ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বাবা মায়ের হাত ধরে মেলায় এলো শিশুরাও

মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ২৩:৫১, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বাবা মায়ের হাত ধরে মেলায় এলো শিশুরাও

অমর একুশে বইমেলার প্রথম শিশু প্রহরে পছন্দের বই হাতে শিশুরা

বাবা মায়ের হাত ধরে শিশুরা মেলায় আসছে- অনিন্দ্যসুন্দর সেই দৃশ্যটা দেখা গেল শুক্রবার। এদিন ছিল শিশুপ্রহর। অর্থাৎ, শিশুদের জন্য আলাদা সময়। সময়টা শুরু হয়েছিল বেলা ১১টায়। অন্যান্য দিন এমন সময় স্কুলে থাকে বাচ্চারা। ইউনিফর্ম পরে ক্লাসে জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকতে বাধ্য হয়। ছুটির দিন হওয়ায় ধরা বাঁধা নিয়ম থেকে মুক্তি মিলেছিল তাদের। মেলায় এসে তাই নিজেদের মতো করে সময় কাটিয়েছে। প্রবেশদ্বার খুলে দেওয়ার পর থেকেই বাবা-মা ও অভিভাবকের সঙ্গে মেলায় প্রবেশ করতে দেখা যায় তাদের। ক্রমে বাড়তে থাকে উপস্থিতি। ছুটির দিনে জমে ওঠে মেলা। সচেতন বাবা মায়েরা নিজের সন্তানকে বইয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে নিয়ে এসেছিলেন। এই বাবা মায়েদের ধন্যবাদ জানাতে হবে।  
এবার বাংলা একাডেমির উল্টো পাশের গেট দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করলেই শিশু চত্বর। চত্বরে ছোটদের উপযোগী বইয়ের বড় সংগ্রহ। যারা শুধু ক্ষুদে পাঠকদের উপযোগী বই প্রকাশ করেন তারাই এখানে স্টল সাজিয়েছেন। শৈশব, চিলড্রেনস বুক, শিশু প্রকাশসহ বেশ কিছু স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে বই দেখেছে বাচ্চারা। ছবি সমৃদ্ধ গল্পের বই তাদের বেশি পছন্দ বলে মনে হলো।
সাত বছরের মেয়ে ইরিনাকে নিয়ে মেলায় এসেছিলেন মিজবাহ উদ্দীন। কথা প্রসঙ্গে তিনি বললেন, বাচ্চা তো ছুটছে শুধু। বই একটা দেখছে, দেখা শেষ না করেই অন্য আরেকটিতে হাতে নিচ্ছে। কখনো কখনো এক স্টলের বই অন্য স্টলে রেখে চলে যাচ্ছে সামনে। তবে বেশি আগ্রহ নিয়ে দেখছে ছবির বইগুলো। ছবির সঙ্গে গল্পটা মিলিয়ে নেওয়ারও চেষ্টা করছে।  
শোভা নামের এক শিশুর সঙ্গেও কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। সে আবার নানা রকম ভূতের বই সংগ্রহ করেছে। ভূতদের নাম ধামও প্রায় মুখস্থের মতো বলে ফেলল! তো এভাবেই বেলা ১টা পর্যন্ত চলে শিশু প্রহর।
মেলায় ড. জাফর ইকবাল ॥ বিকেলের দিকে মেলায় প্রবেশ করেন জনপ্রিয় লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। শিশু কিশোর এবং টিনেজ পাঠকের কাছে তিনি ভীষণ জনপ্রিয়। প্রতিবারের মতো এবারও মেলায় প্রবেশ করতেই প্রিয় এই লেখককে ঘিরে ধরেন অটোগ্রাফ শিকারীরা। একটানা অটোগ্রাফ দিতে দেখা যায় লেখককে। নিজের লেখা নতুন বইয়ের অটোগ্রাফ দিচ্ছিলেন তিনি। কখনো বসে, কখনোবা হাঁটতে হাঁটতে বইয়ে নিজের সই করছিলেন। এরই এক ফাঁকে জনকণ্ঠের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। ড. জাফর ইকবাল বলেন, অনেক মানুষ আমাকে ঘিরে থাকলেও আমি ঠিক  বুঝি যে, আগের তুলনায় পাঠাভ্যাস কমেছে। সবাই এখন  মোবাইল ফোনে ব্যস্ত। গোটা পৃথিবীতেই বই পড়া কমছে। এটা বিপজ্জনক।
নিজের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন,  আমি এক সময় শত শত বইয়ে অটোগ্রাফ দিয়েছি। এখন অটোগ্রাফের তুলনায় ছবি তোলা হয় বেশি। এ অবস্থায় প্রজন্মকে বইয়ে ফেরার জোর আহ্বান জানান তিনি।
ছুটির দিনে বইমেলায় দর্শনার্থীদের ভিড় ॥ ছুটির দিনে জমে উঠেছে বইমেলা। বিকেল থেকে মেলায় আসতে থাকেন বড়রা। ঠিক বড়রা বলা যাবে না, বিভিন্ন বয়সী মানুষ ভিড় করতে থাকেন মেলায়। তাতেই সরব হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ। বিকেল ও সন্ধ্যার দিকে বই দেখার পাশাপাশি অনেকই সংগ্রহ করেছেন। জনপ্রিয় লেখকদের বইয়ের স্টলে প্যাভিলিয়নে ভিড় করতে দেখা গেছে তরুণ তরুণীদের। সিরিয়াস বইয়ের ব্যাপারেও আগ্রহ কম ছিল না। এ ধরনের বই খুঁজতে বাংলা একাডেমি, মাওলা ব্রাদার্স, ইউপিএল, আগামী, বাতিঘর, কথাপ্রকাশের প্যাভিলিয়নে ভিড় করেছিলেন অনেকে। এসবের বাইরে চলেছে গল্প আড্ডা। খুব ভিড় নয়, আবার ক্রেতাশূন্য নয়। ফলে প্রথম ছুটির দিনটি ভালেই গেছে বলা যায়।  
আলোচনা অনুষ্ঠান ॥ বিকেলে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ : আবুল মাল আবদুল মুহিত’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কুতুব আজাদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন, জালাল ফিরোজ এবং এম আবদুল আলীম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নূহ-উল আলম লেনিন।
এ সময় প্রাবন্ধিক বলেন, আবুল মাল আবদুল মুহিত লেখক-পাঠক-ভাবুক-বিশ্লেষক-গবেষক-অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিক এক বর্ণিল ও বিচিত্র প্রতিভা। ধর্মনিরপেক্ষতা, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ ছিল তার আজীবন চলার পাথেয়। তার বিপুল গ্রন্থরাজি, পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত নানা প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও গবেষণাপত্র দেশব্যাপী পাঠককুলের সঙ্গে তাকে এক মেলবন্ধনে আবদ্ধ করে। সবকিছু ছাপিয়ে তিনি একজন সংস্কৃতিবান ও রুচিবান আত্মনিবেদিত দেশকর্মী। তার নির্মোহ মূল্যায়ন প্রয়োজন।
এদিকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি তারিক সুজাত, কুমার চক্রবর্তী এবং সুপ্রিয়া কুন্ডু। আবৃত্তি পরিবেশন করেন রেজিনা ওয়ালী, ঝর্ণা সরকার এবং আহসানউল্লাহ তমাল। নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যসংগঠন বাফা। সংগীত পরিবেশন করেন সাজেদ আকবর, সালমা আকবর, শাহনাজ নাসরিন ইলা, মো. হারুন অর রশীদ এবং মুহা. আব্দুর রশীদ।

 

×