ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল

দেশের অর্থনীতিতে অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি হয়েছে

প্রকাশিত: ২৩:১৭, ১৯ মে ২০২২

দেশের অর্থনীতিতে অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের অর্থনীতিতে এক ধরনের অস্থিতিশীল অবস্থা ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার বিকেলে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, গত ১৩-১৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে চাপে রয়েছে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি। ফখরুল বলেন, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সূচক পর্যালোচনা করলে বর্তমান অর্থনীতিতে অশনিসঙ্কেত দেখা যাচ্ছে। স্যাটেলাইট-১ প্রকল্পে তিনবছরে কোন আয় নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন. স্যাটেলাইট-১ তৈরি ও উৎক্ষেপণে বাংলাদেশের প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। গত ৪ বছরেও কোন অর্থ আয় করতে পারেনি। ফখরুল জানান, সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভসহ দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, রফতানি এবং রেমিটেন্স আয়ে ঘাটতির কারণে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে বড় ধরনের সমস্যা হচ্ছে। টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে অসহনীয় হয়ে উঠছে জিনিসপত্রের দাম। মনে হচ্ছে, আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও বেসামাল হয়ে উঠবে। ফখরুল বলেন, রিজার্ভ নিয়ে আত্মতুষ্টির কিছু নেই। এটি দ্রুত কমে আসছে। গত ৮ মাসে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ৪২ বিলিয়ন ডলারে নেমে গেছে। পরের ২ মাসে এটা আরও ৪ বিলিয়ন ডলার কমে যাবে। এভাবে যদি রফতানির তুলনায় আমদানি বাড়তে থাকে এবং সেটা যদি রেমিটেন্স দিয়ে পূরণ করা না যায় তাহলে অতি দ্রুত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ শেষ হয়ে যাবে। রিজার্ভ শেষের দিকে এলে কি ভয়াবহ পরিণতি হয় শ্রীলঙ্কার চলমান পরিস্থিতি তার উদাহরণ। ফখরুল বলেন, বাংলাদেশে এই মুহূর্তে যে রিজার্ভ রয়েছে, তা দিয়ে মাত্র পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। আমদানি ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৪৪ শতাংশ। আমদানি যে হারে বেড়েছে, রফতানি সে হারে বাড়েনি। আবার প্রবাসী আয়ও কমে গেছে। ফলে প্রতি মাসে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। এ বছরই আমদানি ব্যয় প্রায় ৮২ থেকে ৮৫ বিলিয়ন ডলারে চলে যাবে, কিন্তু রফতানি হবে প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার। এই ৩২-৩৫ বিলিয়ন ডলারের যে বাণিজ্য ঘাটতি সেটা রেমিটেন্স দিয়ে পূরণ করা সম্ভব হবে না। কাজেই এ বছরই ১০ বিলিয়ন ডলারের একটা ঘাটতি সৃষ্টি হচ্ছে। যার ফলে লেনদেন ভারসাম্যের হিসাব বিপদের মুখে পড়বে। ফখরুল বলেন, টাকার মান ধরে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার ছাড়ার সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এতে ডলারের বিপরীতে টাকার মান ৭ থেকে ৮ টাকা কমে গেছে। ভবিষ্যতে টাকার মান আরও কমতে থাকবে। এক্ষেত্রে প্রতি মার্কিন ডলার ১০০ টাকার ওপরে চলে যেতে পারে। অবশ্য পত্রিকায় দেখলাম কার্ব মার্কেটে ইতোমধ্যেই প্রতি মার্কিন ডলার ১০৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার ১২ শতাংশ। আর রিজার্ভ বিপজ্জনক লেভেলে চলে আসার কারণে টাকার দামও কমছে। সেক্ষেত্রে অর্থনীতিতেও সব কিছুর দাম বেড়ে যাচ্ছে। ক্রেতা সাধারণের ত্রাহি অবস্থা। তার ওপর রয়েছে সরকার দলীয় সিন্ডিকেটের তা-ব। ইতোমধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বিশেষ করে পাম ও সয়াবিন তেলের দাম অনেক বেড়ে গেছে। বাংলাদেশে এর আগে এত দাম বাড়েনি। ভরা মৌসুমে চালের দাম যেখানে সবসময় স্বাভাবিক নিয়মে কমে যায় কিন্তু গত কয়েকদিনে তা অনেক বেড়ে