ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আসছে ঋতুরাজ

বসন্ত, দাও আনি, ফুল জাগাবার বাণী...

মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ২৩:৩৫, ৩০ জানুয়ারি ২০২৩

বসন্ত, দাও আনি, ফুল জাগাবার বাণী...

রমনা পার্কে হলুদ গাঁদার বিপুল সমারোহ। জানান দিচ্ছে ঋতুরাজ বসন্ত আসছে

চারপাশে প্রচুর ফুল ফুটে আছে। রঙিন ফুলে চমৎকার ডালা সাজিয়ে নিয়েছে প্রকৃতি। না, সাধারণ সময়ের মতো নয়। বরং দারুণ এক উৎসবের বার্তা দিচ্ছে। হ্যাঁ, আর মাত্র ক’দিন পর বাঙালির বসন্ত। ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করে নেয়ার প্রস্তুতি চলছে সর্বত্রই। কবিগুরুর ভাষায় : ‘আজি দখিন-দুয়ার খোলা-/এসো হে, এসো হে, এসো হে আমার বসন্ত এসো...।’ আসছে বসন্ত।  
ষড়ঋতুর বাংলাদেশে ফাল্গুন-চৈত্র দুই মাস বসন্তের কাল। সে হিসেবে আগামী ১ ফাল্গুন থেকে প্রিয় ঋতুর শুভ সূচনা হবে। তারও আগে প্রকৃতিজুড়ে পরিবর্তনের হাওয়া। বিবর্ণ রূপ ঝেড়ে ফেলে জেগে উঠছে প্রকৃতি। বৃক্ষে এখন নবীন পাতা। কচি কিশলয়। তবে বসন্তের রং রূপ মূলত প্রকাশিত হয় ফুলে। ‘বসন্ত, দাও আনি,/ফুল জাগাবার বাণী- তোমার আশায় পাতায় পাতায় চলিতেছে কানাকানি।’ সেই কানাকানির মুহূর্তটাই এখন চলছে। 
সারাদেশের মতো রাজধানী শহরেও একটু একটু করে দেখা যাচ্ছে রক্তপলাশ। রমনা পার্ক, হাতিরঝিল, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারÑ কোথায় যাবেন? সবখানেই এই ফুল। আপনাকে ঠিক মনে করিয়ে দেবে, ‘বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।’ একই সময় ফোটার অপেক্ষায় শিমুল। গোলাপ, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা গ্ল্যাডিওলাসও সৌন্দর্য বিলিয়ে চলেছে। ফুলের রাজ্যে আগেভাগে ভ্রমণ করে আসতে চান? তাহলে সোজা চলে যান রমনা পার্কে। সারা বছরই এখানে প্রাণ প্রকৃতির অপরূপ খেলা চলে। আর এখন বর্ণিল উৎসবের হাতছানি।

এত ফুল ফুটে আছে যে, দেখে আপ্লুত না হয়ে পারবেন না। নতুন করে তৈরি করা হয়েছে একাধিক গোলাপ বাগান। বাগান ভর্তি হয়ে আছে ফুলে। লাল, হালকা গোলাপী, কালো, কালচে লাল, হলুদÑ কোন রং চাই? সবই আছে দৃষ্টির সীমানায়। ছেঁড়া যাবে না, সৌন্দর্য উপভোগ করুন। চন্দ্রমল্লিকা ডালিয়া গ্ল্যাডিওলাস ইত্যাদি ফুল খুঁজে পাবেন আলাদা আলাদা বাগানে। বসন্তের মূল রং ধারণ করে গাঁদা। হয়তো তাই গাঁদা ফুলে সেজেছে রমনার বিশাল এলাকা। টেনিস কোর্ট সংলগ্ন রাস্তা ধরে হাঁটলে বিস্ময় নিয়ে তাকাতে হবে আপনাকে।

কার্পেট যেভাবে বিছানো হয়, অনেকটা সেভাবে কয়েক সারিতে গাঁদা ফুল লাগানো হয়েছে। একসঙ্গে প্রায় সব গাছে ফুল ফুটে আছে। কাছ থেকে দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। গোটা পার্ক ঘুরে বেড়ালে আরও অনেক ফুল দেখা যাবে। দেখতে দেখতে মন ঠিকই গুন গুন করে উঠবে : ‘আহা, আজি এ বসন্তে এত ফুল ফুটে,/এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়...।’ 
পাখিরা, বিশেষত বসন্তের কোকিল যথারীতি গাইতে শুরু করেছে। লতা মুঙ্গেশকরকেও সবাই কোকিল বলে জানেন, কোকিলকণ্ঠী শিল্পী গেয়েছিলেন : ‘ও পলাশ, ও শিমুল, কেন এ মন মোর রাঙালে?’ বনের রং ক্রমে মনে এসে লাগছে। নাকে আসছে মিষ্টি ঘ্রাণ। ভাটি বাংলার লোক সাধক শাহ আবদুল করিম যেমনটি গেয়েছিলে, বসন্ত বাতাসে সই গো/বসন্ত বাতাসে/বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে...। আসতে শুরু করেছে এখনই।   
প্রতিবারের মতো এবারও হবে বসন্ত উৎসব। পহেলা ফাল্গুন চারুকলার বকুলতলায় বসন্ত উৎসবের আয়োজন করা হবে। করোনা বিদায় নেওয়ায় এবার বসন্তের প্রথম দিনটি অনেক বেশি উৎসবমুখর হয়ে উঠবে বলেই আশা করা হচ্ছে। সকালে শুরু হয়ে নাগরিক এ উৎসব চলবে বিকেল পর্যন্ত। একই দিন শিল্পকলা একাডেমিতে আরেকটি উৎসব আয়োজনের কথা রয়েছে। টিএসসিসহ আরও কিছু জায়গায় থাকবে অভিন্ন আয়োজন। এদিকে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে অমর একুশে বইমেলা।

মেলায়ও হাওয়া বইবে বসন্তের।  উৎসবপ্রেমী বাঙালি এদিন বাসন্তী রঙে সাজবে। দেশীয় বাটিক বুটিক হাউসগুলো নিচ্ছে জোর প্রস্তুতি। বসন্তের প্রকৃতি ও হৃদয়াবেগ তুলে ধরে এমন নানা থিম নিয়ে কাজ করছে তারা। আগে যেমনটি বলা হলো, কিছুদিনের অপেক্ষা। এর পরই উৎসব। আপনি প্রস্তুত তো?

×