
যশোর সদরের সমসপুর গ্রামে ‘ওল্ড কেয়ার হোম’-এ থাকা বৃদ্ধাদের খাবার দেয়া হচ্ছে
দুস্থ ও অসহায় বৃদ্ধা নারীদের আশ্রয়স্থল হচ্ছে যশোর সদরের সমসপুর ‘ওল্ড কেয়ার হোম’। যেখানে কোনো খরচ ছাড়াই থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাঁচ বিঘা জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এই ‘ওল্ড কেয়ার হোম’ ২০১৪ সালে রেজিস্ট্রেশনভুক্ত হয়। জ্যোৎস্না মুখার্জি নামে এক বিধবা নারী এই প্রতিষ্ঠানটি বুড়ি ভৈরব নদীর গাঁ ঘেঁষে তার পৈত্রিক সম্পত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করেন ২০১২ সালে।
জ্যোৎস্না মুখার্জি জানান, শ্বশুর-শাশুড়ি ও আত্মীস্বজনদের কারণে ১৯৮৮ সালে এসএসসি পাসের পর আর লেখাপড়ার সুযোগ হয়নি। তিনি স্বামীর সঙ্গে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যান। সেখানে উত্তর চব্বিশ পরগনার ব্যারাকপুরে এক বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে আশ্রিত মা-বাবাকে এক নজর দেখার পর মনস্থির করেন কখনো সুযোগ পেলে এমনএকটি বৃদ্ধাশ্রম গড়ে তুলবেন নিজ গ্রামে। ২০০১ সালে তার স্বামী মারা যান। তিনি তার বাবার কাছে মনের কথা খুলে বলেন। তার বাবা ওই সময় ক্যান্সারের রোগী ছিলেন। তিনি অনুমতি দিলেন অসহায়দের সেবা করার জন্য। ২০১২ সালে শুরু হয় পথচলা। প্রথমে দশ কক্ষসহ একতলা দুইটা ভবন, চারটি বাথরুম ও দুটি টিউবওয়েল স্থাপন, রান্না করার জন্য একটি ঘর ও আনন্দ বিনোদনের জন্য টিভির ব্যবস্থা করেন।
বৃদ্ধাশ্রম সূত্রে জানা গেছে, দুই ঈদ, পূজা, বৈশাখী মেলাসহ নানা উৎসবে আশ্রমে থাকা বৃদ্ধাদের ঘুরতে নিয়ে যাওয়া হয়। বৃদ্ধা মায়েদের শাড়ি, কম্বল, সাবান, টুথব্রাশ, টুথপেস্ট এবং শীতের সময় সোয়েটার দেওয়া হয়। সরবরাহ করা হয় ওষুধ। মাঝে মাঝে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় এবং বিভিন্ন ধরনের খেলার ব্যবস্থা করা হয়। একটি টাকাও আশ্রমে থাকা নারীর কাছ থেকে গ্রহণ করা হয় না। বর্তমানে এখানে ২০ জন বৃদ্ধা মা আছেন। এমনকি আশ্রমের কারও মৃত্যু হলে যদি আত্মীয়-স্বজনেরা তার মরদেহ গ্রহণ না করেন তবে তাদের সমাহিত করার জন্য সাড়ে আট শতক জমি ক্রয় করা হয়েছে।
ওল্ড কেয়ার হোমে থাকা এক বৃদ্ধা মা বিষ্ণু প্রিয়া (৮০) জানান, আমি এগারো বছর ধরে এখানে আছি। এখানে অনেক সুখে আছি। আমি আমার ববা ছেলের বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। জ্যোৎস্না মা আমাদের অনেক যত্ন করেন। আম্বিয়া খাতুন (৬৫) নামের আর এক বৃদ্ধা জানান, নিজের আত্মীয়স্বজনও এত ভালোবাসে না যেমন জ্যোৎস্না মা আমাদের জন্য করেন। সমস্ত খরচ উনি বহন করেন এবং বিভিন্ন সময়ে আমাদের শরীরের খোঁজখবর নেন।
‘ওল্ড কেয়ার হোম’-এর সহ-সভাপতি হাসেম আলী জানান, বাংলাদেশে এমন ‘ওল্ড কেয়ার হোম’ আছে কি না আমার জানা নেই। কারণ কোনো টাকা পয়সা না নিয়ে এত খরচ চালানো সত্যিই দুরূহ ব্যাপার।কতটা আন্তরিক হলে এটা সম্ভব। যদি কেউ চাল দান করতে চান শুধু ওই চালটাই গ্রহণ করেন জ্যোৎস্না মুখার্জি। এমন উদার মনের লোক আমাদের সমাজে দরকার। সংগঠনের নির্বাহী কমিটির নারী সদস্য শেফালী খাঁ জানান, এই বৃদ্ধাশ্রমের কোনো তুলনা নেই। অনেক সুখে শান্তিতে আছেন এখানকার মায়েরা। সবকিছুর ব্যবস্থা তাদের জন্য এখানে আছে।
জ্যোৎস্না মুখার্জি বলেন, ‘ওল্ড কেয়ার হোম’-এর প্রাচীর এখনো দিতে পারিনি। কোনো উদার মনের মানুষ বা সরকার যদি প্রাচীরের ব্যবস্থা করতেন তবে আমার মায়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হত।
যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আজহারুল ইসলাম গত জানুয়ারি মাসে এই বৃদ্ধাশ্রমটি পরিদর্শন করেন এবং বৃদ্ধাদের মধ্যে শীতের কম্বল বিতরণ করেন। প্রত্যন্ত গ্রামের ভেতর এমন একটি বৃদ্ধাশ্রম চালানো জন্য জ্যোৎস্না মুখার্জিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, জেলা প্রশাসন সব ধরনের সহযোগিতা করবে। ইতোমধ্যে বৃদ্ধাদের খাবারের জন্য তিনি চালের বরাদ্দ দিয়েছেন।
প্যানেল