ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

গান কবিতায় ছায়ানটের স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপন

প্রকাশিত: ২২:৫৮, ২৬ মার্চ ২০২৩

গান কবিতায় ছায়ানটের স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপন

ছায়ানট আয়োজিত স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে সমবেত সঙ্গীত পরিবেশনা

বসন্তের সকালে সরব হয়ে ওঠে ধানম-ির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তন। শিল্পিত সেই সরবতায় মিশেছিল স্বদেশের বন্দনা।  সেই বন্দনায় উদ্ভাসিত হয়েছে বাঙালির বীরত্বগাথার সাক্ষ্যবহ স্বাধীনতার বর্ণিলতা। গানের সুরে কিংবা কবিতার শিল্পিত উচ্চারণে মূর্ত হয়েছে একাত্তরের মহাকাব্যিক অধ্যায়। এভাবেই  রবিবার বাঙালির গৌরবগাথাকে ধারণ করে সজ্জিত হয়েছিল ছায়ানটের  স্বাধীনতা দিবসের নিবেদন।

সম্মেলক সংগীতের আশ্রয়ে  সূচনা হয় অনুষ্ঠানের। কাজী নজরুলের বাণীকে ধারণ করে  বহু কণ্ঠ মিলে যায় এক সুরে। সুজলা সুফলা বাংলার প্রতি অনুরাগের প্রকাশে সকলে মিলে গেয়ে শোনায়-  ভাই খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি/আমার দেশের মাটি/এই  দেশেরই মাটি জলে/এই  দেশেরই ফুলে ফলে/তৃষ্ণা মিটাই মিটাই ক্ষুধা পিয়ে এরি দুধের বাটি ...

এর পর স্বাগত কথনে অংশ নেন ছায়ানটের নির্বাহী সম্পাদক ডা. সারওয়ার আলী। তাৎপর্যপূর্ণ সেই সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, স্বাধীনতা অর্জনের অর্ধশত বছর পেরিয়ে দেশের অভাবিত, অকল্পনীয় অগ্রগতি আমাদের আশান্বিত করে।  সেই বাস্তবতায় স্বাধীনতা দিবস মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের ভাবাদর্শে প্রাণিত মানুষদের কাছে হালখাতার দিনের মতো। প্রতিটি স্বাধীনতা দিবসেই তাই রাষ্ট্রের ব্যর্থতা অর্জনকে পরিমাপ করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের গত কয়েক দশকে অর্থনৈতিক সামাজিক ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু ধর্মবিদ্বেষ ধর্মবৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং লোভের সর্বগ্রাসী বিস্তার ঘটেছে। মানুষের নৈতিকতা তার প্রান্তসীমা অতিক্রম করেছে। পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য দেশে পাকিস্তান আমলের মতো সাংস্কৃতিক জাগরণ প্রয়োজন।   সেই সময় যেভাবে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালির স্বাধিকার সংগ্রাম সাধিত হয়েছে তেমনভাবেই জাগরণ ঘটাতে হবে। দায় শুধু রাষ্ট্রের নয়; দায় সমাজের। না হলে বাংলাদেশের মুুক্তিযুদ্ধের ভাবাদর্শ থেকে পথভ্রষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

পরিবেশনায় মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের গীতিকবিতাকে সঙ্গী করে মঞ্চে আসেন নুসরাত জাহান রুনা। দরদী কণ্ঠে গেয়ে শোনানযদি মরণের পরে কেউ প্রশ্ন করে শীর্ষক সংগীত। এই সুরমূর্ছনা  থামতেই শোনা যায় কাব্যিক উচ্চারণ। রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর লেখাবাতাসে লাশের গন্ধ পাই শিরোনামের  শ্রোতা সমাদৃত কবিতাখানি আবৃত্তি করেন বাচিকশিল্পী মাসুদুজ্জামান। এর পর বিজন  চন্দ্র মিস্ত্রি  শুনিয়েছেনসাঁঝের বেলায় পাখি ফিরে নীড়ে গানের পর রুদ্র রচিত কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প নামের আরেক আলোচিত কবিতা আবৃত্তি করেন শামীমা সুলতানা তন্দ্রা। সুমন মুজমদার গেয়েছেনমাগো ধন্য হলো জীবন আমার তোমায় ভালোবেসে এছাড়াও একক সংগীত পরিবেশন করেন স্বাধীন বাংলা বেতারের কণ্ঠযোদ্ধা ডালিয়া নওশীন।  এছাড়া ছায়ানটের শিল্পীদের সম্মেলক কণ্ঠের পরিবেশনায় গাওয়া হয়আয়রে বাঙ্গালী আয় সেজে আয় লাখো শহীদের রক্ত মাখা শিরোনামের গান। সম্মেলক সংগীতের পর প্রদর্শিত হয় সুমন দেলোয়ার নির্মিত তথ্যচিত্রজলগেরিলা৭১ সকলের মিলিত কণ্ঠে  জাতীয় সংগীতের সুরে শেষ হয় অনুষ্ঠান। 

শিশু একাডেমির আয়োজন মহান স্বাধীনতা জাতীয় দিবস  উপলক্ষে এদিন সকালে অনুষ্ঠান করে  বাংলাদেশ শিশু একাডেম। সংগীতনির্ভর আয়োজনে  শত শিশুশিল্পীকে সঙ্গী করে জয় বাংলা বাংলার জয় শীর্ষক সংগীত পরিবেশন  করে পার্থ বড়ুয়া নিশিতা বড়ুয়া। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা। উপস্থিত ছিলেন মহিলা শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ হাসানুজ্জামান কল্লোল, একাডেমির চেয়ারম্যান লাকী ইনাম এবং একাডেমির মহাপরিচালক ছড়াকার আনজীর লিটন।

×