ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন

মাদকসেবীর সঙ্গে মাদকের বাজারও বাড়ছে

প্রকাশিত: ২৩:১৪, ২১ জানুয়ারি ২০২২

মাদকসেবীর সঙ্গে মাদকের বাজারও বাড়ছে

আজাদ সুলায়মান ॥ দেশে প্রকৃত মাদকাসক্তের সংখ্যা কত তার কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই সরকারের কোন সংস্থার কাছে। যদিও সারাদেশে ১৮ থেকে ৬০ বছরের মানুষের মধ্যে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৬০ লাখের বেশি। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ২০১৮ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী দেশে ৩৬ লাখের মতো মাদকাসক্ত নারী-পুরুষ রয়েছে। আার বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থার মতে- রাজধানীসহ সারাদেশে কমপক্ষে ৭৩ লাখ মাদকাসক্ত রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা বা পরিসংখ্যান নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর কিংবা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কাছে কোন সঠিক তথ্য নেই। কেউ বলছে, ৩৬ লাখ, কেউ ৬০ লাখ। আর মাদকাসক্তদের বিভিন্ন সূত্র বলছে- দেশের তরুণ প্রজন্মের এক চতুর্থাংশই কোন না কোন ধরনের নেশায় আসক্ত। এমনকি উচ্চ শিক্ষিত বেকার যুবকদের একটা বিপুল অংশ নিয়মিত ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে টেনশন থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করছে। মাদক চিকিৎসকদের মতে এটাও এক ধরনের মাদকাসক্তি। বিত্তবানদের একটা অংশ মদ না খেলেও নিয়মিত সিসা খায়। বস্তি কিংবা রাজপথে দেখা যায়- ছিন্নমূল শিশু কিশোররা জুতা তৈরির গাম যা ডান্ডি নামে পরিচিত- সেগুলো দিয়ে নিয়মিত নেশা করে। এটাও মাদকাসক্তের ক্যাটাগরিেেত পড়ে বলে জানিয়েছেন মাদক বিভাগের পরিদর্শক কামরুল ইসলাম। ঢাকা মেট্রোর উপপরিচালক রাশেদুজ্জামান বলেছেন, পরিসংখ্যান নিয়ে প্রকৃত তথ্য পাওয়া কঠিন। এজন্য সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন বা এনজিও অনেক সময় নিজেদের উদ্যোগে তথ্যাদি সংগ্রহ করে একটা পূর্বাভাস দেয়। আমাদেরও সেগুলোর ওপর নজরদারি করতে হয়। যেখানে যে ব্যবস্থা প্রয়োজন সেটাই করা হয়। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে সিআইডির ফরেনসিক ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের কমান্ড্যান্ট শাহ আলম তার একটি অনুসন্ধানে উল্লেখ করে বলেন, দিন দিনই বাড়ছে মাদকসেবীর সংখ্যা। মাদকসেবী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাদকের বাজারও বিস্তৃত হচ্ছে। শহর থেকে তা গ্রাম-গ্রামান্তরে ছড়িয়ে পড়ছে। ২০১০ সালে দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা ছিল ৪৬ লাখ। সেটা এখন দাঁড়িয়েছে ৬৬ লাখে। এর মধ্যে ১৫ বছরের বেশি বয়সের মাদকসেবী আছে ৬৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। এতে করে প্রতি ১৭ জনে একজন তরুণ মাদকাসক্ত। জাতিসংঘের মাদক নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ইউএনওডিসির তথ্যমতে, মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের প্রতি দশজনে একজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে। এই সত্য ধরে নিলে ৬৬ লাখে রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৬ লাখ ৬০ হাজার। কিন্তু চারটি সরকারী নিরাময় কেন্দ্র এবং ২০৯টি বেসরকারী নিরাময় কেন্দ্র মিলে চিকিৎসার সুবিধা আছে পাঁচ হাজারের মতো। বাকি মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা থাকছে চিকিৎসাসেবার বাইরে। দেশে এত বিপুল সংখ্যক রোগীর জন্য নেই প্রয়োজনীয় হাসপাতাল বা নিরাময় কেন্দ্র। এদের চিকিৎসার জন্য দেশের ৪৪ জেলায় অনুমোদনপ্রাপ্ত মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র আছে মোটে ৩৫১টি। এর মধ্যে শতাধিক ঢাকায়। অনুমোদনপ্রাপ্ত কেন্দ্রগুলোর মোট শয্যাসংখ্যা ৪ হাজার ৭২৮। এসব কেন্দ্রে সরকারী ১০০ মনোরোগ বিশেষজ্ঞসহ দেশে আছেন মাত্র ২৭০ জন চিকিৎসক। ২০ জেলায় অনুমোদনপ্রাপ্ত কোন নিরাময় কেন্দ্রই নেই। সরকারীভাবে যে চার কেন্দ্র রয়েছে সেগুলোর অবস্থাও তথৈবচ। এসব কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রক হিসেবে রয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র তেজগাঁওয়ে শয্যাসংখ্যা মোটে ১২৪। কেন্দ্রটিতে চীফ কনসালট্যান্টসহ ২৬টি চিকিৎসকের পদ থাকলেও রয়েছেন ৮ জন। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টের পদ ফাঁকা। এখানে মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা হৃদরোগসহ অন্য কোন রোগে আক্রান্ত কিনা, তা নির্ণয়ের জন্য এক্স-রে, ইসিজিসহ নানা পরীক্ষার দরকার হয়। কিন্তু এসব পরীক্ষার কোন ব্যবস্থা নেই সেখানে। কেন্দ্রটিতে জরুরী বিভাগও নেই। রোগী ইচ্ছে করলেই সহজে ভর্তিও হতে পারেনা। তদ্বির বা অন্য উপায়ে ভর্তি হতে হয়। এসব কেন্দ্রের শয্যা সংখ্যা বাড়ালেও সুবিধা তেমন বাড়েনি। জনবলের অভাবে কোন কেন্দ্রেই জরুরী বিভাগ চালু করা যায়নি। তিনটি কেন্দ্রের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা খুলনার। রাঁধুনির পদ না থাকায় এসব কেন্দ্রে রোগীর জন্য রান্নাও হচ্ছে না। খুলনা ও রাজশাহীর ২৫ শয্যার নিরাময় কেন্দ্র দুটি চলছে একজন চিকিৎসক দিয়ে। চট্টগ্রামের নিরাময় কেন্দ্রে আছেন দুজন চিকিৎসক। অনুমোদিত কেন্দ্রের বাইরেও রয়ে গেছে আরও বিপুল সংখ্যক কেন্দ্র। যা বৈধ সংখ্যার কয়েক গুণও হতে পারে। দেশে মাদক চিকিৎসার নামে নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে কি ধরনের অরাজকতা ও অনিয়ম চলে তার বড় উদাহরণ হয়ে আছে রাজধানীর আদাবরে মাইন্ড এইড নামের নিরাময় কেন্দ্র। ২০২০ সালের ৯ নবেম্বর এখানেই চিকিৎসা করতে এসে চিকিৎসকদের হাতে নির্মম নির্যাতনে প্রাণ হারান সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুল করিম। ওই ঘটনায় তোলপাড় চলে। এতে মাদক নিরাময় কেন্দ্রের নানা অনিয়ম দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসে। আনিসুল করিমের হত্যাকা-ের রেশ না কাটতেই মালিবাগে হলি লাইফ মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ২ মার্চ ইয়াসিন নামের এক যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু হয়। বাথরুমে গলায় গামছা দিয়ে আত্মহত্যা করেছে দাবি করা হলেও তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। ভয়াবহ চিত্র ॥ আদাবরে পুলিশ কর্মকর্তাকে চিকিৎসার নামে পিটিয়ে হত্যার পর বেশ তোলপাড় চলে। এ ঘটনার সূত্র ধরে রাজধানীতেই শতাধিক মাদক নিরাময় কেন্দ্রের সার্বিক চিকিৎসা পদ্ধতি ও হালচাল খতিয়ে দেখে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। তাতে মাত্র ১৯টির সেবার মান ছিল সন্তোষজনক। বাকিগুলো নির্ধারিত মানে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। এজন্য পরিদর্শন শেষে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সও বাতিল করা হয়। তারপর আবার সবই ধামাচাপা পড়ে যায় মাদক