ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২

মিরসরাই-ফটিকছড়ি সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল

আবারও পাহাড় ধসের শঙ্কা

নুরউদ্দীন খান সাগর, চট্টগ্রাম/ফিরোজ মাহমুদ, মিরসরাই

প্রকাশিত: ২৩:১৪, ১৪ জুলাই ২০২৫

আবারও পাহাড় ধসের শঙ্কা

সড়কে স্ত‚প হয়ে থাকা মাটি সরানোর কাজ শুরু হয়

টানা ভারি বর্ষণে পাহাড় ধসে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ মিরসরাই-ফটিকছড়ি অভ্যন্তরীণ সড়কের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে। সড়কটি বন্ধের ৬ দিন পেরিয়ে গেলেও টনক নড়েনি সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃপক্ষের। এতে চরম বিপাকে পড়েন ওই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করা কয়েক হাজার মানুষ। স্কুল, কলেজ, অফিসগামী ও ব্যবসায়ীদের চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হলে ৬ দিনের মাথায় সড়কে স্ত‚প হয়ে থাকা মাটি সরানোর কাজ শুরু করে।
রবিবার বিকেল থেকে যান চলাচল স্বাভাবিক হওয়ায় স্বস্তি ফিরে আসে ওই সড়কে চলাচলকারী মানুষ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের। জানা গেছে, ৮ জুলাই বিকেলে উপজেলার ঝরঝরি মাজার সংলগ্ন চার রাস্তার কোণ এলাকায় পাহাড়ের একটি বড় অংশ ধসে পড়ে। এতে সড়কে অন্তত ৩০ ফিট মাটি জমে থাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, এই সড়ক দীর্ঘদিন ধরে অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকলেও কারও কোনো নজরে আসেনি। সড়কের অনেকাংশ ধসে পড়েছে। বিভিন্ন স্থানে সড়ক ভেঙে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এ সড়কে চলাচল করা জনসাধারণ।
সোমবার সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মিরসরাই থেকে ফটিকছড়ি এই সড়কের দৈর্ঘ্য ৩৮ কিলোমিটার। মিরসরাই পৌরসভার লোহারপুল এলাকা থেকে নারায়ণহাট বাজার ও ফটিকছড়ি সদর এলাকা পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন অংশ ভেঙে পড়েছে, অনেকাংশে সড়ক ধসে পড়েছে পাহাড়ের কানালে। এ ছাড়া বেশকিছু অংশে পাহাড় ধসে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। খানাখন্দ ভরা সড়কে ঝুঁকি নিয়ে যান চলাচল করতে দেখা গেছে। সড়ক রক্ষায় স্থানীয়রা বাঁশ ও বালুর বস্তা দিয়ে মেরামত করেছেন। সড়কের বিভিন্ন অংশে যাত্রী নেমে খালি গাড়ি পারাপার হতে দেখা যায়। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় সড়কের দুপাশে লেবু, কাঁঠাল,আনারসের বেশ কিছু বাগান রয়েছে। বিশেষ করে লেবু উৎপাদন বেশি হয় এই পাহাড়ে। চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ফেনী ও ঢাকা থেকে পাইকাররা এখান থেকে লেবু নিয়ে যান বিভিন্ন বাজারে। এ ছাড়া এই এলাকা থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাঁশের বড় একটি চালান যায়।
কথা হয় ওই এলাকার বাসিন্দা লেবু চাষি আলা উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি জানান, সরাসরিভাবে পাহাড়ের কিছু জায়গা লিজ নিয়েছেন। সেখানে তিনি লেবুসহ বিভিন্ন ফলের গাছ লাগিয়েছেন। বিভিন্ন এনজিও ব্যাংক থেকে তার লোন নেয়া হয়েছে। কিন্তু সড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ায় আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের কোনো মিল পাওয়া যায় না। পরিচর্যার জন্য প্রতিদিন ৮-১০ জন মানুষ কাজ করেন। এ ছাড়া পাহাড় ধসে পড়ায় সড়ক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমাদের ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে।
এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করা ব্যাংক কর্মকর্তা হোসেন মোহাম্মদ তারিফ জানান, আমার বাড়ি মিরসরাই। অফিস ফটিকছড়ি উপজেলার নারায়ণহাট বাজারে হওয়ায় প্রতিদিন এই সড়কে আমি যাতায়াত করি। তবে সড়কটির বিভিন্ন অংশ ভেঙে পড়েছে। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় আরও ঝুঁকি বাড়ছে। চলতি বর্ষায় ভারি বর্ষণের কারণে একটি অংশে পাহাড় ধসে পড়ায় বারৈয়ারহাট সড়ক ব্যবহার করতে হয়েছে। তবে এই সড়কের কয়েকটি অংশে আরও পাহাড় ধসে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শামসুল হক বলেন, পাহাড় ধসে পড়েছে এই প্রথম না। এর আগেও বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসে পড়েছে। সেটা স্থানীয়রা মাটি সরিয়েছেন। এবার টানা বৃষ্টি ও মাটি বেশি হওয়ায় চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া সড়কের বেশকিছু অংশ ভেঙে পড়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না। ছেলে-মেয়েদের স্কুল- কলেজে যেতে অনেক অসুবিধা হয়। এ ছাড়া মুমূর্ষু রোগী নিয়ে বেশি কষ্ট করতে হয়। এ বিষয়ে সীতাকুন্ড-ফটিকছড়ি (অতিরিক্ত) সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফারহান বলেন, বৃষ্টির কারণে সড়কের মাটিগুলো সরাতে সময় লেগেছে। এ ছাড়া সড়কের কয়েকটি অংশে খানাখন্দ আছে। বৃষ্টি কমার পর আমরা সেগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেব। তা ছাড়া মিরসরাই থেকে ১০ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের জন্য টেন্ডার কাজ চলমান রয়েছে।

প্যানেল

×