
ছবিঃ সংগৃহীত
পৃথিবীর বুকে প্রাণিজগতের বৈচিত্র্য সত্যিই বিস্ময়কর। কিছু প্রাণী আছে যারা প্রতিনিয়ত খাবারের সন্ধানে ব্যস্ত থাকে, আবার কিছু প্রাণী রয়েছে যারা সপ্তাহ, এমনকি মাসের পর মাস কোনো খাবার বা পানীয় ছাড়াই বেঁচে থাকতে পারে। তাদের শরীরের বিশেষ শারীরবৃত্তীয় গঠন, বিপাকীয় প্রক্রিয়া এবং আচরণগত অভিযোজনের ফলে তারা কঠিন ও প্রতিকূল পরিবেশেও টিকে থাকার ক্ষমতা অর্জন করেছে। মরুভূমির প্রচণ্ড গরম হোক বা বরফে ঢাকা তুন্দ্রা, খাদ্যের অভাব কিংবা পানির সংকট—এই প্রাণীগুলি নিজেদের শরীর ও অভ্যাসকে এমনভাবে মানিয়ে নিয়েছে যে তারা সীমিত সম্পদেও দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকতে সক্ষম।
উট
উট মরুভূমির প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্য সুপরিচিত। তারা ১৫ দিন পর্যন্ত পানি ছাড়াই এবং আরও দীর্ঘ সময় খাদ্য ছাড়াই বেঁচে থাকতে পারে। উটের কুঁজে পানি নয়, চর্বি সঞ্চিত থাকে, যা তাদের দেহে শক্তি ও আর্দ্রতা সরবরাহ করে। তাদের দেহ অত্যন্ত দক্ষভাবে পানি সংরক্ষণ করে, অত্যন্ত ঘন মূত্র ও শুষ্ক মল উৎপন্ন করে। উট তাদের দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি সহ্য করতে পারে, যা ঘাম কমিয়ে পানি সংরক্ষণে সহায়তা করে।
সম্রাট পেঙ্গুইন
অ্যান্টার্কটিকার তীব্র শীতে, স্ত্রী পেঙ্গুইন ডিম পাড়ার পর খাদ্যের সন্ধানে সাগরে যায়, এবং পুরুষ পেঙ্গুইন ডিমটি ইনকিউবেট করে। এই সময়ে, যা ৬০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে, পুরুষ পেঙ্গুইন না খেয়ে ও না পান করে থাকে। তারা পূর্বে সঞ্চিত চর্বি ব্যবহার করে বেঁচে থাকে এবং একসাথে জড়ো হয়ে তাপ ও শক্তি সংরক্ষণ করে।
গিলা মনস্টার
গিলা মনস্টার একটি বিষাক্ত টিকটিকি, যা যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিম ও মেক্সিকোর মরুভূমিতে বাস করে। তারা ধীর গতির জীবনযাপন করে এবং ধীর বিপাকীয় হার থাকার কারণে সপ্তাহ বা মাসব্যাপী খাদ্য ছাড়াই বেঁচে থাকতে পারে। তাদের লেজ ও পেটে চর্বি সঞ্চিত থাকে, যা তারা প্রয়োজনে ব্যবহার করে।
সাপ
সাপের বিপাকীয় হার ধীর হওয়ায় তারা দীর্ঘ সময় খাদ্য ছাড়াই বেঁচে থাকতে পারে। তারা বড় খাবার খেয়ে তা ধীরে ধীরে হজম করে এবং প্রয়োজনে তাদের দেহের কার্যকলাপ কমিয়ে দেয়।
জলধারক ব্যাঙ
অস্ট্রেলিয়ার এই ব্যাঙ প্রজাতি শুষ্ক মৌসুমে মাটির নিচে গর্ত করে এবং নিজের ত্বকে মোড়ানো অবস্থায় থাকে, যা তাকে আর্দ্রতা সংরক্ষণে সহায়তা করে। তারা মাস বা বছরের পর বছর পর্যন্ত এই অবস্থায় থাকতে পারে, এবং বৃষ্টি হলে সক্রিয় হয়ে খাদ্য ও সঙ্গীর সন্ধানে বের হয়।
এই প্রাণীগুলির অভিযোজন প্রমাণ করে যে, প্রকৃতিতে বেঁচে থাকার জন্য কতটা বৈচিত্র্যপূর্ণ ও চমকপ্রদ পদ্ধতি রয়েছে।
আলীম