ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ুদূষণের শীর্ষে ঢাকা, বাড়ছে ক্যান্সারের ঝুঁকি

প্রকাশিত: ২৩:২০, ২৫ জানুয়ারি ২০২২

বায়ুদূষণের শীর্ষে ঢাকা, বাড়ছে ক্যান্সারের ঝুঁকি

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ টানা চারদিন বিশ্বে বায়ুদূষণের তালিকায় শীর্ষে ছিল ঢাকা। যার ফলে ক্যান্সারসহ আরও অন্যান্য রোগের ঝুঁকি বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান যাচাই বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ‘আইকিউ এয়ার’ বলছে, ১৯ থেকে ২২ জানুয়ারি ঢাকায় বায়ুর মান সূচক ছিল গড়ে যথাক্রমে ২২৬, ২৩৩, ২৪৩ ও ২৫৮। বিশেষজ্ঞদের মতে এটা ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’।- খবর অনলাইনের বর্তমান বায়ুদূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর এমন প্রশ্নের জবাবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘বিগত কয়েক বছর ধরে ঢাকার বায়ুমান পৃথিবীর দূষিত জায়গার মধ্যে অন্যতম। এটা নিয়ে জাতীয়ভাবে তো বটেই, আন্তর্জাতিক সমাজের পক্ষ থেকেও নানাভাবে সতর্ক করা হয়েছে। বায়ুদূষণ হলে মানুষসহ সমস্ত প্রাণী, উদ্ভিদ ও জলজ প্রাণী অসুস্থ হয়ে পড়ে। মানুষের মধ্যে শ্বাস ও শ্বাসতন্ত্রের রোগ বেড়ে যায়। যেমন- ঠা-া, হাঁচি, কাশি ইত্যাদি। যাদের এ্যাজমা বা এ্যালার্জি আছে, সেগুলোও বেড়ে যায়। নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা বেড়ে যায়। দূষিত বায়ুর মধ্যে থাকলে মানুষের ফুসফুস ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়।’ এদিকে ২১ জানুয়ারি বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকায় বায়ুর মান সূচক ছিল ৩৭২। ওই সময় বায়ুতে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর সূক্ষ্ম বস্তুকণা ‘পিএম ২.৫’ প্রতি ঘনমিটারে ছিল ৩২২ মাইক্রোগ্রাম। বিশেষজ্ঞদের মতে যা ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’। এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়ুর মান সূচক শূন্য থেকে ৫০ পর্যন্ত ‘ভাল’ বা স্বাস্থ্যবান্ধব বলে গণ্য হয়। এর বেশি হলেই শুরু হয় ‘স্বাস্থ্যঝুঁকি’। সেই হিসেবে ঢাকাবাসী ভয়াবহ ‘রেড এলার্ট’-এর মধ্যে আছেন। বায়ুদূষণ যদি এভাবে চলতে থাকে তবে শ্বাসতন্ত্রের রোগ অনেক বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা, ক্যান্সারের মতো রোগীর সংখ্যাও বাড়তে থাকবে। অন্যদিকে, উদ্ভিদের সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দূষণের শুরুটা বায়ু থেকে হলেও শেষ হচ্ছে জনজীবন ও প্রকৃতি বিনষ্টের মধ্য দিয়ে। যা পুরো পৃথিবীর জন্যই মারাত্মক হুমকি। সম্প্রতি স্টাম্পফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুম-লীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকা শহরে প্রতিদিন প্রায় মাটি থেকে দুই হাজার টন ধুলাবালি আকাশে উড়ছে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। রাজধানীর বায়ুমান হঠাৎ এমন খারাপ কেন হলো- এ বিষয়ে জানতে চাইলে বায়ুদূষণ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘অনেক দিন বৃষ্টি নেই। বাতাস শুষ্ক। এ কারণে ধূলিকণা সহজে উড়তে পারছে। এছাড়া বায়ুদূষণের উৎস নিয়ন্ত্রণের কোন ব্যবস্থা আমাদের নেই। এসব কারণে দূষণের পরিমাণ বাড়ছে।’ তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরে প্রতিদিন প্রায় মাটি থেকে দুই হাজার টন ধুলাবালি আকাশে ওড়ে। এর সবই উড়ে চলে যায় না, কোথাও কোথাও এগুলো থেকে যায়। কুয়াশার সঙ্গে মিশে ধুলাবালি ভারি হয়ে নিচে নেমে আসে। এজন্যই আমরা ভরদুপুরেও ধোঁয়াশা দেখি।’ বায়ুদূষণ বাড়ার পেছনে দুটি কারণ রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। একটি হচ্ছে ‘উৎস’, আরেকটি হচ্ছে ‘কারণ’। ‘কারণগুলোর’ মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক কিছু বিষয় (আবহাওয়া ও জলবায়ু), নগর পরিকল্পনার ঘাটতি, আইনের দুর্বলতা বা সীমাবদ্ধতা, আইন প্রয়োগে সীমাবদ্ধতা, ভৌগোলিক কারণ এবং অধিক জনসংখ্যার ঘনত্ব। অন্যদিকে ‘উৎসগুলোর’ মধ্যে রয়েছে সমন্বয়হীনভাবে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, গাড়ির কালো ধোঁয়া, ব্ল্যাক কার্বন, কার্বন মনোক্সাইড, ইটের ভাঁটি ও শিল্প কারখানা, উন্মুক্তভাবে আবর্জনা পোড়ানো, বস্তি এলাকার বর্জ্য পোড়ানো এবং আন্তঃদেশীয় বায়ুদূষণ।
×