ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জিপিএ-৫ পেয়েও কলেজে ভর্তি অনিশ্চিত তিন মেধাবী শিক্ষার্থীর

রাজু মোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ১৮:৫৩, ৩ ডিসেম্বর ২০২২

জিপিএ-৫ পেয়েও কলেজে ভর্তি অনিশ্চিত তিন মেধাবী শিক্ষার্থীর

মেধাবী তিন শিক্ষার্থী। ছবি: জনকণ্ঠ।

কুড়িগ্রামরে ফুলবাড়ীতে চলতি বছর জিপিএ-৫ পাওয়া অতি দরিদ্র তিন শিক্ষার্থী টাকার অভাবে কলেজে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাদের একজন হোটেল শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালিয়ে নিজেও পড়াশুনা করে, আরেকজন টিউশনি করে পড়াশুনা ও দরিদ্র বাবার সংসারের ব্যয়ভার বহন করেছে এবং অপরজন দরিদ্র কৃষকের কন্যা। তারা তিনজন হলেন- শাকিল মিয়া, শিউলী রানী রায় ও তাকিয়া আক্তার মনি।  

শাকিল মিয়ার বাড়ি উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কুরুষাফেরুষা গ্রামে। সে ওই গ্রামের দিনমজুর ফারুক মিয়ার ছেলে। ছোটবেলা থেকে সংসারের অভাবের কারণেই ষষ্ঠ শ্রেণিতেই পড়াশুনার পাশাপাশি সে বালারহাট বাজারে হোটেলের শ্রমিকের কাজ করেন। বিভিন্ন হোটেলে শ্রমিকের কাজের পাশাপাশি সে তার পড়াশুনা চালিয়ে যায় অনেক কষ্টে। দিনে হোটেলে কাজ করতো এবং রাতে বাড়িতে পড়াশুনা চালিয়ে যেতো শাকিল। সর্বশেষ শাকিল ফুলবাড়ী সদরে একটি হোটেলে কাজ করে বালারহাট আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগে পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে। 

সংসারের অভাবের কারণে কলেজে ভর্তি হবার টাকাও নেই তার। টাকার অভাবে ভালো কলেজে ভর্তি হতে পারবে কি না তা নিয়ে দুচিন্তায় এই শিক্ষার্থী। হোটেল শ্রমিক শাকিলের বাবা-মা কিভাবে সন্তানকে পড়াবেন তা জানেন না এখনও। তার ছেলেকে নিয়ে চরম দুচিন্তায় পড়েছেন তারা। শাকিলের স্বপ্ন শিক্ষা ক্যাডারে চাকরি করার। 

শিউলী রানী রায় দিনমজুর পরিবারের সন্তান। এবার এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে।  টাকার অভাবে কলেজে ভর্তি হতে পারবে কিনা এখনও জানে না। ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের পূর্বফুলমতি গ্রামে দিনমজুর গনেশ চন্দ্র রায়ের মেয়ে। গনেশ চন্দ্র রায়ের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। শিউলী সবার ছোট। নিজে টিউশনি করে পড়াশুনার খরচ চালাতো। শিক্ষকরাও সহায়তা করেছিল তাকে। এবারে বালারহাট আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। উচ্চ শিক্ষিত হয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন শিউলীর। 

শিউলী রানী জানান, টিউশনির টাকা দিয়ে পড়ালেখার খরচ যোগার করেছি। শিক্ষক আর আত্মীয় স্বজনদের সহযোগিতায় এসেছি এতদূর। সে জানে না কি হবে তার পড়াশুনা। 

বাবা দিনমজুর গনেশ চন্দ্র রায় জানান, অভাবের সংসারে সাতজন সদস্য। যে দিন কাজ জোটে সেদিন ভালো মন্দে মুখে ভাত উঠে। আর কাজ না জুটলে তিনবেলা খাবার থাকেনা। ধারদেনা করে কোনো রকমে সংসার চলে। মেয়ে শিউলী রানীর পড়াশুনার খরচ কিভাবে জোগার করবে জানে না। এ কারণে মেধাবী এই সন্তানের জন্য পরিবার দুশ্চিতায় পড়েছে।  

তাকিয়া আক্তার মনি বালারহাট আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ গোল্ডেন-৫ পেয়েছে তাকিয়া আক্তার মনি। মনি এর আগে পিএসসি ও জেএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে দরিদ্র কৃষক বাবাসহ গ্রামে সুনাম অর্জন করেছে। মনি উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের পূর্বফুলমতি গ্রামের দরিদ্র কৃষক আনিচুর রহমান ভোলার মেয়ে। চাষাবাদ করে ছেলে ও এক মেয়ের পড়ালেখার খরচ জোগাতেন। এখন মেয়ের পড়ালেখার খরচ কিভাবে চালাবেন জানেন না। 

তাকিয়া আক্তার মনি জানান, আমার বাবা একজন দরিদ্র কৃষক। আমাদের আবাদী জমি না থাকায় বাবা অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করেন। কোনো রকমেই চলছে আমাদের সংসার। গরীব বাবা-মা কিভাবে আমাকে উচ্চ শিক্ষার জন্য কলেজে ভর্তি করাবে ভেবেই পাচ্ছিনা। তাকিয়া আক্তার মনির স্বপ্ন সে ডাক্তার হয়ে সমাজের গরীব দু:খীদের পাশে দাঁড়াবে। 

মনির বাবা আনিচুর রহমান ভোলা জানান, মেয়েটা আামার ডাক্তার হতে চায়। কোথায় ভর্তি হবে, টাকা কোথায় পাব জানিনা। শুধু বাড়ির ভিটা ছাড়া আর কিছুই নাই আামার। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে কোনো রকমে সংসার চালাচ্ছি। ছোট ছেলেটি দশম শ্রেণিতে পড়ছে। সামনের দিনে ছেলে ও মেয়ের লেখা পড়ার খচর কিভাবে মিটাবে তা ভেবেই পায় না তার পরিবার। সবাই যদি একটু এগিয়ে আসে তাহলে এই মেধাবীরা কলেজে পড়াশুনা করতে পারবে। 

এমএইচ

সম্পর্কিত বিষয়:

×