ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পেঁয়াজের দাম নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর হ্যাটট্রিক

প্রকাশিত: ২১:২১, ১৫ অক্টোবর ২০২১

পেঁয়াজের দাম নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর হ্যাটট্রিক

চালের দাম যে সেই মহামারী করোনার প্রথম ধাক্কার আগে বেড়েছে তা আর কমেনি। দেশে গত বোরো মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ চাল উৎপাদন হলেও চালের বাজারে তার আচড় লাগেনি। চালের এই উচ্চমূল্যকে মানুষ নিয়তি হিসাবেই ধরে নিয়েছে। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সঙ্গে সঙ্গে যে অন্য সব নিত্য পণ্যেও আগুন লাগবে তা কে জানত। চালের পর তেল দিয়ে শুরু হয় বাজারের সেই উত্তাপ। ৮০ টাকার ভোজ্য তেল বাড়তে বাড়তে ১৫৮ টাকায়। মাঝে সরকার মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েও সেই উর্ধগতিতে বাদ সাধতে পারেনি। ভোজ্য তেলের সঙ্গে সঙ্গেই বাড়তে শুরু করে চিনির দাম। চিনির দাম বৃদ্ধি শেষ না হতেই বাড়তে শুরু করে ডালের দাম। ডালের পর এখন পেঁয়াজ। এর ফাঁকে ডিম এবং মুরগি। ১২০ টাকা কেজির ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে এখন ১৮০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। ২৪ টাকা হালির পোলট্রি ডিম এখন ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সময় এই ব্রয়লার মুরগি গরিবের আমিষ হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছিল, কিন্তু সেই ব্রয়লার মুরগিও এখন নাগালের বাইরে চলে গেছে। এসব স্পর্শকাতর প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। নুন আনতে যাদের পানতা ফুরোয়, বাজার থেকে তাদের ঘরে ফিরতে হচ্ছে প্রায় শূন্য ব্যাগ নিয়ে। বাজারের পরিবর্তে সেসব নি¤œ আয়ের মানুষ ভিড় করছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে। ভাগ্যিস টিসিবির ট্রাকে এখন সাশ্রয়ী দামে পেঁয়াজ, তেল, ডাল, চিনি দেয়া হচ্ছে। তা না হলে এই মানুষগুলোর কি অবস্থা দাঁড়াত। তবে সাশ্রয়ী মূল্যে টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য বিক্রি করা হলেও তা পেতে মানুষের মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হচ্ছে। প্রখর রোদের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে নিতে হচ্ছে এসব পণ্য। আবার সবার ভাগ্যে যে পণ্য জুটছে তা নয়। সীমিত বরাদ্দের কারণে দীর্ঘ লাইন শেষ হওয়ার আগেই ফুরিয়ে যাচ্ছে পণ্য। অর্থাৎ জিনিসের দাম বাড়ায় ট্রাকে ভিড়ও বাড়ছে। ফলে দুপুরের মধ্যেই সব পণ্যের বিক্রি শেষ হয়ে যাচ্ছে। এতে অনেককে ফিরতে হয় পণ্য না নিয়ে। কিন্তু এভাবে কতদিন চলবে? দিনের পর দিন তো এভাবে চলতে পারে না। নিত্যপণ্যের দাম এখন সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের বাইরে। সর্বশেষ এই দাম বৃদ্ধির তালিকায় যুক্ত হয়েছে পেঁয়াজ। পেঁয়াজ আমাদের দেশে স্পর্শকাতর পণ্যগুলোর একটি। এটির দাম বাড়লে রাজনীতিও নড়েচড়ে ওঠে। গত দুই বছর আমরা এটা প্রত্যক্ষ করেছি। অতীতেও পেঁয়াজ নিয়ে তুলকালাম হয়েছে। কিন্তু গত টানা দুই বছর পেঁয়াজ নিয়ে দেশে যে মূল্যবৃদ্ধির কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে তা নজিরবিহীন। সেই জের ধরেই এবারও ঠিক সেপ্টেম্বর মাসের শেষে এসে বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। ৩০ টাকা কেজির পেঁয়াজের দাম সপ্তাহের ব্যবধানেই খুচরা বাজারে ধাই ধাই করে বেড়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকায় উঠে গেছে। