ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঘুরে বেড়ানো, গল্প আড্ডা- বইয়ের খোঁজ

মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ২৩:৪৫, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ঘুরে বেড়ানো, গল্প আড্ডা- বইয়ের খোঁজ

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বইমেলা প্রাঙ্গণ বইপ্রেমীদের পদচারণায় মুখর

প্রথম ছুটির দিনেই মেলা এত জমে উঠবে, কে জানত? বাস্তবে তা-ই হয়েছে। শুক্রবার প্রচুর লোক সমাগম ঘটেছিল। একই চিত্র দেখা গেল শনিবার। এদিনও বহু পাঠক মেলায় এসেছিলেন। শিশুপ্রহর থাকায় দ্বার খুলে দেয়া হয় বেলা ১১টায়। তখন থেকেই শিশু কিশোররা মেলায় আসতে শুরু করে।

গতদিনের সঙ্গে এদিনের ছিল অনেক মিল। ছোটদের কিচিরমিচিরে মুখরিত হয়ে উঠেছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিশু চত্বর। অনেকেই বাবা-মায়ের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে বই দেখেছে। তবে সিসিমপুরের দিকেই বেশি ছিল ঝোঁক। মেলার শিশু চত্বরে প্রতিবারের মতো এবারও দেখা দিচ্ছে সিসিমপুরের প্রিয় চরিত্ররা। চারদিক খোলা মঞ্চে কখন টুকটুকি আসবে, হালুম আসবে- বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে ছিল ক্ষুদে বন্ধুরা। আর যখনই তারা এসেছে তখনই হুমড়ি খেয়ে পড়েছে এমনকি বড়রা। ফলে সারাক্ষণই এখানে ভিড় লেগে ছিল।
বেলা বাড়তে থাকলে বাড়তে থাকে বড়দের উপস্থিতি। বিকেলের দিকে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে বড়রা মেলায় প্রবেশ করতে থাকেন। সন্ধ্যার দিকে জমজমাট একটা চেহারা পায়। তবে মেলায় আগতদের বড় অংশটি এখনো মূলত খোঁজ খবর করছে। কোন্ লেখকের কী বই এলো, কোন্টি সংগ্রহ করার মতো ইত্যাদি বিষয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলছেন তারা।

অনেকে নীরবে স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে বই হাতে নিচ্ছেন। পাতা উল্টাচ্ছেন। ভাল লাগলে ভূূমিকা বা প্রথম পাতার দুই দশ লাইন পড়ে ফেলছেন। তবে বই কিনে বাড়ি ফিরছেন, এমন পাঠক একটু কম। কেন? জানতে বেঙ্গল বুকসের সামনে কথা হলো দুই বন্ধু সুমন ও রিয়াদের সঙ্গে। উত্তরে সুমন বললেন, মেলা তো এক মাস ধরে চলবে। তাই এখন কোন্ বইগুলো নেয়ার মতো দেখে যাচ্ছি। পরে ধীরে ধীরে কিনব।
ধীরে ধীরে কেনার কারণ ব্যাখ্যা করে রিয়াদ বললেন, একসঙ্গে কিনে ফেললে মেলার প্রতি আকর্ষণ কমে যায়। তাছাড়া শেষের দিকে বই কেনার একটা ঝোঁক উঠে মাথায়। তখন সবাই কেনে। দেখেও কেনার ইচ্ছে হয়।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর পরিদর্শন ॥ সন্ধ্যার পর মেলায় এসেছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। তিনি বাংলা একাডেমির কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশ ঘুরে দেখেন। বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন ও 
প্রকাশকদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন তিনি। প্রকাশকরা নিজ নিজ জায়গা থেকে সমস্যার কথা তুলে ধরেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেন প্রতিমন্ত্রী।
১১৩ নতুন বই ॥ মেলা শুরুর পর থেকে প্রতিদিনই আসছে নতুন বই। চতুর্থ দিনে বাংলা একাডেমির তথ্যকেন্দ্রে জমা পড়া বইয়ের সংখ্যা ছিল ১১৩টি।
আলোচনা অনুষ্ঠান ॥ বিকেলে বইমেলার মূলমঞ্চে ছিল ড. আবকবর আলি খান সম্পর্কে। ‘স্মরণ : ড. আকবর আলি খান’ শীর্ষক আলোচনায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আমিনুল ইসলাম ভুইয়া। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ফারুক মঈনউদ্দীন, মো. মোফাকখারুল ইকবাল এবং কামরুল হাসান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মোহাম্মদ সাদিক।
প্রাবন্ধিক বলেন, ড. আকবর আলি খান প্রশাসনের বহু পদে সাফল্যের সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করেছেন। মুজিবনগর সরকারে তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ছিলেন; পাকিস্তান সরকার তার বিরুদ্ধে জেলদণ্ডও ঘোষণা করেছিল। বহুকাল তিনি সরকারি প্রশাসনিক কর্মে ছিলেন। তা সত্ত্বেও আকবর আলি খানের মূল পরিচয় তার পাণ্ডিত্যপূর্ণ লেখালেখিতে ছড়িয়ে আছে। অর্থনীতি ও ইতিহাস ছাড়াও নৃবিজ্ঞান ও সাহিত্য-সমালোচনা ক্ষেত্রেও তিনি তার প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন।
লেখক বলছি ॥ মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে গড়া হয়েছে ‘লেখক বলছি’ মঞ্চ। প্রতিদিন এখানে কথা বলছেন লেখক কবিওরা। শনিবার নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন ফারুক হোসেন, আবদুল বাছির, ইসহাক খান এবং আফরোজা সোমা।
সাংস্কৃতিক আয়োজন ॥ বাংলা একাডেমির মূল মঞ্চে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি অসীম সাহা, অঞ্জনা সাহা এবং ফরিদ কবির। আবৃত্তি পরিবেশন করেন মো. রফিকুল ইসলাম, অলোক কুমার বসু এবং মিজানুর রহমান সজল। সংগীত পরিবেশন করে ‘বহ্নিশিখা’। একক সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী দিল আফরোজ রেবা, চন্দনা মজুমদার, আব্দুল লতিফ শাহ।

×