ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নীলফামারীতে বিজিবি সদস্য নিহতের ঘটনায় ৯৫ জনের নামে মামলা ॥ গ্রেফতার ৮

প্রকাশিত: ১৮:২৫, ৩০ নভেম্বর ২০২১

নীলফামারীতে বিজিবি সদস্য নিহতের ঘটনায় ৯৫ জনের নামে মামলা ॥ গ্রেফতার ৮

স্টাফ রিপোর্টার,নীলফামারী ॥ নীলফামারীর কিশোরীগঞ্জ উপজেলার গাড়াগ্রাম ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা ও বিজিবির ল্যান্স নায়েক রুবেল হোসেন মন্ডল (৩৫) নিহতের ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে (মামলা নম্বর ১৪)। আজ মঙ্গলবার(৩০ নবেম্বর) মামলাটি দায়ের করেন উক্তইউনিয়নের পশ্চিম দলিরাম মাঝাপাড়া সরকাবরি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ললিত চন্দ্র রায়। মামলায় ওই ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী জাপার প্রার্থী লাঙ্গল প্রতিক মারুফ হোসেন অন্তিককে প্রধান আসামী করে ৯৫ জনের নামে থানায় মামলাটি দায়ের হয়। তৃতীয় পর্যায়ের ভোটের দিন গত রবিবারের (২৮ নবেম্বর ) ওই ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া আট জনকে মামলাটির আসামী হিসেবে আজ মঙ্গলবার সকালে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। মামলার সুত্র মতে গত রবিবার (২৮ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত ওই ইউপি নির্বাচনে পশ্চিম দলিরাম মাঝাপাড়া সরকাররি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে সন্ধ্যায় ভোট গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ঘোষণা শেষে ব্যালটসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম নিয়ে কেন্দ্র থেকে বের হয়ে আসার সময় পরাজিত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মারুফ হোসেন অন্তিকের নেতৃত্বে মামলার আরজিতে উল্লেখিত আসামীরা আরো লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়। এতে কর্তব্যরত বিজিবি সদস্য রুবেল হোসেন মন্ডল মুখে আঘাত পেয়ে ঘটনাস্থলে নিহত হন। ওই ঘটনায় কর্তব্যরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, প্রিজাইডিং কর্মকর্তাসহ একাধিক পুলিশ ও বিজিবি কর্মকর্তা এবং সদস্য আহত হন। আত্মরক্ষা এবং সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ১৮৫ রাউন্ড গুলি ও টিআরসেল নিক্ষেপ করতে হয়েছে। ওই সহিংসতার ঘটনায় একজন বিজিবি সদসস্যের প্রাণহানীসহ নির্বাচনী কাজে ব্যবহৃত মোটরযান, একটি মোরসাইকল ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির দরজা-জানালার ব্যাপক ভাঙচুর হয়। এসময় নির্বাচনে দায়িত্বরদের সন্মানী ভাতা বাবদ গচ্ছিত ৫৬ হাজার ৬৫০ টাকা চুরি হয় বলে উল্লেখ করা হয় মামলায়।মঙ্গলবার দুপুরে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কিশোরীগঞ্জ থানার ওসি কর্মকর্তা আব্দুল আউয়াল। এদিকে উপজেলার নির্বাচন অফিসার রবিউল ইসলাম জানান, ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী গাড়াগ্রাম ইউনিয়নে স্বতন্ত্র আনারস প্রতিকের প্রার্থী জোনাব আলী ৬ হাজার ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি ছিলেন লাঙ্গল প্রতিকের মারুফ হোসেন অন্তিক। তিনি ভোটপান ৫ হাজার ৯৪৫ ও নৌকার প্রার্থী ভোট পান ৫ হাজার ১১৩। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় তদন্ত করছেঃ-এদিকে ঘটনাটি তদন্তে সোমবার দুপুর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটির তদন্ত কাজ চলমান রয়েছে। কাজের অংশে মঙ্গলবার দুপুরে নীলফামারী সার্কিট হাউজে নির্বাচনী কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন কমিটির সদস্যরা।ওই কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, রংপুর বিজিবির রিজিওনাল কমান্ডার কর্ণেল মো.মাহবুবুর রহমান খান, পুলিশের রংপুর রেঞ্জের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. ওয়ালিদ হোসেন ও নীলফামারীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মির্জা মুরাদ হাসান বেগ। তবে তদন্তের স্বার্থে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয়নি কমিটির সদস্যরা। ময়না তদন্তের রির্পোটঃ নিহত নীলফামারী ৫৬ বিজিবির ল্যান্ড নায়েক রুবেল মন্ডল(৩৮) এর মরদেহ জেলার মর্গে সোমবার দুপুর ১২টায় ময়না তদন্ত করা হয়। ময়না তদন্তের রির্পোটটি মঙ্গলবার বিকালে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে পৌছে। সংশ্লিষ্টরা ময়না তদন্তের রির্পোটে মৃত্যুর কারন সর্ম্পকে জানাতে অপরাগত প্রকাশ করে। তবে একটি নির্ভর যোগ্য সুত্র জানায় বিজিবি সদস্যের মৃত্যু হয় গুলিতে। তার মুখমন্ডলের চোয়ালে গুলিবিদ্ধ ছিল। ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরনে তার মৃত্যু হয়। গ্রামের বাড়িতে লাশ দাফনঃ-নীলফামারী-৫৬ বিজিবির ল্যান্স নায়েক রুবেল মন্ডলেল বাড়ি গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শালমারা ইউনিয়নের বেইগুনি গ্রামে। শালমারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমির হোসেন শামীম সাংবাদিকদের জানান, গতকাল সোমবার(২৯ নবেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রুবেলের দাফন হয়েছে। জানাজায় পরিবার, প্রতিবেশী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অংশ নেয়। গ্রামের বাড়িতে রয়েছে রুবেল মন্ডলের বাবা কৃষক নজরুল ইসলাম, মা রুলি বেগম, স্ত্রী জেসমিন বেগম এবং দুই সন্তান রাফিহুর রহমান ও রাফিয়া আকতার রিয়া।১২ বছরের ছেলে রাফিহুর ষষ্ঠ শ্রেণিতে আর ১০ বছরের মেয়ে রিয়া পড়ে পঞ্চম শ্রেণিতে। রুবেলের বাবা সাংবাদিকদের জানায়,বিজিবির সদস্যরা বাড়িত লাশ আনছে। সন্ধ্যায় পারিবারিক কবরস্থানে মাটি হইছে। রুবেলের স্ত্রী জেসমিন কান্না বিজরিত কন্ঠে সাবাদিকদের বলেন আমার ও আমার সন্তানদের এখন কি হবে। মৃত্যুর কারণ স¤পর্কে রুবেলের স্ত্রী বলেন, আমার স্বামীর লাশ নিয়ে আসা অন্যান্য বিজিবি সদস্যরা যে ভাষ্য এখানে দিছে তা হলো, গলায় গুলি লাগছে। পোস্টমর্টেম যে করছে আমরা তার প্রমাণ পেয়েছি ও গুলিতেই যে মারা গেছেন এটা সত্যি। এ ঘটনায় সরকার বাদী মামলা হবে তাই পরিবার কোনো মামলা করবে না।
×