ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২

বাউফলের এক জহরজান বিবির মানবেতর জীবন যাপন

প্রকাশিত: ১৮:১৫, ২৪ নভেম্বর ২০২১

বাউফলের এক জহরজান বিবির মানবেতর জীবন যাপন

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাউফল, পটুয়াখালী ॥ জহরজান বিবি (৯০) । বয়সের ভারে ন্যূজ হয়ে গেছেন। তিনি মদনপুরা ইউপির চন্দ্রপাড়া গ্রামে অন্যের বাড়িতে ছোট্ট একটি খুপরির মধ্যে বসবাস করেন । বসত ঘরটির ভিতরে দিন ও রাতের কোন তফাৎ নেই। জানালা না থাকায় কোন আলো প্রবেশ করতে পারেনা। তাই দিনের বেলাতেও ঘরটির ভিতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার মনে হয়। কুপি (বাতি) জ্বালিয়ে ঘরে আলো দিতে হয়। খাবার সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে দুটি পাতিল, একটি থালা, একটি মগ ও একটি হাতুয়া (মাটির গামলা )। পানি রাখার জন্য নেই কোন কলসি। একটি মাটির হাড়িতে পানি রাখেন। রাত কাটাতে হয় একাকি। অসুস্থ হয়ে পরলে কেউ নেই দেখার। প্রায় সময়ই অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাতে হয়। আপনজন বলতে কেউ নেই জহরজানের। তাই দুর্বিসহ জীবন- যাপন করছে সে ঐ ঝুপরিটির ভিতরে। চন্দ্রপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও আশ্রয়দাতা আবদুল মোতালেব মৃধা বলেন, ‘জহরজানের বাড়ি ভোলা জেলায়। স্বামী আয়নাল আলীর মৃত্যু ও নদীতে ঘর বাড়ি ভেঙ্গে গেলে সর্বশান্ত হয়ে পরে জহর। তারই চাচাতো বোন আনোয়ারার স্বামীর বাড়ি বাউফলে থাকায় সেই সুবাদে চাচাতো বোনের হাত ধরে শিশু দুই মেয়ে রাহিমা ও নাসিমাকে নিয়ে জহরজান চলে আসে বাউফলে। ছোট ডালিমা চুন্নু মিয়ার বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ ও বসবাস করতেন সেখানে। দুই মেয়ের বিয়ে হয়। তারা ঢাকায় থাকেন । তার মায়ের খোঁজ খবর নেয়না। তাই পথে প্রান্তরে ঘুরত জহরজান। একসময় আমার সাথে দেখা হলে মানবিক কারণে তাকে আমার ঘরের পাশে একটু জায়গায় খুপরি ঘর তুলে দিলে সেখানে তিনি বসবাস করেন।’ জহরজান বলেন , ‘বাবা বড় কষ্টে আছি। হাঁটা চলা করতে পারি না। রাতে ঘরে একা শুয়ে থাকি। ভয় হয় । এই রাতেই বুঝি মরে (মারা ) যাবো। মরে গেলেওতো কেউ দেখবে না। আপন বলতে কেউ নেই । মেয়েরা বেঁচে আছে কিনা তাও জানিনা । যেদিন কেউ সহযোগিতা করে সেদিন খাই, তা না হলে না খেয়ে থাকি ।’
×