
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং তৎসংলগ্ন প্রশ্নগুলোর উত্তর লিখ।
জলিল মিয়া একজন বর্গাচাষী, সারাদিন মাঠে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল ফলায়। কিন্তু ফসল ঘরে তোলার সময় জমির মালিক ফসলের তিন ভাগের দুই ভাগ নিয়ে যায়। বাকি এক ভাগ দিয়ে জলিল মিয়ার দুই মাসও চলে না।
ক. বাষ্প শকট বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
খ. ‘শুধিতে হইবে ঋণ’ -কথাটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে ২
গ. উদ্দীপকে কুলি মজুর কবিতার কোন দিকটি প্রকাশিত হয়েছে তা ব্যাখ্যা কর
ঘ. ‘উদ্দীপকে উল্লেখিত জমির মালিক শোষক শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করছে-কুুলি মজুর কবিতার আলোকে মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।
উত্তরঃ ক. বাষ্প দ্বারা চালিত যান হল বাষ্প শকট। এখানে রেলগাড়িকে বোঝানো হয়েছে। কেননা রেলগাড়ি বাষ্প ইঞ্জিন দিয়ে চলতো।
খ. ‘শূধিতে হইবে ঋণ’-কথাটি দ্বারা শ্রমজীবীদের শুভদিন আগমনের বিষয়টিকে বোঝানো হয়েছে।
যুগে যুগে শ্রমিকদের শ্রমে গড়ে উঠেছে নানা সভ্যতা। তারাই সভ্যতার প্রকৃত রূপকার। কিন্তু তাদের এ্ই শ্রম ও ত্যাগ কেউ কখনো মূল্যায়ন করেনি বরং উপেক্ষিত হয়েছে। ‘কুলি মুজর’ কবিতায় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এইসব শ্রমজীবী মানুষের জয়গান গেয়েছে। কবির মতে ধনিক শ্রেনির জমে থাকা ঋণ শোধ দেবার সময় এসেছে। শ্রমজীবীরা প্রতিবাদ করতে শিখেছে, সুতরাং তাদের প্রাপ্য মর্যাদা ফিরিয়ে দেবার সময় এসেছে। তাই কবি উক্ত কথাটি উল্লেখ করেছেন।
বিঃ দ্রঃ
[গ এবং ঘ প্রশ্নের উত্তর শিক্ষার্থীরা উদ্দীপক ও বইয়ের সাথে মিলিয়ে নিজের মত করে উপস্থাপন করবে যেখানে তার সৃজনশীলতার পরিচয় মিলবে। এখানে একটি নমুনা উত্তর দেয়া হল]
গ. উদ্দীপকে ‘কুলি মজুর’ কবিতায় ফুটে ওঠা শ্রমজীবি মানুষের বঞ্চনার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
সভ্যতার বিনির্মানে শ্রমিকদের অবদান সবচেয়ে বেশি। কিন্তু তারাই প্রতিনিয়ত ধনিক শ্রেনির নির্যাতনের স্বীকার হয়। কবি নজরুল ইসলাম তার ‘কুলি মজুর’ কবিতায় ধনী শ্রেণীর মানুষের মুখোশ উন্মোচন করেছেন। শ্রমজীবী মানুষের শ্রমের বিনিময়ে আমরা যাবতীয় আরাম আয়েশ ভোগ করছি, অথচ তাদের অবদানের কথা অস্বীকার করছি।
উদ্দীপকে জলিল মিয়া ও জমির মালিক শ্রমজীবী ও বণিক শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করছে। প্রচ- পরিশ্রম করে জলিল মিয়া ফসল উৎপাদন করলে মালিক বেশিরভাগ অংশ নিয়ে যায় । পরিশ্রম করেও জলিল ঠিকভাবে ফসল পায় না। জমির মালিক নির্বিকার প্রাপ্য ফসল থেকে জলিলকে বঞ্চিত করে। জলিল এর শ্রমে উৎপন্ন ফসল মালিক ভোগ করে।
‘কুলি মজুর’ কবিতায় কবি দেখিয়েছেন যে মজুরের শ্রমে বাষ্প ইঞ্জিন চলে সে মজুরকে বাবু ঠেলে ফেলে দিয়েছেন রেলের তলে। সভ্যতার এই বিশাল বিশাল অট্রালিকা তৈরি হয়েছে যাদের ঘামে তারা এই অট্রালিকায় থাকার সুযোগ পায়না, শিল্প কারখানা চলে শ্রমিকদের শ্রমে। কিন্তু সেই শিল্পকারখানায় উৎপাদিত পণ্য শ্রমিকরা ব্যবহার করতে পারে না। উদ্দীপকে কুলি মজুর কবিতার বঞ্চনার এই দিকটি প্রকাশ পেয়েছে।
ঘ.
উদ্দীপকে উল্লেখিত জমির মালিক ‘কুলি মজুর’ কবিতার শোষক শ্রেনির প্রতিনিধিত্ব করছে, মন্তব্যটি যথার্থ।
শ্রমজীবী মানুষই সভ্যতার মুল চালিকা শক্তি ধনীদের আরাম আয়েশের জন্য এসব শ্রমিক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিশ্রম করে। তবু ধনিক শ্রেণির শোষনের কারণে প্রায়শ তারা ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়।
উদ্দীপকের জমির মালিক একজন নির্দয় শোষক। জলিল মিয়া প্রচ- পরিশ্রম করে ফসল উৎপাদন করলে মালিক বেশিরভাগ ফসল নিয়ে নেয়। জলিলকে বেশিরভাগ সময় না খেয়ে থাকতে হবে এই বোধটুকু তার নেই। জলিল এক বেলা আধবেলা খেয়ে দুঃখ কষ্টে থাকুক এতে তার কোন মাথা ব্যথা নেই । তার বেশিরভাগ অংশ সে কড়ায় গন্ডায় বুঝে নিবে। জলিলের শ্রমে ও ঘামের কারণে সে বেশি ফসল পেলেও জলিলের প্রতি থাকে নির্দয় । ‘কুলি মজুর’ কবিতায় কবি কাজী নজরুল ইসলাম শোষক শ্রেণির মানুষের স্বরূপ তুলে ধরেছেন, রেল ল্ইান বা রেলগাড়ি তৈরিতে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে তারা রেলে চড়তে পারে না, রেলে চড়ে বাবু সাহেবরা। বিশাল বিশাল অট্টালিকা তৈরিতে যে শ্রমিকেরা ঘাম ঝরিয়েছেন সেখানে বাস করে ধনীরা কিন্তু তারা একবারের জন্য ও সেই শ্রমিকদের কথা ভাবে না। কলকারখানার পণ্য তৈরিতে শ্রম দেয় শ্রমিক কিন্তু লাভের টাকা ভোগ করে মালিক। মালিকরা শ্রমিককে যা দেয় তা দ্বারা ওরা ভালভাবে খেয়ে পরে বাঁচতে পারে না, কবি আরো বলেছেন ধনীদের সেবায় নিয়োজিত মজুর, মুটে, কুলি এরাই মানুষ এরাই দেবতা, এদের ঋণ শোধ দেবার সময় এসেছে।
সুতরাং উপরের আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি উদ্দীপকের জমির মালিক ‘কুলি মজুর’ কবিতার শোষক শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করছে।