ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৬ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

রাজশাহীর বড়কুঠি: ইতিহাস, ঐতিহ্য ও নির্যাতনের কালের সাক্ষী

তানভীরুল আলম তোহা, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, রাজশাহী

প্রকাশিত: ০১:০৬, ২৬ মে ২০২৫

রাজশাহীর বড়কুঠি: ইতিহাস, ঐতিহ্য ও নির্যাতনের কালের সাক্ষী

দেশব্যাপী রাজশাহীর সুনাম প্রধানত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার শহর হিসেবে তবে সে কথা বাদ দিয়েও বলা যায় শহরটি প্রাচীন ইতিহাস-ঐতিহ্যে ঘেরা। রাজশাহী শহরের একেবারে পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা নদী। আর এই পদ্মা নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে রাজশাহী শহর। সেই পদ্মার তীরঘেঁষে রয়েছে বিশাল এক ভবন, যার নাম বড়কুঠি। নির্দিষ্ট ভাবে এই ইমারতের নির্মাণকাল নির্ধারণ করা না গেলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় এর নির্মাণকাল অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বলে ধারণা করা হয়। এটি প্রথমে ওলন্দাজ বা ডাচদের ব্যবসা কেন্দ্র ছিল। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ডাচরা ভারতে তাদের কর্মকান্ড গুটিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং ১৮১৪ সালে ইংরেজদের সাথে চুক্তির মাধ্যমে এটিসহ ভারতের সব ব্যবসা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে হস্তান্তর করে দেয়।

১৮৩৩ সাল পর্যন্ত তারা বড়কুঠিকে তাদের বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করতেন । এরপর  ১৯৫৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এই বড়কুঠি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম প্রশাসনিক ভবন হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বড়কুঠি সাহেব বাজার ও রাজশাহী কলেজের দক্ষিণে এবং পদ্মা নদীর উত্তর পাড়ে (বর্তমান পদ্মা গার্ডেনের পাশে) অবস্থিত।

বড়কুঠি আঠারো শতকের প্রথমার্ধে ওলন্দাজ রেশম ব্যবসায়ীরা নির্মাণ করেছিলো । কুঠিটির বাহিরের দৈর্ঘ্য ২৪ মিটার এবং প্রস্থ ১৭.৩৭ মিটার। এই ইমারত টি বিভিন্ন আয়তনের মোট ১২টি ঘর ছিল। উপরে সভাকক্ষসহ ৬টি কক্ষ আছে। মাঝে অবস্থিত পূর্ব-পশ্চিমে ও উত্তর-দক্ষিণ দিকে একটি করে বারান্দা এবং ঘরের পশ্চিম দিকে ২ টি এবং পূর্ব দিকে এক সারিতে ৩ টি ঘর বিদ্যমান।

প্রকৃতপক্ষে ওলন্দাজ বাবসায়ীরা জরুরি সময়ে ইমারতটি দুর্গ হিসেবে ব্যবহার করত। এ জন্য ইমারতের ছাদে এবং নিচে বেশ কয়েকটি কামান শত্রুদের মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকত। পরে ১৮৩৩ সালে এটি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দখলে এলে কামানগুলোকে অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়। বর্তমানে তিনটি পুরনো কামান রাজশাহী পুলিশ লাইন এ সংরক্ষিত রয়েছে।

এ বড়কুঠিতেই বাংলার কৃষকদের উপর সেই নীলচাষের কর নিয়ে চালানো হতো অমানুষিক নির্যাতন। ভবনটির পূর্ব ও পশ্চিম দিকে রয়েছে ঘোরানো দুটি সিঁড়ি। সেই সিঁড়ি দুটি ভবনটার মাটির নিচে চলে গেছে। আর মাটির নিচে রয়েছে এক বিশাল বড় ঘর। আর এই মাটির নিচের ঘরের ভেতর দিয়ে পদ্মা নদীর নিচ দিয়ে ছিল এক বিশাল একটা সুরঙ্গপথ । সে সময় এই রাস্তা দিয়ে নাকি একসাথে ১০টা ঘোড়া দৌড়াতে পারত। আর এ পথটার শেষ মাথা ছিল বাংলার শেষ নবাব সিরাজদ্দৌলার রাজবাড়ি পর্যন্ত। এখন অবশ্য কর্তৃপক্ষ সিঁড়ি দুটোর নিচের দিকে অর্ধেক প্রাচীর দিয়ে যাতায়াত বন্ধ করে রেখেছে।

মুমু

×