শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত মঞ্চে বাংলাদেশ-ভারত বাউল সংগীত উৎসবের একটি পরিবেশনা
সন্ধ্যার অবকাশে বেজে ওঠে একতারা-দোতারা থেকে মন্দিরা-খঞ্জনীসহ রকমারি লোকজ বাদ্যযন্ত্র। আর সেই সুরেলা শব্দধ্বনিকে সঙ্গী করে পরিবেশনা উপস্থাপন করেন দুই বাংলার খ্যাতিমান বাউলরা। তাদের কণ্ঠে উচ্চারিত হয় ভাব-ভালোবাসা থেকে মানবতা কিংবা আধ্যাত্মবাদের বারতাবহ বৈচিত্র্যময় বাণী। রাত অবধি চলে অন্তরাত্মা উচাটন করা সেই সুরধ্বনি। উন্মুুক্ত আঙিনায় আয়োজিত সেই সংগীতাসরটি উপভোগ করলেন অগণন শ্রোতা। কেউবা চলতি পথে সুরেলা আওয়াজ শুনে সম্পৃক্ত হয়েছে এই সংগীতায়োজনে। এভাবেই সুন্দরের প্রতিচ্ছবি এঁকে শুরু হলো বাংলাদেশ-ভারত নয় দিনব্যাপী বাউলসংগীত উৎসব। শুক্রবার শিল্পকলা একাডেমির খোলা মাঠে উৎসবের সূচনা হয়। জাতীয় পর্যায়ে ফকির লালন সাঁইয়ের সার্ধ-দ্বিশততম আবির্ভাববর্ষ
এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে লালন বিশ্বসংঘ। সহযোগিতায় রয়েছে ভারতীয় হাইকমিশন। রাজধানীতে শুরু হওয়া উৎসবটি পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত হবে শেরপুর ও গোপালগঞ্জে।
সংগীতাসর শুরু হয় ঝিনাইদহের হরিশপুরের শিল্পী আজিজুর রহমানের প্রার্থনামূলক লালনগীতি পরিবেশনার মাধ্যমে। তিনি গেয়েছেন ‘আমার দিন কি যাবে এই হালে’। উৎসবের সূচনা সংগীত পরিবেশন করে ঢাকা সাংস্কৃতিক দলের শিল্পীরা। অনেকগুলো কণ্ঠের আশ্রয়ে উচ্চারিত হয় মানবতার জয়গান। সকলে মিলে গেয়ে শোনান- মানুষ ছাড়া ক্ষ্যাপারে তুই মূল হারাবি/মানুষ ছাড়া ক্ষ্যাপারে তুই মূল হারাবি/মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি ...। পরের পরিবেশনায় তারা গেয়ে শোনান ‘আমার এ ঘরখানায় কে বিরাজ করে’ শীর্ষক সংগীত। একক কণ্ঠের পরিবেশনায় দেশবরেণ্য লালনসংগীত শিল্পী ফরিদা পারভীন শুনিয়েছেন ‘মানুষ গুরু নিষ্ঠা যার’ ও ‘বাড়ির কাছে আরশীনগর’ শিরোনামের গান। সরদার হীরক রাজা পরিবেশিত গানের শিরোনাম ছিল ‘তিন পাগলের হলো মেলা নদেয় এসে’ এবং ‘ও তুই ডুবলে পরে রতন পাবি ভাসলে পরে পাবি না’। শেকড় সন্ধানী সুররসিকদের অন্তরে প্রশান্তি ছড়ানো উৎসবটির প্রথম দিনে দেশের বাউলদের মধ্যে গান শুনিয়েছেন সুনীল কর্মকার, চন্দনা মজুমদার, শফি মন্ডল ও শাহনাজ বেলী। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাউলদের মধ্যে পরিবেশনায় অংশ নেন শ্যামসুন্দর দাস, প্রমীলা বিশ্বাস ও নিমাই ক্ষ্যাপা। তাদের সঙ্গে পুরো উৎসবে অংশ নিচ্ছেন উভয় দেশের নবীন-প্রবীণ অর্ধশত বাউলশিল্পী।
প্রধান অতিথি হিসেবে উৎসব উদ্বোধন করেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন থাকবেন বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ প্রধান মনিরুল ইসলাম, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী ও ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক মৃন্ময় চক্রবর্তী। সভাপতিত্ব করেন লালন বিশ্বসংঘের আজীবন সভাপতি প্রফেসর ইমেরিটাস ডা. আনিসুজ্জামান।
আজ শনিবার বিকেলে দ্বিতীয় দিনের উৎসবে ‘আমাদের লালনচর্চা’ শীর্ষক সেমিনার অনুুষ্ঠিত হবে। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন লালন গবেষক জাহাঙ্গীর খান। সন্ধ্যা সাতটা থেকে শুরু হবে পরিবেশনা পর্ব। রবিবার একই ভেন্যুতে চলবে তৃতীয় দিনের উৎসব। এর পর সোম থেকে বুধবার পর্যন্ত উৎসবটি অনুষ্ঠিত হবে শেরপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে। মাঝে দুই দিনের বিরতি দিয়ে ২৪ থেকে ২৬ মে পর্যন্ত উৎসবটি অনুষ্ঠিত হবে গোপালগঞ্জের মকসুদপুর উপজেলার কে জি স্কুল খেলার মাঠে।
জাপানি ক্যালিগ্রাফি শিল্পীর কর্মশালায় মুগ্ধ শিশুরা ॥ ঢাকায় জাপান দূতাবাসের আয়োজনে বাংলাদেশে এসেছেন জাপানের বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফি শিল্পী সাতোকা আজুমা। শুক্রবার সকালে কেরানীগঞ্জের হামিদুর রহমান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে সাতোকা আজুমা ‘শোদো ওয়ার্কশপ : দ্য আর্ট অব জাপানিজ ক্যালিগ্রাফি’ শীর্ষক একটি ওয়ার্কশপ পরিচালনা করেন। এ কর্মশালায় অংশ নেয় বাংলাদেশ শিশু একাডেমির শিশু বিকাশ কেন্দ্র কেরানীগঞ্জ শিশুরা। সাতোকা আজুমা পরিচালিত কর্মশালাটি মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেন খুদে শিক্ষার্থীরা।
কর্মশালার উদ্বোধন করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। ক্যালিগ্রাফি শিল্পী সাতোকা আজুমা জাপানি ক্যালিগ্রাফি দর্শনের ওপর একটি বক্তৃতা দেওয়ার পাশাপাশি একটি বিশাল ব্রাশ দিয়ে চিত্রিত চমৎকার একটি ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শন করেন। এর পর সাতোকা আজুমা বিভিন্ন স্কুল থেকে কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী শিশুদেরকে ক্যালিগ্রাফি করতে সাহায্য করেন। শিশু একাডেমির শিশু বিকাশ কেন্দ্র কেরানীগঞ্জের শিশুরা আগ্রহের সঙ্গে কর্মশালায় অংশগ্রহণ করে। সাতোকা আজুমা এই কর্মশালার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও জাপানের ভাষা ও সংস্কৃতির আদান-প্রদান হবে। উভয় দেশের সাংস্কৃতিক বিকাশে এই আদান-প্রদান ভূমিকা পালন করবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী ফাহমিদা নবী।