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব অনুযায়ী, এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজের দাম ৪১ দশমিক ৩০ শতাংশ ও আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম ২৯ দশমিক ৪১ শতাংশ বেড়েছে। আর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম একমাসে বেড়েছে প্রায় ১৯.৬৪ শতাংশ। একমাসের ভেতর নিত্যপণ্যের দাম এর আগে কখনোই এতটা বাড়তে দেখা যায়নি। বাংলাদেশ তো কখনই পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। চাহিদার সিংহভাগ পেঁয়াজ দেশে উৎপন্ন হয়। অবশিষ্ট কিছু পেঁয়াজ প্রতিবেশী দেশ থেকে আমদানি করা হয়। গত দুই বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে কৃষি মন্ত্রণালয় চার বছরে পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার রোডম্যাপ প্রণয়ন করে এগুচ্ছে। সেই রোডম্যাপের প্রথম বছরেই দেশে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি পরিমাণে পেঁয়াজ উৎপন্ন হয়েছে। কমে এসেছে চাহিদা ও যোগানের ঘাটতি। এত দিন দেশে পেঁয়াজের চাহিদার তুলনায় ঘাটতি ছিল প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন। চলতি বছর সেই ঘাটতি কমে মাত্র তিন লাখ টনে নেমে এসেছে। পেঁয়াজের ঘাটতি কমে আসায় বাজারেও স্বস্তি ফিরেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মাঠ ফসলের সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য দেশে শীত ও গ্রীষ্মকালীন মিলিয়ে মোট পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ২৯ লাখ ৫৫ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন। বছর শেষে উৎপন্ন হয়েছে ৩২ লাখ মেট্রিক টন। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপন্ন হয়েছিল ২৫ লাখ ৬০ হাজার টন। অর্থাৎ উৎপাদন বেড়েছে ছয় লাখ ৩৯ হাজার ২০০ হাজার টন বা ২৪.৯৬ শতাংশ। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছর দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন ছিল ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৫০০ টন। অর্থাৎ ধারাবাহিকভাবে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়ছে। ফলে চাহিদা ও যোগানের ঘাটতিও কমে এসেছে। গত বছর পর্যন্ত সেপ্টেম্বর মাস এলেই পেঁয়াজের দাম বাড়া নিয়ে সাধারণ ক্রেতারা আতঙ্কে থাকত। চলতি বছর সেপ্টেম্বরের এই শেষভাগেও দামের কোন পরিবর্তন হয়নি। আবার তেমন আমদানিও করতে হচ্ছিল না। বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিকই ছিল। তাহলে হঠাৎ করে দেশে রাতারাতি পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করল কেন? এবছর তো ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করেনি, আবার রফতানি মূল্যও নির্ধারণ করে দেয়নি। তবে বন্যার কারণে তাদের অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেড়েছে। তাই বলে বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম রাতারাতি প্রায় তিনগুণের কাছাকাছি চলে যাবে? দেশে পাঁচ লাখ টন মজুদ থাকার পরও দুই সপ্তাহের মধ্যে পেঁয়াজের দাম এভাবে কাঁপুনি ধরাবে কেন ক্রেতার পকেটে? অথচ পাঁচ লাখ টন পেঁয়াজের মজুদ দিয়ে দেশে তিন মাসের চাহিদা মেটানো সম্ভব। তাছাড়া পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত আছে। হঠাৎ এই দাম বৃদ্ধির পেছনে যৌক্তিক কোনো কারণ থাকতে পারে না। আসলে গত দুই বছর কাওরান বাজারের যে সিন্ডিকেট পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছে তারাই এবারও দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে কলকাঠি নাড়ছে। কারণ সেপ্টেম্বর মাস চলে গেছে, অক্টোবর চলে এসেছে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে না- এই সুযোগই তারা কাজে লাগিয়েছে। নবেম্বরের মাঝামাঝি বা শেষে বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসবে। তার আগে এক দেড় মাস সময়টাকে কাজে লাগাতে হবে। সেই সুযোগটাই ব্যবসায়ীরা কাজে লাগিয়েছে। এক্ষেত্রে তাদের অস্ত্র হিসেবে কাজ করেছে ভারতের বেঙ্গালুরুতে অতিবৃষ্টি। একেই কারণ হিসেবে দেখিয়ে ভারতের বাজারে দাম বেড়ে গেছে বলে গুজব ছড়িয়ে বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম ব্যবসায়ীরা বাড়িয়ে দিয়েছেন। বিগত ২০১৯ সালে প্রথমবার দেশে পেঁয়াজ নিয়ে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস ওঠে। অতীতেও দু’একবার পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বেড়েছে এবং সঙ্গে সঙ্গেই তা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। কিন্তু ২০১৯ সালের মতো দাম নিয়ে নাভিশ্বাস কখনও উঠেনি। ওই বছর সেপ্টেম্বরে ভারত হঠাৎ রফতানি বন্ধ করলে দেশের পেঁয়াজের বাজার অস্বাভাবিক অস্থির হয়ে ওঠে। দফায় দফায় বেড়ে তখন পণ্যটির দাম কেজি প্রতি ৩০০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছায়। গত বছর অবশ্য ভারত প্রথম রফতানি মূল্য বাড়িয়ে দেয়। পরবর্তীতে রফতানি বন্ধ করে দেয়। কিন্তু গত বছর (২০২০) দেশে সেপ্টেম্বর মাসে যথেষ্ট পরিমাণ পেঁয়াজ মজুদ ছিল। তারপরও দাম বাড়তে বাড়তে দুইশ’ টাকায় ওঠে। তবে বিলম্বে হলেও এই দুই বছর বিকল্প উৎস থেকে সরকারী ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে আমদানি করে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করে সরকার। কিন্তু এবছরের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। এবার হঠাৎ করেই এভাবে অস্থির হলো কেন পেঁয়াজের বাজার? আসলে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের অক্টোবর কারসাজির কারণেই অস্থির হয়ে উঠছে পেঁয়াজের বাজার। গত দুই বছর কারা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছে, কারা কিভাবে দাম বাড়িয়ে মাঝখান থেকে মুনাফা লুটে নিয়েছে তার একাধিক প্রতিবেদন ইতোপূর্বে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু সরকার তথা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সে বিষয়ে গা করেনি। এবারও মন্ত্রণালয় পুরোপুরি ব্যর্থ। তাদের কাছে ‘দাম বৃদ্ধি হচ্ছে’ এ জাতীয় আগাম কোন খবর ছিল না। বাজারে দাম বৃদ্ধির পর তারা নড়েচড়ে বসেছে। এটা কেন হচ্ছে। সরকারের প্রশাসন যন্ত্র কি করছে। গত দুই বছর ধরে অক্টোবর এলেই পেঁয়াজের দাম বাড়ে, তাহলে আগে থেকেই পেঁয়াজের মজুদ পরিস্থিতি, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করে আগাম ব্যবস্থা নেয়া হলো না কেন? সব কিছুতেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার জন্য বসে থাকতে হবে কেন? পেঁয়াজই নয় শুধু, দাম বৃদ্ধির দৌড়ে আছে চাল, ডাল, চিনি, ভোজ্যতেলসহ আরও কয়েকটি