গেছে। ফখরুল বলেন, মার্চে রফতানি আয় হয় ৪৭৬ কোটি ডলার, আর প্রবাসী আয় আসে মাত্র ১৮৬ কোটি ডলার। রফতানি ও প্রবাসী আয় মিলিয়ে মার্চে ৬৬২ কোটি ডলারের আয়ের বিপরীতে আমদানি দায় শোধ করতে হয় ৭১৪ কোটি ডলার। তাতে ঘাটতি দাঁড়ায় ৫২ কোটি ডলার। আমদানি খরচও অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। এ কারণে সাম্প্রতিক সময়ে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি শুরু করেছে সরকার। এখন পর্যন্ত বিক্রি করেছে ৫২০ কোটি ডলার, এতে রিজার্ভ কমে হয়েছে ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার। আমদানি খরচ এভাবে বাড়তে থাকলে রিজার্ভ আরও কমে যাবে। অনিয়ন্ত্রিত ও অস্বাভাবিক ব্যয়বহুল আমদানির সুযোগ নিয়ে ওভার ইনভয়েসিং এর মাধ্যমে বিপুল অর্থপাচার হচ্ছে বলে অনেকে মনে করেন। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের চাপ রয়েছে রিজার্ভের হিসাব সঠিক নিয়মে করার। এতে রিজার্ভ কমবে ৭০০ কোটি ডলারের বেশি। ফখরুল বলেন, আইএমএফের সুপারিশ মোতাবেক সঠিক নিয়মে রিজার্ভ হিসাব করলে বর্তমানে বাংলাদেশের রিজার্ভ দাঁড়ায় ৩৫ বিলিয়ন ডলার। তাই বাস্তবিকভাবে আই এম এফ প্রণীত নিয়মে রিজার্ভ হিসাব করা হলে বাংলাদেশের হাতে আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো বৈদেশিক মুদ্রা রয়েছে মাত্র সাড়ে তিন মাসের। যা একেবারে এলার্মিং। ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকার তাদের ব্যক্তিগত অর্থের ঝোলা ভর্র্তি করতে অনেকগুলো অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। মেগা প্রকল্প মানেই মেগা দুর্নীতি। ইতোমধ্যেই দেশের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদরা এসব প্রকল্পকে জনগণের জন্য ঋণের বোঝা ভারি করার শ্বেত-হস্তী প্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তারমধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত প্রকল্প, ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর ও পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প এবং চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী হয়ে কক্সবাজার ও ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প অন্যতম। রাশিয়ার কাছ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা খরচ করে মাত্র ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের জন্য রূপপুর প্রকল্পটি কার স্বার্থে বাস্তবায়ন হচ্ছে জনমনে প্রশ্ন জোরালো হয়েছে। অথচ ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আরও অনেক কম খরচে বিকল্প পন্থায় উৎপাদন করা যেত। ফখরুল বলেন, দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থ আত্মসাতকারী পি কে হালদার ভারতে গ্রেফতার হয়েছে। বিএনপি মনে করে সরকারের প্রত্যক্ষ মদদ, আশ্রয়-প্রশ্রয়ে পি কে হালদারের মতো অর্থ আত্মসাতকারীর সৃষ্টি হয়েছে। পি কে হালদারের ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকার মতো আর্থিক জালিয়াতি করে দেশ থেকে নির্বিঘেœ পলায়ন করা কিভাবে সম্ভব? আমাদের প্রশ্ন পি কে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করা হবে না কেন? আর তার সঙ্গে সম্পর্ক থাকা গডফাদার ও সহযোগীদের এখনও গ্রেফতার করা হচ্ছে না কেন? বর্তমান সরকারকে বিদায় না করে কিভাবে আরেকটি সরকার হবে?-গয়েশ্বর ॥ গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ জাফরউল্লাহ চৌধুরীর প্রস্তাবিত জাতীয় সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, বর্তমান সরকারকে বিদায় না করে কিভাবে আরেকটি সরকার হবে? আগে রাজপথে ঐক্যবদ্ধভাবে দুর্বার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বর্তমান সরকারের পতন ঘটাতে তারপর আরেকটি সরকারের কথা চিন্তা করতে হবে। বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমদের মুক্তির দাবিতে গণতান্ত্রিক যুবদল আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
×