ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

হ্যাটট্রিকের রঙে রঙিন সাগরিকা

শাকিল আহমেদ মিরাজ

প্রকাশিত: ০০:১৮, ১২ জুলাই ২০২৫

হ্যাটট্রিকের রঙে রঙিন সাগরিকা

.

গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ নারী সাফে আলো কেড়েছিলেন মোসাম্মৎ সাগরিকা। ওই টুর্নামেন্টে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত ও বাংলাদেশ। সেবার টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় ও সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার জিতেছিলেন ঠাকুরগাঁওয়ের কিশোরী। ওই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় গত বছরের মাঝামাঝি জাতীয় দলেও অভিষেক। ২৪ জুলাই ভুটানের বিপক্ষে প্রথম প্রীতি ম্যাচে মাঠে নেমেই নিজেকে চিনিয়েছিলেন এই স্ট্রাইকার। অভিষেকে হ্যাটট্রিক করা সাগরিকা এবার অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফে পেলেন হ্যাট্রিকের স্বাদ! শুক্রবার ঢাকার বসুন্ধরা অ্যারেনায় টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৯-১ গোলের বড় ব্যবধানে হারিয়ে মিশন শুরু করেছে আফঈদা খন্দকারের বাংলাদেশ। যেখানে ৩৮, ৫২ ও ৫৭ মিনিটে গোল করেন ১৭ বছর বয়সী সাগরিকা। জাতীয় জার্সিতে ১২ ম্যাচে তার গোল ৭টি। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে ৪ ম্যাচে ৪ এবং অনূর্ধ্ব-১৭ দলে আছে ২ গোল। 
‘অভিষেকে হ্যাটট্রিকের পর থেকে বড় স্বপ্নই দেখে এসেছি। কিন্তু মাঝে সময়টা ভালো যায়নি। আমি খুব খুশি যে  ঘরের মাঠে সাফে প্রথম ম্যাচেই হ্যাটট্রিক করলাম। আরও ভালো লাগছে দলের বড় জয়ে অবদান রাখতে পেরেছি।’ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলছিলেন সাগরিকা। বাংলাদেশের হয়ে এদিন জোড়া গোল করেছেন মুনকি আক্তার। একটি করে গোল পেয়েছেন স্বপ্না, শিখা, রুপা, শান্তি। গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণের কারণে মাঠ ছিল কর্দমাক্ত। কিন্তু এই প্রতিকূলতা তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি বাংলাদেশের পারফরম্যান্সের ওপর। কিছুদিন আগে অনুষ্ঠিত নারী এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে খেলা জাতীয় দলের আট ফুটবলারকে শুরুর একাদশে রাখেন কোচ পিটার বাটলার। তাদের উপস্থিতিতে প্রতিপক্ষকে গোলের মালা পরিয়ে তবেই মাঠ ছাড়ে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। খেলা শুরুর বাঁশি বাজার দুই মিনিটের মধ্যে সরাসরি ফ্রি কিক থেকে বাংলাদেশকে এগিয়ে দেন স্বপ্না। তিন মিনিট পর একক নৈপুণ্যে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন মুনকি। বামদিক দিয়ে ছুটে শ্রীলঙ্কার রক্ষণভাগ এলোমেলো করে কাছের পোস্ট দিয়ে জাল কাঁপান তিনি। 
তৃতীয় গোলের জন্য মেয়েদের বেশ অপেক্ষা করতে হয়। ৩৭তম মিনিটে ডানদিক থেকে শিখার ক্রস পেয়ে গোলের খাতা খোলেন সাগরিকা। প্রথমার্ধে আরও দুবার (৩৮তম মিনিটে ও যোগ করা সময়ে) বল জালে পাঠায় স্বাগতিকরা। কিন্তু অফসাইডের কারণে সেসব বাতিল হয়। ৩-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যাওয়া বাংলাদেশ দ্বিতীয়ার্ধে আরও ছয়বার গোলের উল্লাস করে। ৪৮তম মিনিটে সাগরিকার কাটব্যাকে নিজের দ্বিতীয় ও দলের চতুর্থ গোল করেন ডি বক্সে ফাঁকায় থাকা মুনকি। দুই মিনিট পর শিখা নাম লেখান গোলদাতাদের তালিকায়। ৫৩তম মিনিটে একক নৈপুণ্যে নিজের দ্বিতীয় গোল পাওয়ার পাঁচ মিনিট পর হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন সাগরিকা। ডানদিক থেকে গোলমুখে পূজা দাসের বাড়ানো বলে নিশানা ভেদ করতে কোনো ভুল করেননি তিনি। ফলে ম্যাচের বয়স ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই স্কোরলাইন ৭-০ করে ফেলে মেয়েরা। অপেক্ষার আরেকটি পালা বাংলাদেশ শেষ করে ৮৫তম মিনিটে। ডি বক্সে জটলার মধ্য থেকে লক্ষ্যভেদ করেন রুপা। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে লঙ্কানদের পক্ষে সান্ত¡নাসূচক গোলের দেখা পান জাসোথরন লায়নসিকা। তবে শেষ বাঁশি বাজার আগে আরেকবার গোল হজম করে দলটি। গোল করেন শান্তি।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে কোনো প্রশ্ন করার আগেই দুই দলের কোচ তুলে আনেন মাঠের প্রসঙ্গ। শ্রীলঙ্কান এক খেলোয়াড়কে চোটে পড়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে স্ট্রেচারে করে। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হলেও মাঠের চিত্র দেখে তা বোঝার উপায় ছিল না। মাঠ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাইয়ে পিছিয়ে আনা হয় সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ। কিন্তু বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনার বেহাল অবস্থা। লঙ্কান কোচ শিরান্থা কুমারা বলেন,‘আমি মনে করি, মাঠের অবস্থা একটু খারাপ। কিছু চোটও হয়েছে। আমি মেয়েদের বলেছি, এটা তোমাদের জন্য ভালো অভিজ্ঞতা। আমি এটা প্রত্যাশা করিনি। এটা সাফের টুর্নামেন্ট। আবহাওয়া বদল করা সম্ভব নয়। তবে আমি আসলেই এমন মাঠ প্রত্যাশা করিনি।’ মাঠের অবস্থা বাজে হওয়ার কারণে কাউকে দোষ দিতে চান না বাংলাদেশ কোচ পিটার বাটলার,‘মাঠের পরিস্থিতি আমাদের সাহায্যে আসেনি। মাঠ খুবই ভারি ছিল। 
অবশ্যই, এটা কারও দোষ নয়। আসলে মাঠ যেমন ছিল, সেটাই বললাম আরকি। কিন্তু আমরা ৯ গোল করেছি। শেষদিকে একটা গোল খাওয়ায় একটু হতাশা আছে। তবে স্বস্তির বিষয় ম্যাচটা আমরা শেষ করতে পেরেছি কোনো চোট ছাড়াই।’

প্যানেল

×