ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৬ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পার্ক গড়ার নামে ইতিহাস মুছে ফেলার নতুন চেষ্টা ?

প্রকাশিত: ২২:৫৭, ২৫ মে ২০২৫; আপডেট: ২৩:০৫, ২৫ মে ২০২৫

পার্ক গড়ার নামে ইতিহাস মুছে ফেলার নতুন চেষ্টা ?

ছবি : সংগৃহীত

ফিলিস্তিনিরা মনে করছেন, ইসরায়েল এখন ফিলিস্তিনি ইতিহাস মুছে ফেলার নতুন কৌশলে নেমেছে। তাদের দাবি, প্রাচীন সেবাস্তিয়ায় “ইসরায়েলি জাতীয় পার্ক” গড়ে তোলার মাধ্যমে ইহুদি ঐতিহ্যকে একতরফাভাবে তুলে ধরা হচ্ছে, যাতে শহরটির ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা যায় এবং ফিলিস্তিনি ঐতিহ্য ও উপস্থিতি ধীরে ধীরে মুছে ফেলা যায়।

১২ মে সেবাস্তিয়ায় গিয়েছিলেন ইসরায়েলের কট্টরপন্থী কিছু মন্ত্রী। তারা একটি বিশাল প্রত্নতাত্ত্বিক পার্ক দখলে নেওয়ার ঘোষণা দেন। এই জায়গাটি পশ্চিম তীরের প্রায় ৬ হাজার ঐতিহাসিক স্থানের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটিকে ধরা হয়।

ইসরায়েলের হেরিটেজ (ঐতিহ্য) মন্ত্রী আমিখাই এলিয়াহু বলেন, এখানে খননকাজ শুরু হবে এবং “সামারিয়া ন্যাশনাল পার্ক” গড়ে তোলা হবে, যেখানে ইহুদি ইতিহাস তুলে ধরা হবে।

ফিলিস্তিনিদের আশঙ্কা, সেবাস্তিয়ায় ইসরায়েলের খনন ও উন্নয়ন প্রকল্পের আড়ালে তাদের ইতিহাসকে মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে। ফিলিস্তিনি পর্যটন ও প্রত্নতত্ত্ব মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য অনুযায়ী, এসব খনন আসলে সেবাস্তিয়াকে দখল ও বিচ্ছিন্ন করে ফেলার প্রস্তুতি।

ইসরায়েলিরা সেবাস্তিয়াকে “সামারিয়া” বা হিব্রুতে “শোমরন” নামে অভিহিত করে, এবং দাবি করে এটি প্রায় তিন হাজার বছর আগে প্রাচীন ইসরায়েলি রাজ্যের রাজধানী ছিল।

কিন্তু এলাকাটির ইতিহাস বহুস্তরবিশিষ্ট। এখানে রয়েছে বাইজান্টাইন যুগের গির্জার ধ্বংসাবশেষ, রোমান আমলের থিয়েটার, ক্রুসেডারদের নির্মিত গির্জা যা পরবর্তীতে একটি মসজিদে রূপান্তরিত হয়। এখানেই নবী ইয়াহইয়া (জন দ্য ব্যাপটিস্ট)-এর কবর আছে বলেও অনেকের বিশ্বাস।

এই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটির বহুমাত্রিক ইতিহাস ও ধর্মীয় গুরুত্বের কথা তুলে ধরে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এটিকে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে।

সেবাস্তিয়ার মেয়র মোহাম্মদ আজিম বলেন, গত জুলাইয়ে ইসরায়েল সেখানে একটি সামরিক ঘাঁটি তৈরির জন্য জমি দখলের নোটিশ দিয়েছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, “ঘাঁটি তৈরি হলে এখানে রক্তের নদী বয়ে যাবে।”

তার দাবি, “সেনাবাহিনী এমনভাবে চাপে রাখছে যেন মানুষ দখল মেনে নিয়ে চলে যায়—যেমন জেনিন ও তুলকারেমে হয়েছে।” ইসরায়েলি বাহিনী প্রতিদিন গ্রামে ঢোকে, শিশুদেরও লক্ষ্য করে গুলি চালায়। 

সেবাস্তিয়ার প্রত্নতত্ত্ব জাদুঘরের কিউরেটর ও স্থানীয় বাসিন্দা ওয়ালাআ গাজ্জাল বলেন, এই প্রকল্পের আসল উদ্দেশ্য হলো—ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে শহরটিকে শুধুই ইসরায়েলিদের জন্য পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত করা।

তিনি বলেন, “শিগগিরই আমাদের ঐতিহাসিক স্থানে যাওয়া নিষিদ্ধ হয়ে যাবে।” তার মতে, “যদি আমরা এখন প্রতিরোধ না করি, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই আমাদের ঘর ছাড়তে বাধ্য করা হবে।”

ইসরায়েলি মন্ত্রীরা বলছেন, এখানে শুধু ইহুদি ঐতিহাসিক নিদর্শনই আছে। তাদের দাবি—এখানে একচুলও প্রমাণ নেই যে ফিলিস্তিনিরা কখনো এখানে ছিল। এটা শুনে গাজ্জাল বলেন, “ইতিহাস ধর্ম দিয়ে নয়, জনগণের জীবন, কৃষ্টি, ভাষা আর স্মৃতি দিয়ে তৈরি হয়। ইসরায়েল আমাদের ইতিহাসকে মুছে ফেলতে চায়। এটি একটি সাংস্কৃতিক অপরাধ।”

 

সানজানা

×