ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৬ জুন ২০২৪, ২ আষাঢ় ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ২৩:২২, ২৩ মে ২০২৪

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহানুভূতি প্রকাশের পর ঢাকার গলিপথে, আগের তুলনায় অনেক বেশি ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা

গত বুধবারের কথা। রাত ৮টার মতো বাজে। সোনারগাঁও মোড় এলাকায় চোখে পড়লো তীব্র যানজট। যানজট বিচিত্র নয়। তবে যানজটের কারণটি খেয়াল করে বেশ অবাক হতে হলো। ভিআইপি সড়কে দিব্যি ঢুকে পড়েছে রিক্সা। এলোমেলোভাবে চলা রিক্সার কারণেই মূলত যানজট। এর আগে ট্রাফিক পুলিশ হাত উঁচিয়ে সামনে দাঁড়ালেন। ফার্মগেটমুখী সব গাড়ি থেমে গেল।

কিন্তু সুযোগ বুঝে রাস্তার একেবারে বাম পাশ দিয়ে হুড়মুড় করে বের হয়ে এলো অনেকগুলো রিক্সা। এফডিসির দিক থেকেও কিছু রিক্সা ঢুকতে দেখলাম। সবগুলোর গন্তব্য ফার্মগেট বা কাওরান বাজার। কিন্তু বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের সামনের রাস্তাটি তখন খোলা। সেদিক থেকে সাঁই সাঁই করে গাড়ি যাচ্ছে হাতিরঝিলের দিকে। এই বাধার কারণে রিক্সাগুলো আর তেমন এগোতে পারছিল না।

তবে একটু একটু করে এগোনোর চেষ্টা করছিল। এতে করে বসুন্ধরা শপিংমলের দিক থেকে আসা গাড়িগুলোও মোড়ের কাছে এসে আটকা পড়ছিল। একই জায়গায় কোমড় বাঁকা করে দাঁড়িয়েছিল ছোট বড় বাস। যাত্রী তুলছিল। সব মিলিয়ে মারাত্মক বিশৃঙ্খলা। যানজট। কাছাকাছি গিয়ে বোঝা গেল সবগুলোই ব্যাটারি চালিত রিক্সা। না, এখন শুধু এই সড়কে নয়। ঢাকার আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়কে এইসব রিক্সা ঢুকে পড়ছে।

আগেও প্রবণতাটি ছিল। তবে সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর পর এটি বেড়েছে বলেই মনে হচ্ছে। সাম্প্রতিক ঘটনা বলতে, অনিরাপদ বিবেচনায় ঢাকায় ব্যাটারি চালিত রিক্সা বন্ধের সরকারি ঘোষণা। বাস্তবায়নের চেষ্টা। চালকদের আন্দোলন। লঙ্কা কা-। আর তার পর খোদ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দরীদ্র চালকদের জীবিকার কথা ভেবে সহানভূতিশীল হলেন। নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হলো।

কিন্তু এ কী কা-, চালকরা একে তাদের বিজয় ধরে নিয়ে যেন আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে! বর্তমানে দিনের বেলায় ব্যস্ত সড়কে অহরহ দেখা যাচ্ছে ব্যাটারি চালিত রিক্সা। অথচ সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শুধুমাত্র ফিডার রোডে, মানে, মূল সড়কের বাইরে এই তিন চাকার বাহনটি চলার কথা। কিন্তু চালকরা মানছেন আর কৈ? বরং অলি গলিতে একতরফাভাবে ব্যাটারি চালিত রিক্সার সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে।

তেজগাঁওয়ের একটি উদাহরণ দিই। হলিক্রস কলেজ মোড়ে প্রচুর রিক্সা লম্বা সময় ধরে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করে থাকে। এটা বহু বছর ধরেই। কিন্তু এখন সেখানে ব্যাটারি চালিত রিক্সার আধিক্য। এ ধরণের রিক্সা চলাচলে বাধা নেই জানার পর সংখ্যাটা হঠাৎ করে আরও বেড়ে গেছে। এত বেড়েছে যে, সাধারণ রিক্সা পাওয়া মুশকিল হয়ে যায়। ফলে যাত্রীরা কখনো কখনো অপারগ হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই এসব রিক্সায় চড়ছেন।

ঝুঁকিটা কোথায়? উত্তরে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ২০০৩-০৪ সাল থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ইজি-বাইক চীন থেকে আমদানি করা হচ্ছিল। এগুলো কাঠামোগতভাবে কিছুটা নিরাপদ ছিল। ২০১০ সাল থেকে স্থানীয়দের দিয়ে যেনতেনভাবে এসব বাহন তৈরি করা হচ্ছে। এসবের কারিগরি মান ঠিক থাকছে না। পরিবহন বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম হাদিউজ্জামানের মতে, ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো একেবারেই অনিরাপদ।

সাধারণ রিক্সাগুলোতেই মোটর জুড়ে দেয়া হয়েছে। কাঠামোগতভাবে  রিক্সাগুলোর এই সক্ষমতা নেই। মোটর লাগানোর ফলে যে গতিতে এগুলো চলে কাঠামো এটা সমর্থন করে না। তাই যখন তখন দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে বলে জানান তিনি। অবশ্য এতদিনে এই ধরণের রিক্সা অনেক হয়ে গেছে। চাইলেই আর সব উঠিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না। হয়ত উচিতও হবে না। তাই বাহনটিকে যতটা সম্ভব নিরাপদ করা এবং শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে হবে। এ জন্য কাজ শুরু করতে হবে এখনই। আমরা যেন সে কথা ভুলে না যাই।    
মুনতাসীর মামুনের জন্মদিনে স্বর্ণপদক ॥ বাংলাদেশের খ্যাতিমান ইতিহাসবিদ ও ঢাকা গবেষক মুনতাসীর মামুনের জন্মদিন আজ ২৪ মে। ১৯৫১ সালের আজকের দিনে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। এই লেখক অধ্যাপক বাংলাদেশকে, ঢাকাকে চিনতে কতভাবে যে সাহায্য করেছেন আমাদের! এখনও দুই হাতে লিখছেন। তার কলম যেন ইতিহাসের টর্চ লাইট। আজকের দিনে তার প্রতি প্রাণঢালা শুভেচ্ছা।

সেইসঙ্গে জানিয়ে রাখা যেতে পারে  জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে তার নামে একটি স্বর্ণপদক প্রবর্তন করেছে। প্রতিবছর ইতিহাস বিভাগ থেকে স্লাতকের ফলাফলের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ সিজিপিএধারী ছাত্র ছাত্রীকে বিশ^বিদ্যালয়ের সমাবর্তনে ইতিহাসবিদ মুনতাসীরমামুন স্বর্ণপদক প্রদান করা হবে। এই ট্রাস্ট ফান্ডের উদ্যোক্তা বিশ^বিদ্যালয়টির ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. চৌধুরীশহীদ কাদের।

সঙ্গে আছে  মুনতাসীর মামুনের পরিবারের সদস্যরাও। প্রাথমিকভাবে দাতারা ১০ লক্ষটাকা প্রদান করে ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছেন। এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছে বৃহস্পতিবার। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে মুনতাসীর মামুন ছাড়াও বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্যের অধ্যাপক সাদেকা হালিম প্রধানঅতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। দারুণ এই উদ্যোগ আগামী প্রজন্মের ইতিহাস গবেষণাকে নিশ্চয়ই উৎসাহিত করবে।

×