ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সম্ভাবনার সাগর

প্রকাশিত: ২১:২৬, ৮ জানুয়ারি ২০২২

সম্ভাবনার সাগর

বঙ্গোপসাগরে ১০৩ টিসিএফ গ্যাস হাইড্রেটের তথা মিথেন গ্যাসের সন্ধান পাওয়ার কথা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। বছরের শুরুতেই এটি জাতির জন্য বড় সুসংবাদ। খাদ্য এবং কসমেটিকস পণ্যের কাঁচামাল হিসেবে সি-উইড বা শৈবালের সম্ভাবনার বিষয়টিও আবার সামনে এসেছে। ২২০ প্রজাতির শৈবালের সন্ধান মিলেছে। এসব কাজে লাগানোর জন্য বেসরকারী বিনিয়োগকারীদের এগিয়ে আসারও আহ্বান জানিয়েছেন মন্ত্রী। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক জীবনরেখা বঙ্গোপসাগর সাম্প্রতিক সময়ে আঞ্চলিক রাষ্ট্রসমূহের কাছে ভূ-রাজনৈতিক কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ভারত, চীন ও জাপানের বিপুল বিনিয়োগই সেটি স্পষ্ট করে দিয়েছে। জাপানের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা জাইকার সঙ্গে বাংলাদেশ মিলিতভাবে বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট স্ট্র্যাটেজি (বিআইজি-বি) নামে পরিচিত প্রকল্পের মাধ্যমে উপকূলীয় অবকাঠামো নির্মাণে সম্পৃক্ত রয়েছে। জাপান কুতুবদিয়ার মাতারবাড়িতে এলএনজি আমদানি সুবিধাসম্পন্ন একটি বন্দর নির্মাণ করছে। বঙ্গোপসাগরে টোকিওর উপস্থিতি শক্তিশালী করার লক্ষ্যে জাপান এসব প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে। জাপান, চীন এবং ভারতের অর্থায়নে বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের চারটি স্থানে গভীর সমুদ্রবন্দর, অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার কাজ বেশ জোরেশোরে এগিয়ে চলেছে। সমুদ্র ও অন্যান্য জলজ সম্পদের টেকসই ব্যবহারে বৈশ্বিক সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরী। বিষয়টি সম্পর্কে সরকার সম্পূর্ণ সজাগ ও সচেতন। স্মরণযোগ্য করোনাকালে ভিডিও কনফারেন্সে জেনেভায় ‘ভার্চুয়াল মহাসাগর সংলাপ’-এ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতায় নতুন সম্ভাবনার দিকটি উঠে আসে। তিনি সমুদ্র সম্পদের টেকসই ব্যবহারে বৈশ্বিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য তিন দফা প্রস্তাব পেশ করে বিশ্ব সম্প্রদায়কে সমুদ্র কর্মকান্ডে তাদের প্রতিশ্রুতি নবায়নের আহ্বান জানিয়েছিলেন। এতে দেশের সুনীল অর্থনীতিতে নতুন প্রাণসঞ্চার হবে বলে আশা করা যায়। বাংলাদেশের সমুদ্র সীমানার মধ্যে শুধু বিপুল মৎস্য ভান্ডার নয়, রয়েছে অফুরন্ত প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদের ভান্ডার। বিশেষ গঠন-প্রকৃতির কারণেই তেল-গ্যাসসহ নানা খনিজ সম্পদ সঞ্চিত রয়েছে এই সাগরের তলদেশে। প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে বিশ্বের অনেক দেশই তাদের টেকসই উন্নয়ন কর্মসূূচীর মাধ্যমে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। বাংলাদেশের মতো একটি উপকূলীয় রাষ্ট্রের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিশেষ করে সমুদ্র পরিবহন ও বন্দর সহযোগিতা বৃদ্ধি, মৎস্য আহরণ, মৎস্য রফতানি, পর্যটন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সামুদ্রিক সম্পদ আহরণ, কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণ সর্বোপরি জীববিজ্ঞান ও সমুদ্রবিজ্ঞান প্রভৃতি ক্ষেত্রে উন্নয়নের একটি নতুন দ্বার উন্মোচিত হওয়ার উত্তম সম্ভাবনা রয়েছে। সকল সম্ভাবনাকে সর্বোতভাবে কাজে লাগানোই এখন লক্ষ্য। সাগরে বিপুল পরিমাণ গ্যাস হাইড্রেটের উপস্থিতি ও মজুদের সমূহ সম্ভাবনা আগামী শতকে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের সামগ্রিক চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। সেজন্যে চাই সাগরের সম্পদ উত্তোলনের উদ্বোধন। জাতির প্রত্যাশা এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় অচিরেই কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
×