ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

কাগজের মূল্য বৃদ্ধির মধ্যেও এক সপ্তাহে ৫২৮ নতুন বই

মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ২৩:৫৫, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

কাগজের মূল্য বৃদ্ধির মধ্যেও এক সপ্তাহে ৫২৮ নতুন বই

বইমেলার একটি প্যাভিলিয়নে নতুন বইয়ের উপস্থাপনা

এক সপ্তাহ পার করল অমর একুশে বইমেলা। হ্যাঁ, দেখতে দেখতে কেটে গেছে সাত সাতটি দিন। টের পাওয়া গেল কি? মোটেই না। আসলে বইমেলা এমনই। শুরু হতে না হতেই বয়স বেড়ে যায়। গত ১ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করা হয়েছিল। মঙ্গলবার ছিল ৭ ফেব্রুয়ারি। এ সময়ের মধ্যে প্রতিদিনই নতুন নতুন বই এসেছে মেলায়। একুশের মেলার এটি অন্যতম বৈশিষ্ট্যও বটে। তবে এবার কাগজের দাম অনেক বেশি। এ নিয়ে আগে থেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিলেন প্রকাশকরা।

সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছিলেন। এমনকি মেলার উদ্বোধনী দিন প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এ সংকটের কথা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন প্রকাশকদের প্রতিনিধি আরিফ হোসেন ছোটন। কিন্তু তেমন ফল হয়নি। তারও আগে আগে বিপুল পরিমাণ কাগজ মজুত করে ফেলেছিল অসাধু ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় অন্যান্য বছরের তুলনায় মেলায় নতুন বই কম আসবে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।  
এ প্রসঙ্গে কথা হচ্ছিল মাওলা ব্রাদার্সের প্রকাশক আহমেদ মাহমুদুল হকের সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, যে বইগুলো না করলেই নয় সেগুলোই এবার করব। ১৫ থেকে ২০টি পা-ুলিপি অফিসেই পড়ে থাকবে। মেলায় বের করা হয়ত হবে না। 
প্রায় একই মত অনন্যার প্রকাশক মনিরুল হকের। তিনি জানান, প্রতি বছর মেলায় বহু বই অনুরোধে ছাপাতে হয়। এবার কাগজের মূল্য বাড়ায় কাছের মানুষের অনুরোধও উপেক্ষা করছেন। এমনকি বিখ্যাত এক কবির কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করার কথা থাকলেও, তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন বলে জানান তিনি।   
অবশ্য সময় প্রকাশনের কর্ণধার ও প্রকাশকদের একটি সংগঠনের নেতা ফরিদ আহমেদ কাগজের মূল্য বৃদ্ধিকে অত বড় সংকট হিসেবে দেখতে ও দেখাতে চান না। তার মতে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এখন কেবল বাংলাদেশের সমস্যা  নয়। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ ভুগছে। তিনি নিজে বেশি দামে কাগজ কেনার কথা স্বীকার করলেও, বলেন, আমি যে দামে সাধারণত কিনি তার তুলনায় এই দাম খুব বেশি ছিল না। ফরিদ আহমদ মনে করেন, দাম একটু বাড়লেও বই প্রকাশ না করার কিছু নেই। পূর্ব পরিকল্পনামতো সব বই প্রকাশ করবেন বলে জানান তিনি। 
এ অবস্থায় এক সপ্তাহ পার করেছে মেলা। কী দাঁড়াল বইয়ের হিসাবটা? বাংলা একাডেমির তথ্য কিন্তু খুব একটা হতাশ করছে না। একাডেমির তথ্য মতে, আয়োজনের দ্বিতীয় দিনে নতুন বই আসে ২১টি। তৃতীয় দিনে ৯৬টি। চতুর্থ দিনে আসে ১১৩টি। পঞ্চম দিনে ৭৩টি। ষষ্ঠ দিনে ১২১টি। আর সপ্তম দিনে মেলায় আসে ১০৪টি নতুন বই। সব মিলিয়ে গত এক সপ্তাহে নতুন বই এসেছে  ৫২৮টি। অবশ্য বইয়ের সংখ্যার চেয়ে মান ও মৌলিকত্ব নিশ্চিত করা বেশি জরুরি। এ কাজ কতটা হচ্ছে? বড় এক প্রশ্ন বৈকি। 
টাস্কফোর্সের অভিযান ॥ সপ্তম দিনে মেলায় অভিযানে নামে টাস্কফোর্স। নীতিমালা অমান্য করায় ‘রাবেয়া বুকস’ নামের একটি স্টল বন্ধ করে দেওয়া হয়। সতর্ক করে দেওয়া হয় মিজান পাবলিশার্সকে। পাশাপাশি খাবার দোকানের মালিকদের মানের ব্যাপারে সতর্ক করে দেন তারা।    
লেখক বলছি ॥ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন আবুল কাসেম, সাকিরা পারভীন, জালাল ফিরোজ এবং পলাশ মাহবুব।      
মূল মঞ্চে দুই প্রয়াতকে স্মরণ ॥ বিকেলে বইমেলার মূলমঞ্চের আলোচনায় স্মরণ করা হয় প্রয়াত মাহবুব তালুকদার এবং আলী ইমামকে। বিষয়ের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গাজী রহমান ও আহমাদ মাযহার। আলোচনা করেন লুৎফর রহমান রিটন, ড. নিমাই ম-ল, আমীরুল ইসলাম এবং ওমর কায়সার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ফরিদুর রেজা সাগর।
সাংস্কৃতিক আয়োজন ॥ সাংস্কৃতিক আয়োজনে কবিতা পাঠ করেন কবি জাহিদুল হক, গোলাম কিবরিয়া পিনু এবং ইউসুফ রেজা। আবৃত্তি করেন কাজী মাহতাব সুমন, নায়লা তারান্নুম চৌধুরী এবং সংগীতা চৌধুরী। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী তপন মজুমদার, মনোতোষ চক্রবর্তী, শামসেল হক চিশতি, এ এইচ এম সালাউদ্দিন, অণিমা মুক্তি গোমেজ, মো. মোখলেসুর রহমান এবং মো. মুরাদ হোসেন।

×