ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সময়ের কথা বলে কবিতা উৎসব

ভাঙনের ওপরে নির্মাণের জন্য এগিয়ে আসি

জনকণ্ঠ ফিচার

প্রকাশিত: ২৩:৪৫, ৩১ জানুয়ারি ২০২৩

ভাঙনের ওপরে নির্মাণের জন্য এগিয়ে আসি

প্রথম জাতীয় কবিতা উৎসবের মঞ্চে কবিতা পড়েন কবি সুফিয়া কামাল

১৯৮৭ সালের কথা। রাষ্ট্রক্ষমতায় তখন স্বৈরাচার এরশাদ। সামরিক শাসকের বুটের তলায় পিষ্ট হচ্ছে গণতন্ত্র। বাকস্বাধীনতা বলতে কিছু নেই। যে কবিতা সত্যের, সুন্দরের, সে কবিতাও গিলে খাওয়ার জন্য হা করে আছে খোদ রাষ্ট্র! পুষ্য কবিরা মাঠে। ঠিক তখন প্রতিবাদ-প্রতিরোধের দৃঢ় প্রত্যয়ে শুরু হলো জাতীয় কবিতা উৎসব। সৈয়দ শামসুল হকের ভাষায় : ‘তখন আমাদের কবিদের কাঁধে ইতিহাস দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়। আমরা ভাঙনের ওপরে নির্মাণের জন্য এগিয়ে আসি। শুরু হয় জাতীয় কবিতা উৎসব।’ 
প্রথম আয়োজনটিই স্বৈরাচারের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল।

সুফিয়া কামাল, শামসুর রাহমান, নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহা থেকে শুরু করে দেশের সব বরেণ্য কবিরা এক মঞ্চে পাশাপাশি বসেছিলেন। কবিতার শক্তি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলকে নতুন গতি দিয়েছিল। সেইসঙ্গে এগিয়ে এসেছিলেন শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীরা। কামরুল হাসান মঞ্চে বসেই এঁকেছিলেন ‘বিশ্ববেহায়া।’ সব মিলিয়ে বিপুল আলোড়ন তুলতে সক্ষম হয়েছিল প্রথম জাতীয় কবিতা উৎসব। তারপর থেকে প্রায় নিয়মিতভাবে উৎসবের আয়োজন করা হয়ে আসছে। জাতীয় কবিতা পরিষদ প্রতিবছর ১ ও ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় কবিতা উৎসবের আয়োজন করে থাকে। 
তবে করোনাকালে বড় বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল। মহামারির কারণে মাঝে দুই বছর উৎসব হয়নি। এবার ঠিক ফিরেছে। আজ ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ^বিদ্যাালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি চত্বরে ৩৫তম উৎসবের উদ্বোধন করা হবে। এবারের উৎসবের স্লোগান ‘বাংলার স্বাধীনতা আমার কবিতা’। দুই দিনব্যাপী উৎসবে যোগ দিচ্ছেন সারাদেশ থেকে আসা কবিরা। বিদেশ থেকেও আসছেন নানা ভাষার কবি। কেউ স্বরচিত কবিতা পড়বেন। কেউ আবৃত্তি করবেন প্রিয় কবির কবিতা থেকে। কবিতার ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ হবে। চলবে সেমিনারও। উৎসবে খ্যাতির শীর্ষে থাকা কবিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তেমনি প্রতিশ্রুতিশীল নবীনদের বরণ করে নেওয়া হবে। নতুন দিনের নতুন কবিরা নতুন স্বপ্নময় কবিতা নিয়ে মঞ্চে থাকবেন বলে আশা করছে পরিষদ। 
পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কবি তারিক সুজাত বলছেন, ইতোমধ্যে উৎসবে অংশগ্রহণের জন্য সারাদেশের ৩০০ কবি নিবন্ধন করেছেন। ভারত, ভুটান ও নেপাল থেকে এসেছেন একদল কবি। দিল্লি থেকে এসেছেন অরুণ কমল। মুম্বাই থেকে মৃদুল দাশগুপ্ত, বিথী চট্টোপাধ্যায়, কাজল চক্রবতৃী, সুরঙ্গমা ভট্টাচার্য ও অনুভব তুলাসি। আগরতলা থেকে এসেছেন রাতুল দেব বর্মণ। কলকাতা থেকে এসেছেন আবৃত্তিশিল্পী সৌমিত্র মিত্র। উৎসব আঙিনায় অংশগ্রহণকারী কবি ও শ্রোতাদের জন্য থাকবে ফ্রি ওয়াইফাই জোন। এর মাধ্যমে দেশ-বিদেশের যে কেউ যুক্ত থাকতে পারবেন উৎসবের সঙ্গে।

পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কবি তারিক সুজাত এ পর্যায়ে উৎসবটিকে আর শুধু জাতীয় নয়, আন্তর্জাতিক বলছেন। তার ভাষায়, ঢাকার কবিরা কবিতা উৎসবের মাধ্যমে স্বৈরতন্ত্র, উগ্রবাদ মৌলবাদ, ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। একই লড়াইয়ে শুরু থেকেই ছিলেন বিদেশী কবিরা। তারাও তাদের অবস্থান থেকে লড়াই-সংগ্রামের কথা বলেছেন। কবিতায় তা প্রকাশ করেছেন। এখনো সেই পথচলা অব্যাহত রয়েছে। ফলে উৎসবটি একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক চেহারা পেয়েছে বলে মত দেন তারিক সুজাত। 
আজ সকালে উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে ভারত, ভুটান ও নেপালের কবিরা স্বরচিত কবিতাপাঠ ও মুক্ত আলোচনায় অংশ নেবেন। পরে হবে নিবন্ধিত কবিদের কবিতাপাঠ। এই পর্বে সভাপতিত্ব করবেন আসাদ মান্নান। অন্য ভাষার কবিদের কবিতাপাঠ থাকবে এর পর। আনোয়ারা সৈয়দ হক ও অসীম সাহার সভাপতিত্বে কবিতাপাঠের তৃতীয় ও চতুর্থ পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। রাতের আবৃত্তিপর্বে সভাপতিত্ব করবেন গোলাম কুদ্দুছ। উৎসবেরর দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার সকালে অনুষ্ঠিত হবে ‘বাাংলার স্বাধীনতা আমার কবিতা’ শীর্ষক সেমিনার। মুহাম্মদ নূরুল হুদার সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আনিসুল হক।

আলোচনায় অংশ নেবেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ, আখতার হুসেন, রফিকউল্লাহ খান ও আমিরুল ইসলাম। দুপুরে ‘পোয়েট্রি অ্যান্ড পিস শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পড়বেন ফখরুল আলম। আলোচনায় অংশ নেবেন রামেন্দু মুজমদার ও সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। ভারত, ভুটান ও নেপালের কবিরাও যোগ দেবেন এতে। আমন্ত্রিত অতিথি কবিদের নিয়ে কবিতাপাঠের নবম পর্বে সভাপতিত্ব করবেন নির্মলেন্দু গুণ। রাতে আমন্ত্রিত শিল্পীদের অংশগ্রহণে থাকবে ‘কবিতার গান’ শীর্ষক পরিবেশনা। এ পর্বে সভাপতিত্ব করবেন আসাদুজ্জামান নূর।     
সব মিলিয়ে জমজমাট উৎসব হবে। যাচ্ছেন তো উৎসবে?

×