বিভাগের নিষ্ক্রিয়তায়। আর কোন কেন্দ্র পরিদর্শনও করা হয়নি, তদারকিও করা হয়নি। এতেই ফের মাথাচাড়া দিয়েই চিকিৎসার নামে চালানো এসব কসাইখানাগুলো। এ সুযোগেই সবাইকে ছাড়িয়ে যায় গাজীপুরের ভাওয়াল মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র। এখানেই অভি নামের একজন অভিনেতাকে রীতিমতো বন্দী রেখে চিকিৎসার নামে চালানো হয় নৃশংস নির্যাতন ও বিকৃত যৌনাচার। প্রতিষ্ঠানটির মালিক ফিরোজা বাঁধন নামের বিকৃত মানসিকতার এই নারীর কীর্তিকলাপ দৈত্যের কাহিনীকেও হার মানিয়েছে। ভাওয়াল পুনর্বাসন কেন্দ্রে যেন হরর শো ॥ বহুল আলোচিত গাজীপুরের ভাওয়াল মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রে ছিলেন উঠতি অভিনেতা অনিক রহমান অভি। তার দাবি- তিনি কখনই মাদকাসক্ত ছিলেন না। তাকে জোর করেই সেখানে রাখা হয়েছিল। মাসের পর মাস তাকে বন্দী করে চরম নির্যাতন ও যৌন নিপীড়ন চালানোর পর তিনি বিকল্প উপায়ে র‌্যাবের কাছে মেসেজ দিতে সক্ষম হন। তারপরই গত ৪ জানুয়ারি সেখানে অভিযান চালিয়ে তাকে উদ্ধার করে র‌্যাব-১। এ সময় উদ্ধার করা হয়- ৪২০ পিস ইয়াবা। ভাওয়াল পুনর্বাসন কেন্দ্রে মাদকের চিকিৎসার নামে কি ধরনের কীর্তি কা- চলে তা শুনলে যে কারও রোম শিউরে ওঠার মতো। এক কথায়- হরর শো। অভি জানিয়েছেন টঙ্গীতে তার বাসা। সেখানে তার মা, স্ত্রী, তিন বছরের মেয়ে এবং ছোট ভাই থাকেন। বাবা পুলিশ বাহিনীতে ছিলেন-এখন থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। প্রকৃতপক্ষে তিনি নেশায় আসক্ত হবেন দূরের কথা, তিনি চা পান করেন না, ধূমপানও করেন না। কিন্তু করোনার সময় তিনি খুব হতাশ হয়ে পড়েন। কারণ তার তিনটি রেস্টুরেন্ট ছিল- সবগুলোতেই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তই হন। তখন থেকে ঘুমের ওষুধ খাওয়া শুরু করেন। একপর্যায়ে দু-তিনটা করে খাওয়া শুরু করেন ডাক্তারের পরামর্শেই। তারপর থেকেই সমস্যা দেখা দেয়। একদিকে ব্যবসায়িক ক্ষতি অন্যদিকে অত্যধিক ঘুমের ওষুধ খাওয়ার জন্য তার কিছু সমস্যা সবার চোখে পড়ে। শারীরিক মানসিকভাবে তিনি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। এটা পরিবারের সদস্যরা খেয়াল করেন এবং দেখতে পান অভির আচরণও খিটখিটে হয়ে গেছে-ওজন কমে যাচ্ছে। এসব দেখে তাদের নানা কিছুই মনে হতো-কিন্তু কিছু বলতেন না। বাকি কাহিনী অভির মুখেই শোনা যাক- ‘আমার একটি সিনেমার প্রযোজক ছিলেন গাজীপুরের। তার মাধ্যমে শিপন নামে একজনের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। শিপন হলেন সেই মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রের প্রধান ফিরোজা নাজনীন বাঁধনের তথাকথিত স্বামী। শিপনের আমাদের বাসায় যাতায়াত ছিল। সেই প্রথমে আমার মাকে বলে যে-আমাকে নেশাগ্রস্তের মতো মনে হচ্ছে। আমার কিছু টেস্ট করা প্রয়োজন। সরাসরি আমাকে বললে হয়তো আমি অন্যভাবে নিতে পারি- তাই আমার মায়ের সঙ্গে কথা বলে আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে আমাকে নিয়ে যায় গাজীপুরে। