই হার মানাতো।

প্রাচীন কাল থেকেই বয়ে যাওয়া এমন মধুর সংস্কৃতি বাঙালি সমাজে এখনো টিকে আছে। মূলত, গ্রামগঞ্জেই এর প্রচলন ছিল ব্যাপক। শহরে পিঠার খুব একটা দেখা মিলত না। তবে, বর্তমানে গ্রাম ছেড়ে শহরেও এর দারুণ বিস্তৃত হয়েছে। প্রতিটি অলিগলি, মোড়ে খোলা রাস্তায়, টং দোকানে কিংবা বিশেষায়িত কিছু দোকানেও পিঠা বিক্রির ধুম দেখা যায়। আবার কোথাও কোথাও বসে পিঠা মেলা কিংবা উৎসবের? সব কিছুর ঊর্ধ্বে গিয়েও বলতে হয় পুরনো দিনের সেই রীতিনীতি আর আমেজ এখন আর দেখা মেলা না।
কিন্তু সেখানে একটু ব্যতিক্রমই বলা যায় সাভারের গণবিশ্ববিদ্যালয়কে। হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের এই সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্মে ছড়িয়ে দিতে প্রতিষ্ঠানটিতে প্রতিবারই সম্পূর্ণ দেশীয় সংস্কৃতির বহি রূপ হিসেবে উৎসব পালনের চেষ্টা করা হয়। এখানে যেমন বাঙালিয়ানা থাকে তেমন আদিবাসীদেরও অভিরূপ রয়েছে। এখানে পুরনো দিনের বাঙালি ঐতিহ্যগুলোকে ফুটিয়ে তোলার সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়। থাকে, বাঙালি সংস্কৃতির অপরূপ নির্দশনগুলোও।
৩২ একরের নান্দদিক ক্যাম্পাসটিতে এবারও টানা চতুর্থবারের মতো আয়োজিত হলো পিঠাউৎসব ১৪২৯। আর তাতেই দেখা গেল পুরনোর দিনের সোনালি অধ্যায়কে। সকাল হলেই যেখানে ব্যাগ-বই-খাতার ব্যস্ততা ছিল নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা সেখানে আজ দেখা গেল রঙিন শাড়ি, পাঞ্জাবি পরা উৎসবমুখর শিক্ষার্থীদের। নানা সাজ, রঙের স্টল, আলপনার আঁচড় আর বাহারি সাজসজ্জা। সেখানে আজ নেই কোনো পড়াশোনার উদ্বেগ।

শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই যেন এক বাঁধনে, একই উল্লাসে। উৎসবে-আনন্দে ক্যাম্পাসে যেন দেখা গেল প্রজাতির ডানা মেলা। দোকানে দোকানে নানা বিভাগের নানা নামের স্টল, বাহারি রঙের, ঢঙের পিঠা আর তার মোহনীয় স্বাদ যেন আরেকবার নিয়ে গেল প্রাচীনকালে। সঙ্গে বিক্রেতা শিক্ষার্থীদের আতিথিয়েতা যেন আরেকবার মধুর করে তুলল বাঙালি সংস্কৃতিকে। তাতেই মনে হলো হাজার বছরের এই মধুরতা আজ অব্দিও লেগে আছে প্রতিটি মানুষের মুখে।

এমন অসাধারণ দিনে ফিরে যাওয়ার আয়োজক যদিও বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু, আয়োজনের পুরোটাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে। শিল্পীমনা শিক্ষার্থীদের শৈল্পিক সৃষ্টিও তাই ছিল দেখার মতো। গত কয়েকদিনের পরিশ্রম, কষ্টের সৌন্দর্য তারা ফুটিয়েছেন ভিন্ন এক ক্যাম্পাসকে উপহারের মাধ্যমে।
তাইতো শীতের সকালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা মেলে সমীকরণের পিঠাঘর, কুটুমবাড়ি, টুনটুনির পিঠাঘর, পিঠাকুঞ্জ, পিঠা বিলাস, আপ্যায়ন, ক্ষীর ব্যাঞ্জন, হাও মাও পিঠা খাও, পৌষের পিঠাঘর ইত্যাদি হরেক নামে, সাজে সজ্জিত দৃষ্টিনন্দন স্টলগুলো। বাদামতলা, ট্রান্সপোর্ট চত্বর, বকুলতলা, মূল ফটক, প্রশাসনিক ভবনের সামনের অংশ সবটাতে দৃষ্টিনন্দন আলপনার সঙ্গে দৃষ্টি কাড়ছে পোস্টার, প্ল্যাকার্ড আর ফেস্টুন।

×