ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

৩ লাখ ইএফডি ডিভাইস স্থাপনের লক্ষ্য এনবিআরের

বাড়তি ২০ হাজার কোটি টাকা ভ্যাট আসবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২১:৩২, ৬ ডিসেম্বর ২০২৩

বাড়তি ২০ হাজার কোটি টাকা ভ্যাট আসবে

সারাদেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ১৮ হাজার ৫টি ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস বা (ইএফডি)

সারাদেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ১৮ হাজার ৫টি ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস বা (ইএফডি) যন্ত্র বসানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। তিনি বলেন, আগামী ৫ বছরে ৩ লাখ ডিভাইস স্থাপন করার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে, যা করতে পারলে অতিরিক্ত ২০ হাজার কোটি টাকা ভ্যাট আদায় হবে। বুধবার রাজধানীর আগারগাওয়ে এনবিআরের সম্মেলনকে কেন্দ্রে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য তুলে ধরেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ২০২০ সালের ২৫ আগস্ট ইএফডি বসানোর কাজ শুরু হয়। সব মিলিয়ে এখনো পর্যন্ত ১৮ হাজার ৫০৫টি প্রতিষ্ঠানে ডিভাইস বাসানো সম্ভব হয়েছে, যার মধ্যে ১৮ হাজার ৫টি ইএফডি ও ৫০০ এসডিসি। তিন লাখ মেশিন স্থাপনের লক্ষ্য রয়েছে। আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপের ভিত্তিতে ইএফডি ও এসডিসি মেশিন স্থাপনের জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োজিত করেছে। লক্ষ্য চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ৩০ হাজার এবং প্রতি বছর ৬০ হাজার ইএফডি ও এসডিসি স্থাপন করা। আগামী ৫ বছরের ৩ লাখ ডিভাইস স্থাপন করা হবে, যার মাধ্যমে করদাতারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে দাখিলপত্র পেশ ও প্রদেয় কর অনলাইনে পরিশোধ করতে পারবেন।

২০২০ সালের ২৫ আগস্টে প্রাথমিকভাবে ৫টি কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট (ঢাকা উত্তর/দক্ষিণ/পূর্ব/পশ্চিম, চট্টগ্রাম) ইএফডি ও এসডিসি স্থাপন কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছিল। ২০২২ সালের ৩ নভেম্বর ডিজিটাল মাধ্যমে খুচরা পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট সংগ্রহ করতে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) মেশিন বসানোর কাজে গতি ফেরাতে জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। গত ২২ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে জেনেক্স।
ভ্যাট বাস্তবায়ন ও আইটি বিভাগের সদস্য ড. মইনুল খান বলেন, ‘আগের সিস্টেমে সাড়ে ৯ হাজার মেশিন আমরা বসিয়েছি। এটা কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। এজন্য খুচরা পর্যায়ে দ্রুত ইএফডি মেশিন বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। চলতি বছর ৬০ হাজার ইএফডি মেশিন বসানোর লক্ষ্যে এনবিআর কাজ করছে বলেও জানান ড. মইনুল খান। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ইএফডি মেশিন বসানো হবে বলেও উল্লেখ করে ভ্যাট বাস্তবায়ন ও আইটি বিভাগের এ সদস্য আরও বলেন, কাঁচামাল আমদানি কমে যাওয়ার কারণে রাজস্ব কমে যাচ্ছে। কোনো ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ আমদানি কমে গেছে। তবে কিছু কৌশল অবলম্বন করে আমরা ভ্যাট আদায় বাড়িয়েছি। যার জন্য ভ্যাট আদায়ে গত নভেম্বর পর্যন্ত আমরা ১৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পেরেছি। যেখানে কোন লিকেজ আছে সেখানে আমরা কাজ করছি।
এনবিআরের কর কর্মকর্তারা জানান, কর ফাঁকি বন্ধে তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। ভ্যাটে সবচেয়ে বড় খেলাপি প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা। সরকারি এই প্রতিষ্ঠানের কাছে এনবিআর পাবে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা। শত চেষ্টায়ও বকেয়া আদায়ে অগ্রগতি সামান্য। পেট্রো বাংলা ছাড়াও আরও কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ভ্যাট পাবে এনবিআর। এ ছাড়া অনেক বেসরকারি কোম্পানির কাছে বকেয়া ৭০০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে প্রায় ৫ হাজার প্রতিষ্ঠানের বকেয়া সাড়ে ২৪ হাজার কোটি টাকা। 
অন্যদিকে বিভিন্ন আদালতে ভ্যাট সংক্রান্ত মামলা চলছে প্রায় ১০ হাজার। এতে ভ্যাটের পরিমাণ সাড়ে ২১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বড় কোম্পানির বিরুদ্ধেই চলছে ৫৫০ মামলা। আটকে আছে ১৩ হাজার কোটি টাকা। 
অনুষ্ঠানে এনবিআর সদস্য মাসুদ সাদিক বলেন, ‘গত চার মাসে নিষ্পত্তি হয়েছে ৯০০টিরও বেশি মামলা। পাশাপাশি নিরীক্ষা হয়েছে পাঁচশ’র বেশি কোম্পানি। এসব উদ্যোগে রাজস্ব আদায় বাড়ছে।’ এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘খুচরা ভ্যাট আদায় বাড়াতে দোকানে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস ইএফডি বসানো ও মেশিন তদারকি জোরদার করা হয়েছে।’ এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, সচেতনতা বাড়াতে ১০ ডিসেম্বর পালিত হবে জাতীয় ভ্যাট দিবস। সপ্তাহব্যাপী চলবে বিশেষ সেবা।

×