
জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির জোরালো দাবি
জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির জোরালো দাবি জানিয়েছেন নাগরিক সমাজ। তারা বলেছেন, জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার পদক্ষেপ বাস্তবায়নে যে বাজেট বরাদ্দের প্রয়োজন, প্রস্তাবিত বাজেটে তার কোনো প্রতিফলনই নেই। বাজেট তো বাড়েইনি, উল্টো হ্রাস পেয়েছে। এই জলবায়ু বরাদ্দ সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য, অপর্যাপ্ত এবং টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করবে।
এ সময় তারা বলেন, জাতীয় বাজেটে জলবায়ু অর্থায়নের জন্য জিডিপির ন্যূনতম ৩ শতাংশ বরাদ্দ পুনর্বিবেচনা করা উচিত। সেই সঙ্গে পরোক্ষ করের নামে সাধারণ জনগণের ওপর করের বোঝা না চাপিয়ে করপোরেট কর বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে।
বুধবার ঢাকায় ইকনোমিক রিপোর্টার্স ফোরামে ইক্যুইটিবিডি, বিডিসিএসও-প্রসেস, কোস্ট ফাউন্ডেশন, ইয়ুথ অ্যাকশন নেটওয়ার্ক, ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশ, সুন্দরবন সুরক্ষা আন্দোলন, এসডিআই, উদয়ন এবং বাংলাদেশ ক্লাইমেট জার্নালিস্ট ফোরাম আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট-২০২৫-২৬, জলবায়ু বরাদ্দ এবং নাগরিক সমাজের প্রেক্ষিত’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রস্তাবিত জতীয় বাজেটে জলবায়ু সংশ্লিষ্ট ২৫টি মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৪১ লাখ ২ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১০.০৭ এবং জিডিপির ০.৬৭ শতাংশ, যা চলতি অর্থবছরে ছিল জিডিপির ০.৭৫ শতাংশ ছিল।
কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী এই সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন, ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী শরীফ জামিল, বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্টস ফোরাম (বিসিজেএফ) এর সভাপতি কাওসার রহমান, সুন্দরবন সুরক্ষা কমিটির সমন্বয়কারী নিখিল চন্দ্র ভদ্র, বিসিজেএফ সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন, ইক্যুইটিবিডি থেকে ওমর ফারুক ভূঁইয়া এবং আহসানুল করিম বাবর। বিডিসিএসও প্রসেসের সমন্বয়কারী জনাব মোস্তফা কামাল আকন্দ, ইয়ুথ অ্যাকশন ফর ডেভেলপমেন্টের সভাপতি মোন্তাহের আরাফাত এবং অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন। কোস্ট ফাউন্ডেশনের জলবায়ু পরিবর্তন বিভাগের প্রধান জনাব এম.এ. হাসান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
এম রেজাউল করিম চৌধুরী প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা ও তীব্রতা উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকার ওপর সরাসরি প্রভাবের বিষয়ে উল্লেখ করে জলবায়ু বাজেট বরাদ্দ পুনর্বিবেচনা করার দাবি করেন, তিনি বলেন, উপকূলের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়েনি, উপকূলের মানুষের সুরক্ষায় পাথরের বাঁধ নির্মাণ করতে হবে, সুপেয় পানির সংকট দূরীকরণে অগ্রাধিকার বরাদ্দ দিতে হবে। তিনি বলেন, বাজেট হতে হবে জনমুখী এবং যুগ-উপযোগী।
শরীফ জামিল জলবায়ু এবং মাটি ব্যবস্থাপনা, বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, নেপাল এবং পাকিস্তানের সঙ্গে আন্তঃসীমান্ত নদী শাসন এবং মেগা প্রকল্পগুলোর পরিবেশগত পুনর্মূল্যায়ন সম্পর্কে আরও গভীর মনযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি ১৯৯৭ সালের জাতিসংঘের পানিপথ কনভেনশন অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন জানান, যা পূর্বে উপেক্ষিত ছিল। কাওসার রহমান বলেন, বাজেট হয়েছে মূলত আইএমএফ-চালিত মডেল অনুসরণ করে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং স্বনির্ভরতাকে উপেক্ষা করে। তিনি ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ভ্যাট বৃদ্ধির তীব্র সমালোচনা করেন, যা মধ্যম ও নি¤œ আয়ের মানুষকে তীব্রভাবে প্রভাবিত করবে এবং অতিরিক্ত সরকারি ঋণের কারণে ব্যাংকিং খাত দুর্বল হতে পারে বলেও তিনি সতর্ক করেন। আহসানুল করিম বাবর, অর্থ পাচারের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ২৮০,০০০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ পাচার করা হয়েছে।
তিনি অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইনের পূর্ণ বাস্তবায়ন, ৭টি বাধ্যতামূলক সংস্থার মধ্যে সমন্বয় এবং সম্পদ পুনরুদ্ধারের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আহ্বান জানান। এম. এ. হাসান তার মূল বক্তব্য উপস্থাপনায় বলেন, আর্থ-সামাজিক বৈষম্য টেকসই অর্থনীতির প্রতিফলন হতে পারে না। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে জলবায়ু-সম্পর্কিত মন্ত্রণালয়গুলোর বরাদ্দ জিডিপির ০.৬৭ শতাংশ। দীর্ঘমেয়াদি জলবায়ু পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বার্ষিক ১৯ বিলিয়ন ডলারের প্রয়োজনীয়তার বিপরীতে এই বরাদ্দ অগ্রহণযোগ্য এবং অপর্যাপ্ত। তিনি জাতীয় বাজেটে জলবায়ু অর্থায়নের জন্য জিডিপির ন্যূনতম ৩ শতাংশ বরাদ্দ পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান।