ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২

কোটচাঁদপুরে গাছে গাছে ঝুলছে পোষ্টার, নীরবে কাঁদছে প্রকৃতি

আকিমুল ইসলাম সাজু, কন্টিবিউটিং রিপোর্টার, কোটচাঁদপুর, ঝিনাইদহ

প্রকাশিত: ২৩:১৬, ১৪ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২৩:১৬, ১৪ জুলাই ২০২৫

কোটচাঁদপুরে গাছে গাছে ঝুলছে পোষ্টার, নীরবে কাঁদছে প্রকৃতি

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার বিভিন্ন সড়ক, বাজার, কলেজের ফটক সংলগ্ন গাছগুলোর শরীরে একের পর এক পেরেক মারা হয়েছে বিভিন্ন পোস্টার ও ব্যানার ঝোলানোর জন্য। বিশেষ করে কোচিং সেন্টার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন এসব গাছের গায়ে পেরেক ঠুকে লাগানো হয়েছে। এতে প্রকৃতির প্রতি এক চরম নিষ্ঠুরতার চিত্র ফুটে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ সচেতন মহল।

বিষয়টি সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন সড়ক বাজার বিশেষ করে কলেজ গেটের দুপাশে থাকা একাধিক গাছের গায়ে লোহার পেরেক দিয়ে পোস্টার ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এসব গাছে দীর্ঘদিনের ক্ষতের দাগ স্পষ্ট। বৃষ্টির দিনে পেরেক গর্ত দিয়ে পানি ঢুকে গাছের ভেতর পচন ধরারও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এ বিষয়ে কোটচাঁদপুর বন বিভাগের কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “গাছে পেরেক মারা বা ক্ষতি সাধনের যেকোনো চেষ্টা বন আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আমরা এই ধরনের কাজের বিরুদ্ধে উপজেলায় জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার প্রস্তুতি নিচ্ছি এছাড়াও বিভিন্ন সমাজকর্মীদের সাথে আলোচনা করছি কিভাবে গাছ থেকে পেরেক সরানো যায় এবং সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করছি। গাছের ক্ষতি মানেই পরিবেশের ক্ষতি।”

স্থানীয় সমাজকর্মী কামরুজ্জামান ফারুক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সীমানায় দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলোই যদি নিরাপদ না থাকে, তাহলে সাধারণ গাছগুলোর ভবিষ্যৎ কী? গাছ কেবল অক্সিজেনই দেয় না, পরিবেশ রক্ষা, ছায়া, সৌন্দর্য—সবকিছুতেই এর অবদান। অথচ কিছু লোভী মানুষের কারণে এসব গাছ আজ যন্ত্রণা ভোগ করছে।”

ঘাগা-তালসার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো রাশেদুল ইসলাম বলেন, কলেজ ছুটি থাকাকালীন সময়ে এই বোর্ডগুলো গাছে ঝোলানো হয়েছে।
“গেটের বাইরে থাকা গাছগুলো কলেজের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে না থাকলেও আমরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়েছি। কেউ যেন গাছে পেরেক না মারে, সে বিষয়ে আমরা বিজ্ঞাপনদাতাদের অনুরোধ করব এবং প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নেব।”

পরিবেশবিদদের মতে, গাছে পেরেক মারা হলে গাছের কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে, রোগ-জীবাণু সহজে প্রবেশ করে এবং একসময় তা মরে যেতে পারে। এটি জীববৈচিত্র্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

পরিবেশ রক্ষায় আমাদের সবার দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখা জরুরি। গাছে পেরেক মারা শুধু একটি গাছ নয়, গোটা পরিবেশকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেয়। প্রচারণার নামে প্রকৃতির প্রতি এমন নিপীড়ন বন্ধে সচেতনতা ও কার্যকর আইনি ব্যবস্থা এখন সময়ের দাবি। 

 

রাজু

×