ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাইবুন্যালে বাদী হওয়ায় রাজাকার পুত্রের বাহিনী কুপিয়ে আহত করল মুক্তিযোদ্ধাকে

প্রকাশিত: ১৭:৫১, ২৫ নভেম্বর ২০২১

ট্রাইবুন্যালে বাদী হওয়ায় রাজাকার পুত্রের বাহিনী কুপিয়ে আহত করল মুক্তিযোদ্ধাকে

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ কক্সবাজারের মহেশখালীতে রাজাকার পুত্রের বাহিনীর হাতে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আমজাদ হোসেন মারাত্মক জখম হওয়ার ঘটনায় জেলাজুড়ে তোলপাড় চলছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি রাষ্ট্রের ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় রাজাকার, বিএনপি-জামায়াত ক্যাডাররা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে কুপিয়ে তাঁর রক্ত পথে পথে ঝরাবে, তা কখনও মেনে নেয়া যায়না বলে মত প্রকাশ করেছেন সুশীল সমাজ। পূর্বপরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাসী হামলার শিকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন কক্সবাজার সদর হাসপাতাল বেডে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন বলে জানা গেছে। কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন বৃহস্পতিবার জনকণ্ঠকে জানান, বুধবার এশার নামাজ পড়ে রাতে বাড়ি ফেরার পথে মহেশখালী পৌরসভার মেয়র মকছুদ মিয়ার নির্দেশে তার ছেলেরাসহ প্রায় ১৫-২০ জন সন্ত্রাসী আমাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করেছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই। তিনি আরও বলেন, যুদ্ধাপরাধী ট্রাইবুন্যাল আদালতে মহেশখালীর রাজাকারদের বিরুদ্ধে বাদী হওয়ায় মেয়র মকছুদ মিয়ার নির্দেশে তাকে খুন করার উদ্দেশ্যে মেয়রপুত্রসহ তার স্বজনরা এই ঘগন্যতম হামলা চালিয়েছে। সচেতন মহল বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে তারা মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়ে পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করার মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ’ নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ছিনিয়ে এনেছিলন মুক্তিযোদ্ধারা। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান এই মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের অহঙ্কার। ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমাদের এ স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধারা কখনও তাদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করেননি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনমান উন্নয়নে নানাবিদ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এ অবস্থায় মহেশখালীতে এক মুক্তিযোদ্ধার উপর এভাবে হামলার ধিক্কার জানিয়ে রাজাকার পুত্র মকছুদ মিয়ার বিরুদ্ধে আইনানূগ ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা। জানা যায়, মহেশখালী পৌর মেয়র মকছুদ মিয়া বাহিনীর হামলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আমজাদ হোসেন গুরুতর আহত হওয়ায় বিব্রত জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ। মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তবে প্রভাবশালী মেয়র মাকছুদ মিয়া ও বিএনপি-জামায়াতের সশস্ত্র ক্যাডারদের ভয়ে কেউ সাহস করে মূখ খোলতে পারছেনা বলে জানা গেছে। কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আমজাদ হোসেনকে মহেশখালী পৌরসভার মেয়র মকসুদ মিয়ার দুই পুত্র, তিন ভাগিনা ও স্বজনরা মারাত্মকভাবে আহত করেছে। বুধবার রাত সাড়ে ৮ টায় গোরকঘাটা লিডারশীপ কলেজ সংলগ্ন রাস্তায় এই সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানান, মহেশখালী পৌরসভার মেয়র মকসুদ মিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর ক্যাডাররা গত ১৯অক্টোবর রাতে বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেনের চিংড়ি প্রজেক্টে লুটপাট চালায়। পাহাদার ও কর্মচারীদের অস্ত্রের মূখে তাড়িয়ে দিয়ে মেয়র মকছুদ মিয়া দখলে