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর ঘটতে থাকে একের পর এক ঘটনা যা অকল্পনীয়। তার শারীরিক চেকআপ করা হয়। এভাবেই তাকে মাদকাসক্ত প্রমাণ করে তার বাড়িতে ৩ লাখ টাকা চাওয়া হয়। অভির পরিবার সেটা দেয়। অভিকে চিকিৎসা করে ভাল করা হবে- ভাল করে রাখা হবে- এমন কথা বলে প্রতি মাসে আরও ৪০ হাজার টাকা করে নেয়া হতো। প্রথম দিকে পরিবারকে বলা হয়- তিন মাসের জন্য অভিকে থাকতে হবে সেখানে। পরে তাকে দীর্ঘদিন রাখার কৌশল নেয়া হয়। সেখানে ভর্তির পর বলা হয়-পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ঘুমের ওষুধের ব্যবহার পাওয়া গেছে। এটা ঠিক করতে তিন মাস লাগবে। এরপর অভিকে এক কথা আর তার পরিবারকে বলা হতো আরেক কথা। অভি বলেন, ‘আমাকে বলা হতো আমার বাবা-মা নাকি আমাকে দেখতে চায় না। এ কথা বলা হতো আমাকে। আর আমার বাসায় বলা হতো-আমার অবস্থা খুব খারাপ, আমি বাসায় গেলে আর আসতে চাইব না। তাই তাদের আমার সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হতো না। তিনি জানান, সেখানে গিয়েই তিনি ভয় পেয়ে যান। কেননা একটা কক্ষে ২৫ থেকে ৩০ জন রাখা হয়। খাট নেই- মেঝেতে শূইতে হয়। কনডেন্স মিল্কের কৌটায় যতটুকু চাল ধরে-ততটুকু চাল ব্যবহার করা হতো তিনজন মানুষের জন্য। তিন বেলা খাবার দেয়া হতো সেখানে যৎসামান্যই। সকাল ৭টায় দেয়া হতো নি¤œ মানের খিচুড়ি। বেলা দেড়টার দিকে দেয়া হতো আলু আর ডিমের একটা খাবার। রাত সাড়ে ৮টায় দিত ডাল-আলু ভর্তা। প্রথম কয়েক দিন ভালই খাবার দিচ্ছিল মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রে। এরপর আরেকটি পরীক্ষা করা হয় অভির। আর সেই টেস্টের পর অভিকে বলা হয় তার মানসিক সমস্যা। এটা তিনি নিজে বুঝতে পারছেন না। এ কথা শুনে অভি তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও ভুল তথ্য দিয়ে অভি ও তার পরিবারের মধ্যে দূরত তৈরি করার চেষ্টা করা হতো। এভাবে আড়াই মাস কাটে অভির। এর মধ্যে তিনি জেনে যান যে সেখানে মাদকের ব্যবসা হয় এবং কেন্দ্রের মালিক এর সঙ্গে জড়িত। অভি বলেন, এখানেই পুরনো রোগীদের কাছে জানতে পারি, কেন্দ্রের যে নারী মালিক রয়েছেন তিনি নাকি ছেলেদের এ্যাবিউজ করেন। যারা দেখতে একটু সুদর্শন, সুঠাম দেহের ও সুস্থ-তাদের সঙ্গে এ কাজটি করা হতো। যখন যেই ছেলে পছন্দ হতো তাকেই নিজের রুমে ডেকে নিয়ে শারীরিক মেলামেশা করতে বাধ্য করতেন। এক পর্যায়ে আড়াই মাস পর আমার সঙ্গেও এমন একটা ঘটনা ঘটে। ফিরোজা আমাকে তার বাসার নিচতলায় যেখানে তিনি থাকেন, সেখানেই আমার সঙ্গ্ েএই যৌনলীলায় মেতে উঠতো। তার আগ্রাসী যৌনতা দেখে আমি নিজেই ভয় পেয়ে যেতাম। পাশাপাশি এখানে তার রুমেই আমি অনেককে উল্টো করে ঝুলিয়ে মারতে দেখেছি। সেখানে মারা হতো গামছা ভিজিয়ে। একটি মুখে গুঁজে দেয়া হতো-আরেকটি দিয়ে মারা হতো। এতে করে শরীর কাটত না কিন্তু ব্যথাটা রয়ে যেত। আমাকে উল্টো করে মারেনি কিন্তু তিনি আমাকে এ্যাবিউজ করা হয় যেটা হলো রীতিমতো বিকৃত যৌনাচার। আমার মতো আরও অনেকের সঙ্গে এই ধরনের বিকৃতিচারণ করা হয়েছে যা নিজে দেখেছি। চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে অভি বলেন- তিন মাস পর আমাকে নিয়ে যাওয়া হয় খিলক্ষেতে জাকারিয়া নামের এক চিকিৎসকের কাছে। তিনি আমাকে দেখে কিছু ওষুধ দিয়ে ছেড়ে দিতে বললেও আমাকে মুক্তি দেয়া হয়নি। আটকে রাখা হয় ইচ্ছার বিরুদ্ধে। এমনকি জোরপূর্বক আমাকে এমন তিনটে ইঞ্জেকশন দেয়া হয়েছে যাতে আমি আরও অসুস্থ হয়ে পড়ি। এ সময় যাতে চতুর্থ ইঞ্জেকশন না দিতে হয় সেজন্য পালানোর চেষ্টা করি। এসময় আমি এক রোগীর ফোন থেকে ‘প্রথম আমি বিডি ফিল্ম বাজ নামের ফেসবুক পেজে গিয়ে সেলিম সাকিবের নম্বরে ফোন করে অভিনেতা জয় চৌধুরীর নাম্বার নেই। তার মাধ্যমে জায়েদ খানকে ফোন করি যিনি র‌্যাবের সঙ্গে কথা বলে অভিযান চালিয়ে আমাকে উদ্ধার করেন। আসলে ওই বন্দীশালা বা টর্চার সেল থেকে মুক্তি পেয়ে যেন আমি নতুন জীবন ফিরে পেলাম।’
×