ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজধানী ছাড়া সব মহানগর জেলায় বিক্ষোভ বৃহস্পতিবার

জামায়াতের সঙ্গেও সংলাপে বসবে বিএনপি ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ২৩:২৬, ২৫ মে ২০২২

জামায়াতের সঙ্গেও সংলাপে বসবে বিএনপি ॥ ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ২০ দলীয় জোটের শরিক দল জামায়াতের সঙ্গেও সংলাপ করবে বিএনপি। মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা জানান। তিনি জানান, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের রূপরেখা প্রণয়নে আমরা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলব। তাই জামায়াতের সঙ্গে কথা না বললে কেমন করে হবে। অবশ্যই আমরা জামায়াতের সঙ্গে কথা বলব। সবার সঙ্গে আলোচনার পর আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে চূড়ান্ত আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করব। ফখরুল জানান, ২৬ মে বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকা ছাড়া সারাদেশের সকল মহানগর ও জেলা সদরে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলো যৌথভাবে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচী পালন করবে। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহম্মদ ইউনূসসহ দেশে সিনিয়র সিটিজেনদের সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসম্মানজনক বক্তব্যের প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করা হবে বলে জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ২০ দলীয় জোট থাকবে কিনা জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, ২০ দলীয় জোট তো আমরা এখন পর্যন্ত বিলুপ্ত করিনি। ভবিষ্যতে এই জোটের কি হবে সেটা এই আলোচনার মধ্য দিয়ে ফাইনালাইজড করব। তিনি বলেন, সোমবার অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরুর সিদ্ধান্ত হয়। মঙ্গলবার প্রথম আলোচনা শুরু করার সিদ্ধান্ত হয় নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে তোপখানা রোড়ের কার্যালয়ে । সংলাপের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ফখরুল জানান, এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার। এ জন্য আন্দোলন করতে হবে। এই আন্দোলন করতে ঐক্য সৃষ্টির লক্ষ্যে আমরা আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছি। সরকার মানুষের সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়েছে, ভোটের অধিকারও কেড়ে নিয়েছে। আজকে দেশে অর্থনীতি ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। দেশের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে ফেলেছে সরকার। সেই প্রতিষ্ঠানগুলোতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করাসহ সার্বিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাই হচ্ছে আমাদের মূল লক্ষ্য। অপর এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল জানান, আমাদের মূল দাবিগুলো হচ্ছে- বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দীকে মুক্তি দিতে হবে, বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, এ সরকার পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে, সংসদ বাতিল করতে হবে এবং তারপর পুনর্গঠিত নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে। সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জাতীয় সংসদ গঠন হবে, সরকার গঠন হবে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে তাদের কাছ থেকে পাওয়া অন্যান্য দাবি নিয়ে একক দাবিনামা তৈরি করা হবে। একক দাবি নামার প্রেক্ষিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন শুরু করব। তবে এক জোট হবে আমরা তা বলছি না, অন্য কোন কিছুই বলছি না। আলোচনা করার মধ্য দিয়ে আন্দোলনের ফরমেট বা ফ্রেম নির্ধারিত হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র দলের নেতাকর্মীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই হামলার সঙ্গে ছাত্রলীগ জড়িত। তাই অবিলম্বে এই সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি। দলের নেতাকর্মীদের বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বন্যা দুর্গত এলাকায় সরকারী ত্রাণ তৎপরতা একেবারেই অপ্রতুল। যখন বন্যা দুর্গত মানুষ ত্রাণের জন্য আহাজারি করছে সেই সময়ে একজন মন্ত্রীর ত্রাণ বিতরণের সময় সাহায্য প্রার্থী হাজার মানুষের ওপর পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে। আমরা এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তিনি বলেন, সিলেটের বন্যা উপদ্রুত এলাকায় বিএনপির পক্ষ থেকে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং ত্রাণ কার্য পরিচালনার জন্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বৃহত্তর সিলেট জেলার বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের সকল নেতাকর্মীদের বন্যা দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব। রাজপথের আন্দোলনে কোন ভয় নেই- গয়েশ্বর ॥ দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, রাজপথের আন্দোলনে কোন ভয় নেই। মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর মুক্তির দাবিতে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। আসলাম চৌধুরী মুক্তি পরিষদ এ প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে। গয়েশ্বর বলেন, একাত্তরের দুশমনদের যেমন বিচার হয়েছে, দেশের বর্তমান দুশমনদেরও বিচার হবে। মানবতাবিরোধী অপরাধে যে অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হয়েছে, এটা চালু রাখতে হবে, এই ট্রাইব্যুনালেই দেশের বর্তমান দুশমনদের বিচার হবে। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ দলের নেতাকর্মীদের মুক্তির জন্য রাজপথে নামতে হবে জানিয়ে গয়েশ্বর রায় বলেন, তাদের মুক্তির জন্য যদি আমরা হাশরের ময়দান পর্যন্ত অপেক্ষা করি, তাহলে চলবে না। বিএনপি নেতাকর্মীদের আন্দোলনের মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করতে হবে। গোটা জাতিকেই বন্দীদশা থেকে মুক্ত করতে হবে।
×