ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১২ মাঘ ১৪৩১

জাবিতে প্রজাপতি মেলা

হিম বাতাসে রঙের ওড়াউড়ি প্রকৃতির রূপ নিল  মন কাড়ি

ওয়াজহাতুল ওয়াস্তি 

প্রকাশিত: ২২:০৯, ৬ ডিসেম্বর ২০২৪

হিম বাতাসে রঙের ওড়াউড়ি প্রকৃতির রূপ নিল  মন কাড়ি

.

হিম বাতাস জানান দিচ্ছে শীতের। নবসাজে প্রকৃতির রূপ মন কেড়েছে সবার। এরই মধ্যে দিনভর রঙিন প্রজাপতির ওড়াউড়ির মধ্য দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ১৪তম প্রজাপতি মেলা। প্রজাপতি সংরক্ষণ ও গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যতিক্রমী এ মেলার আয়োজন করে বিশ^বিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের কীটতত্ত্ব শাখা।
‘উড়লে আকাশে প্রজাপতি, প্রকৃতি পায় নতুন গতি’ স্লোগানে শুক্রবার সকাল নয়টায় বিশ^বিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তন প্রাঙ্গণে মেলার উদ্বোধন করা হয়। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. কামরুল আহসান মেলার উদ্বোধন ঘোষণা করেন। দিনভর চলা মেলা সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে শেষ হয়।
মেলা আয়োজনের মধ্যে ছিল শিশু-কিশোরদের জন্য প্রজাপতি বিষয়ক ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, কুইজ প্রতিযোগিতা, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, প্রজাপতির আদলে ঘুড়ি উড্ডয়ন, বারোয়ারি বিতর্ক প্রতিযোগিতা, প্রজাপতি চেনা প্রতিযোগিতা, প্রজাপতি বিষয়ক ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী ও পুরস্কার বিতরণী। এ ছাড়া মেলা উপলক্ষে প্রজাপতি পার্ক ও গবেষণা কেন্দ্র জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। দিনব্যাপী সেখানে জীবন্ত প্রজাপতি, প্রজাপতিবান্ধব বৃক্ষরাজি ও প্রজনন ক্ষেত্রসহ উন্মুক্ত বাগান ঘুরে দেখেন দর্শনার্থীরা।
মেলা উপলক্ষে সকাল থেকে ক্যাম্পাসে ভিড় জমান দর্শনার্থীরা। ব্যস্ত জীবনে খানিক মুক্তি পেতে প্রশান্তির খোঁজে সাভারের নবীনগর থেকে মেলা উপভোগ করতে আসেন সাবেক শিক্ষার্থী কামরুন ফারজানা কনিকা। সঙ্গে এনেছিলেন দুই মেয়েকে। বিভিন্ন প্রজাতির প্রজাপতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন মেয়েদের। কনিকা জানান, ইট-পাথরের শহুরে জীবনে প্রজাপতির দেখা পাওয়া দুর্লভ। প্রতি বছরই প্রজাপতি মেলায় নিয়ে আসি মেয়েদের। তারাও পাপেট শো, গান, ছবি আঁকায় চমৎকার সময় পার করে।
মেলার এবারের আসরে প্রকৃতি সম্পর্কিত রিপোর্টিংয়ের জন্য বাটারফ্লাই মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছেন সজীবুর রহমান সজীব। পরিবেশ সংরক্ষণে বিশেষ অবদানের জন্য বন ও প্রকৃতি বিষয়ক সংগঠন ‘প্লানটেশন ফর নেচার’-এর প্রতিষ্ঠাতা সবুজ চাকমাকে বাটারফ্লাই অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া বাটারফ্লাই ইয়াং ইনথুসিয়াস্ট অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সাব্বির আহমেদ। 
মেলার আহ্বায়ক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন বলেন, প্রজাপতি পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পরাগায়নের মাধ্যমে প্রজাপতি পরিবেশ ও প্রকৃতি এবং বনাঞ্চল রক্ষায় ভূমিকা রাখছে। তিনি প্রজাপতি রক্ষায় এর বাসযোগ্য পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং প্রজাপতিসহ সকল পতঙ্গ টিকিয়ে রাখতে জীববৈচিত্র্যের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত মাস্টার প্ল্যান কার্যকরের দাবি জানান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. কামরুল আহসান বলেন, প্রজাপতির কাছ থেকে মানুষের শেখার আছে। প্রজাপতি পরাগায়নের মাধ্যমে কোনো প্রকার ক্ষতি ছাড়াই জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ধর্ম, বর্ণ এবং বৈচিত্র্যেভেদে মানুষের কাছেও সকল মানুষ নিরাপদ হতে হবে। প্রজাপতির কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে গোটা বিশ^কে নিরাপদ রাখার শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে মানুষকে। 
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিশ^বিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মো. মাহফুজুর রহমান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সোহেল আহমেদ, জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার, জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মাসুদ, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের অধিকর্তা মুকিত মজুমদার বাবু, বন বিভাগের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক মো. ছানাউল্যা পাটওয়ারী এবং আরণ্যক ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি মুরাদ বিন আজিজ প্রমুখ।

×