ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চল মন বনভোজনে

রেজা ফারুক

প্রকাশিত: ০১:০৬, ৩০ জানুয়ারি ২০২৩

চল মন বনভোজনে

.

দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ছত্রে যে জীবন বোধের চিত্র অঙ্কিত হয়। তার মর্মেই নিহিত থাকে ভবিষ্যতের স্বপ্নসাধ। সময় পেরিয়ে এসে যখন মানুষ পিছন ফিরে তাকায়। তখন খুব নিবিড়ভাবে অতীতের আবছা ছবির  ম্লন পাতাগুলো চোখের সামনে আপনা আপনি ভেসে ওঠে মনের গহিনে। বিশেষ করে ছাত্রজীবনের গল্পটা অনেক বেশি মানুষকে আবেগতাড়িত করে। মধুরতম সুখের স্মৃতিগুলো আনন্দের সংবাদে এমন সুন্দর আর নিপুণভাবে লেখা হয়ে যায়, যা থেকে অফুরন্ত সুখানুভূতির নির্যাস সিঞ্চিত করে মানুষ আগামী প্রাণস্পন্দনকে জাগিয়ে রাখে।
ছাত্রজীবনের আনন্দঘন সময়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় ছিল ‘পিকনিক’। তুমুল আনন্দ বিজড়িত অবিস্মরণীয় মুহূর্তের এক মিলনমেলা। এ পিকনিক কখনো বনভোজন, কখনো চড়ুইভাতি হিসেবেও এক আলাদা আবেদনের উড়নিকে দেয় উড়িয়ে। মনকে প্রফুল্ল করে তোলার এই যে ছাত্র জীবনের গভীর অনুষঙ্গ। এই অনুষঙ্গকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে রেল ইঞ্জিনের মতো বুকের ভিতর হুইসেল বাজার মায়াবি পিকনিকের সেই ফেলে আসা দিনের কথা।
তবে পিকনিকেও রয়েছে রকমফের। স্কুলজীবনে পিকনিকে যাওয়ার জন্য আগেই ঘোষণা আসতো ক্লাসরুমে। নির্দিষ্ট পরিমাণে চাঁদা দিতে হতো সকল ছাত্র-ছাত্রীকে। পিকনিক স্পটের দূরত্ব বুঝে চাঁদার হার কত হবে তা নির্ধারণ করা হতো। তারপর নির্দিষ্ট দিনে দলবেঁধে বাসে করে পিকনিকে বা বনভোজনের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যেত বাসের বহর। সঙ্গে রান্নার জন্য হাঁড়ি, পাতিল, ডেক, লাকড়ি, ইটসহ থাকতো রান্নার সকল উপকরণ। বাবুর্চি, খানসামা, সহকারীও থাকতো পিকনিকের দলে। বাসের সম্মুখে ব্যানার লিখে সেঁটে দেওয়া হতো। ব্যানারে স্ব-স্ব বিদ্যাপিঠের নাম লেখা থাকতো যেন চলতি পথে সবার দৃষ্টি কাড়া যায়। আরও লেখা হতো পিকনিক পার্টি। ’৭০, ৮০ এবং ৯০-এর দশকে বাসে মাইক বাজিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা হৈ হল্লা করতে করতে পিকনিক স্পটের উদ্দেশ্যে ছুটে যেত বাস। সেসব দিনের স্মৃতি এখনো চোখের সামনে ভেসে উঠলে অনেকেই আনন্দিত আর উৎফুল্ল হয়ে ওঠেন। পিকনিকে যাওয়ার মুহূর্তটা যে কি আনন্দের সে কথা বুঝিয়ে বলা খুবই কঠিন।

বাসে উঠেই পাওয়া যেত নাস্তা হিসেবে পরোটা-ভাজি, হালুয়া কিংবা পাউরুটি, ডিম, কমলা, কোলড্রিংকস। আরেক ধরনের চড়ুইভাতি হতো- এলাকার ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা একত্র হয়ে ঘর থেকে কেউ চাল, কেউ ডাল, লবন-তেল, মশলা ইত্যাদি সমস্ত উপকরণ এনে মাটি বা ইট দিয়ে চুলা বানিয়ে উঠোনে রান্না করে কখনো উঠোনে, কখনো ঘরে বসে খেত। এখন সেই বনভোজন উদযাপনের রূপটা পাল্টে গেছে। ইন্টারনেটের যুগে এসে পিকনিক পার্টির আনন্দ এবং উদ্দীপনার দিকটি একই রকম থাকলেও তাতে এসেছে ভিন্নতা। যুগের পরিবর্তে এখন প্রতিবেশির সঙ্গে সেই সম্পর্কও নেই। বাসে উঠে ছাত্র-ছাত্রীরা এখন আর মাইকের গানের সেই অবগাহনে সিক্ত না হয়ে, যার যার মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আনন্দটা ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। কানে এয়ারফোনে নিমগ্ন হয়ে গান শোনায় মত্ত হয়ে সময়কে অতিক্রম করে একসময় পিকনিক স্পটে এসে গাড়ি থেকে নেমে খন্ড খন্ড দলে বিভক্ত হয়ে ঘুরতে বেরিয়ে পড়ে। দৃশ্যের গভীরে, বনের অভ্যন্তরে হারিয়ে যাওয়াই যেনো বনভোজনের মজাটা রঙিয়ে নেয়া। তারপর ঘুরে ঘুরে মূল জায়গায় ফেরা। একদিকে রান্নার আয়োজন উনুন বানিয়ে। আর একদিকে হৈ হুল্লোড়। সে এক অনাস্বাদিত আনন্দের মুহূর্ত। পিকনিক মানেই এক অন্যরকম মজা। অন্যরকম আনন্দ উদযাপন। পিকনিকের প্রসঙ্গ এলেই যার যার অবস্থান ভেদে স্থান নির্ধারণ করা হয়। বাংলাদেশের মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে মুগ্ধ সবুজ-শ্যামল-স্নিগ্ধ প্রতিবেশই মূলত পিকনিক স্পট হিসেবে সবার পছন্দ। আর সময়টা অবশ্যই শীতকাল। সাধারণত শীতেই হয় এই পিকনিক উদযাপন তথা বনভোজন।

 

×