ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বসতবাড়ি বেচে ঋণশোধ করতে চান রুমকী!

প্রকাশিত: ২৩:৫২, ১১ জানুয়ারি ২০২২

বসতবাড়ি বেচে ঋণশোধ করতে চান রুমকী!

রুমেল খান ॥ ক’দিন আগেই আর্মি স্টেডিয়ামে শেষ হলো শেখ কামাল জাতীয় এ্যাথলেটিক্স। এবারের আসরে তিনটি নতুন জাতীয় রেকর্ড হয়েছে। এর একটি করেছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর উম্মে হাফসা রুমকী। হাইজাম্পে ১.৭১ মিটার লাফিয়ে নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়েছেন তিনি। এই ইভেন্টে ১.৭০ মিটার লাফিয়ে আগের রেকর্ডটি গড়েছিলেন ২০২০ সালে, সেনাবাহিনীর ঋতু আক্তার। ঋতু এই রেকর্ডটি কেড়ে নিয়েছিলেন রুমকীর কাছ থেকেই। ২০১৯ সালে জাতীয় সামার এ্যাথলেটিক্সে রুমকী ১.৬৮ মিটার লাফিয়ে রেকর্ডটি গড়েছিলেন। তখন তিনি খেলতেন বাংলাদেশ জেলের হয়ে। এবারের আসরে রুমকী একটি রৌপ্যপদকও জিতেছেন। সেটা ৪ গুণিতক ১০০ মিটার রিলেতে। বিকেএসপিতে মাস দুয়েকের মতো অনুশীলন করেছেন। সেখানেই হাইজাম্পের প্র্যাকটিসটা করেছেন। তবে রিলের জন্য ভাল মাঠের সঙ্কটে ভুগেছেন। জনকণ্ঠের সঙ্গে আলাপনে ২১ বছর বয়সী রুমকী বলেন, ‘হাইজাম্পে স্বর্ণ জিতব, এটা নিয়ে আত্মবিশ্বাস থাকলেও এই ইভেন্টে যে রেকর্ড গড়ব, এতটা একদমই ভাবিনি।’ রুমকীর রেকর্ড গড়াটা আসলেই ছিল বিস্ময়কর। কেননা দুই বছর ধরে তিনি পায়ের হাড়ভাঙ্গা রোগে আক্রান্ত। গত বছর পায়ে সার্জারি করিয়েছেন। বেড রেস্টে ছিলেন তিন মাস। এরপর দ্বিতীয়বারও সার্জারি করান। ১৫ দিন প্লাস্টার করা পায়ে যন্ত্রণা সয়েছেন। এ প্রসঙ্গে রুমকী বলেন, ‘যখন রিহাব শুরু হলো, তখন ঠিকমতো দাঁড়াতেই পারতাম না। হাঁটতেই লেগেছে ১৫ দিন! ন্যাশনাল এ্যাথলেটিক্স শুরুর আড়াই মাস আগে অনুশীলন শুরুর জন্য ডাক্তার অনুমতি দিলেও ফিজিও অনুমতি দেননি! সেই অবস্থা থেকে যে গেমসে অংশ নেব এবং রেকর্ডও গড়ে স্বর্ণ জিতব, সেটা আমর জন্য বিশেষ কিছু ছিল। রেকর্ড গড়ে আমি খুবই খুশি।’ তবে অপারেশন করিয়ে ভীষণ আর্থিক সঙ্কটে ভুগছেন তিনি, ‘অপারেশন করাতে গিয়ে সাড়ে ৫ লাখ টাকার মতো খরচ হয়ে গেছে। ফেডারেশন ও নেভিকে ইচ্ছে করেই জানাইনি সমস্যার কথা। ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছি। এখন এই টাকা শোধ করার কোন উপায় পাচ্ছি না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি গ্রামের জমি বিক্রি করে দেব।’ জাতীয় এ্যাথলেটিক্সে এখন পর্যন্ত ৪টি রেকর্ড গড়ার অধিকারী রুমকীর দুঃখ, ‘এত কীর্তি গড়ার পরও আমার নিজ জেলার ক্রীড়া সংস্থা আজ পর্যন্ত মূল্যায়ন করেনি, সংবর্ধনা দেয়নি!’ কীর্তিমান জাতীয় এ্যাথলেটদের জন্য ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে সেই এ্যাথলেটদের নিজ জেলা ক্রীড় সংস্থা তাদের জন্য খাস জমি বরাদ্দ দিয়ে থাকে। রুমকীর প্রত্যাশা, তিনিও যদি জমি পেতেন, তাহলে তার একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই হতো। কিন্তু এজন্য কিভাবে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে কার কাছে গিয়ে আবেদন করতে হবে, সে ব্যাপারে সম্পূর্ণ অজ্ঞ তিনি। রুমকী সিরাজগঞ্জের সদর থানার দিয়ার ধানগড়া গ্রামের ব্যবসায়ী বাবা আবদুর রহিম এবং গৃহিণী মা পারুল বেগমের পাঁচ কন্যার (কোন ছেলে নেই) চতুর্থ সন্তান। ছোট বোন রাফিন আক্তার রিনতি-ও একজন এ্যাথলেট। রুমকী ২০১৪ সালের জাতীয় জুনিয়র এ্যাথলেটিক্সে নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার হয়ে হাইজাম্পে স্বর্ণ এবং চার গুণিতক ১০০ মিটার রিলেতে জেতেন তা¤্রপদক। ২০১৪ সালে সেনাবাহিনী, ২০১৭ সালে বাংলাদেশ জেলে এবং ২০২০ সালে নৌবাহিনীতে যোগ দেন রুমকী। এই তিন সংস্থার হয়ে এ পর্যন্ত মোট ১৬টি পদক জিতেছেন। আগামীতে কমনওয়েলথ গেমস, ইসলামিক সলিডারিটি গেমস এবং এসএ গেমসে অংশ নিতে চান রুমকী। রুমকী ২০১৭ সালে জাতীয় মহিলা ফুটবল দলে খেলেন। চীন, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া সফরে গিয়ে ৬টি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেন।
×