নেয় ওই চিংড়ি ঘেরটি। এ ব্যাপারে থানায় এজাহার নিয়ে গেলে থানায় মামলা নেয়নি পুলিশ। পরে আদালতের শরণাপন্ন হলে বিচারক এজাহারটি নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ড করতে মহেশখালী থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। মামলা করার পর থেকে মকছুদ মিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন মুক্তিযোদ্ধা আমজাদের উপর। এছাড়াও যুদ্ধাপরাধী ট্রাইবুন্যাল এর বাদী হওয়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেনকে খুন করার উদ্দেশ্যে মেয়র মকছুদ মিয়ার নির্দেশে তার ভাই আতাউল্লাহ বোখারী, তার ছেলে নিশান, শেহজাদ, ভাগিনা সামছুদ্দিন, মইন উদ্দিন, মামুন, হাসান মোরশেদ, ফরিদ ওরফে কালা ফরিদ, আজিজ ও একরামসহ ১৫-২০জন লোক নির্দয়ভাবে সশস্ত্র হামলা করেছে বলে অভিযোগ করেন তাঁর ছেলে আইনজীবী দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, তার পিতাকে নিয়ে চিকিৎসার কাজে ব্যস্ত থাকায় মামলা করতে একটু বিলম্ব হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধী মামলার সুনির্দিষ্ট পাওয়া তথ্য মতে, যুদ্ধাপরাধী মামলার তালিকায় ২২নম্বর আসামি হাশেম সিকদার ওরফে বড় মোহাম্মদের পুত্র মকছুদ মিয়া। স্থানীয় সূত্র মতে, মকছুদ মিয়ার বাবা শান্তি কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তার চাচা মৌলবি জাকারিয়া সিকদার ওই কমিটির সভাপতি ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত আসামি। ট্রাইবুন্যাল থেকে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। কিন্তু তিনি পলাতক জীবন পার করছেন। এছাড়া ১৯৭১ সালে হিন্দু সম্প্রাদায়ের ওপর তান্ডবলীলা চালিয়েছেন ওই পরিবারের ৯ সদস্য। যাদের বিরুদ্ধে ট্রাইবুন্যাল আদালতে বিচার চলমান রয়েছে। মেয়র মকছুদ মিয়ার পরিবারে ৯জন রাজাকার সংখ্যালঘুদের ধর্ষণ, জ্বালাও পোড়াও সহ মহেশখালী তথা যুদ্ধাপরাধে লিপ্ত ছিল। মেয়রের বড় ভাই আবু বক্কর সিদ্দিক উপজেলা বিএনপির সভাপতি, আপন সহোদর আতাউল্লাহ বোখারী জেলা বিএনপি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ছোটভাই কাইছারুজ্জামান সিকদার পৌর যুবদলের সহ সভাপতি। এছাড়াও মহেশখালী পৌর মেয়রের বড় ছেলে মিরাজ উদ্দিন নিশান ইয়াবা ট্যাবলেটের বড় চালান সহকারে (২ লাখ ৭ হাজার ১’শ পিস) ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট তার খালাত ভাই, খালু, বন্ধুসহ আটক হয়েছিল র‌্যাবের পাঁতানো জালে। পরে অঢেল টাকা খরচ করে জামিনে মুক্তি পায়। এর আগেও ২০১৯ সালের ২ এপ্রিল মহেশখালী প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাবেক কমিশনার সালামত উল্লাহকে একই কায়দায় হামলা করে মারাত্মকভাবে আহত করেছিল এই মেয়র মকসুদ মিয়া। বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তাকে নৃশংসভাবে হামলা করেছিল। অভিযোগ রয়েছে, স্বার্থে আঘাত লাগলে সারাজীবনের কর্মীকে এভাবে তাচ্ছিল্য ও আঘাত করতে দ্বিধা করেনা মকছুদ মিয়া। মহেশখালীর আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক অঙ্গন দু’ভাগে বিভক্ত দীর্ঘদিন ধরে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অংশে রয়েছেন এ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, আনোয়ার পাশা, ডাক্তার নুরুল আমিন, আজিজুর রহমান, ফরিদ চেয়ারম্যান, আলতাফ উদ্দিন চেয়ারম্যান ও মেয়র প্রার্থী সরওয়ার চেয়ারম্যান। স্বাধীনতার বিপক্ষে রয়েছেন মেয়র মকছুদ মিয়া, সাবেক এমপি আলমগীর ফরিদ, আবুবকর ছিদ্দিক, মীর কাশেম চৌধুরী, জাবের চেয়ারম্যান ও সাইফুল কাদের চৌধুরী। মহেশখালীতে অস্ত্রের ঝনঝনানিসহ মামলা মোকদ্দমার বিষয়ে থানায় নির্দেশনা দিয়ে থাকেন মকছুদ গ্রুপ। তাই পুলিশও ঝামেলা এড়াতে মামলা রেকর্ড করেনা এবং মকছুদ বাহিনীর বিরুদ্ধে কোন ধরণের গ্রেফতার বা আইনানূগ ব্যবস্থা গ্রহণ করছেনা বলে অভিযোগ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা সন্তান এ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন। এ ব্যাপারে বক্তব্য নিতে একাধিকবার কল করেও রিসিভ না করায় মেয়র মকছুদ মিয়ার বক্তব্য নেয়া যায়নি।
×