নিত্যপণ্য। অথচ এসব পণ্যের মজুদ চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি আছে দেশে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে (জুলাই- সেপ্টেম্বর) বেশি আমদানি হওয়ায় মজুদ বেড়েছে। যা দিয়ে আগামী ৩ মাস নির্বিঘেœ চলবে দেশ। এছাড়া নবেম্বর-ডিসেম্বরে বাজারে আসবে নতুন পেঁয়াজ ও ডাল। সরবরাহ ঠিক রাখতে কাস্টমস বিভাগ ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ কাজ করছে। সীমান্তবর্তী এলাকায় পণ্যের পরিবহন নির্বিঘœ রাখার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এরপরও নিত্যপণ্যের দাম বাগে আনতে পারছে না সরকার। কিছু ব্যবসায়ী আন্তর্জাতিক বাজারের অজুহাত দিয়ে অযৌক্তিকভাবে বাড়াচ্ছে পণ্যের মূল্য। অসাধু ব্যবসায়ীরাই নানা কারসাজির মাধ্যমে এসব পণ্যের মূল্য বাড়াচ্ছে। সরকারের উচিত কোন্ ব্যবসায়ীরা দেশের কোন্ পয়েন্ট থেকে পণ্যমূল্য বাড়াচ্ছে তা খতিয়ে দেখা। অসাধু ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে আজীবনের জন্য তাদের এবং তাদের আত্মীয়স্বজনের ব্যবসা-বাণিজ্যের লাইসেন্স বাতিল করে দেয়া, যাতে ওই ব্যবসায়ী পরিবারের আর কেউ কোন দিন এই দেশে ব্যবসা করতে না পারে। সেই সঙ্গে প্রচলিত আইনে যে শাস্তির বিধান আছে তা নিশ্চিত করা। অন্যথায় এই অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি কোনভাবেই ঠেকানো যাবে না। আপাতত জানা গেছে, দ্রæত পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার তিন কৌশল গ্রহণ করেছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বাড়াতে ভারতের পাশাপাশি তুরস্ক, মিসর ও মিয়ানমার থেকে আমদানি, সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবির মাধ্যমে ট্রাকসেলে বিক্রি কার্যক্রম শুরু করা এবং অবৈধভাবে পেঁয়াজের মজুদ বৃদ্ধিকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা। ইতোমধ্যে ট্রাকে করে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে বাজারে আরও বেশি পরিমাণে পেঁয়াজ ট্রাকে বিক্রি করা দরকার। যাতে পেঁয়াজের কোন ঘাটতি বাজারে না থাকে। এছাড়া, দাম কমাতে পেঁয়াজের ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহারের নির্দেশনা দিয়ে এনবিআরকে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পেঁয়াজের পাশাপাশি চিনি ও তেলের ওপর থেকেও এ্যাডভান্স ট্যাক্স প্রত্যাহারের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ কাজটি আরও আগে করা উচিত ছিল। বিলম্বে হলেও উদ্যোগটি ভাল। তবে বিলম্বের কারণে এই উদ্যোগের সুফল কতটা ভোক্তারা পাবেন তা নিয়ে সংশয় আছে। অতীতের মতো দেখা যাবে, এর সুফল ব্যবসায়ীরা পকেটে ভরে নেবে। ফলে এই উদ্যোগের ফলে সত্যিকার অর্থে বাজারে আমদানিকৃত পণ্যের দাম যাতে কমে এবং সুফল ভোক্তারা পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। সব ধরনের পণ্যের দামই লাগাম ছাড়া। কোন পণ্যের দাম স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। কিন্তু বাজারে কোন সঙ্কট নেই। আর পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে সব শ্রেণীর ক্রেতারাই ভোগান্তিতে পড়ছেন। বাজারে পর্যাপ্ত মজুদ ও সরবরাহ থাকার পরও অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে ভোক্তার পকেট কাটছে। যে সব পণ্য আমদানি করা দরকার সেগুলো দ্রæত এনে পর্যাপ্ত মজুদ গড়ে তুলতে হবে। সে জন্য দ্রæত শুল্ক পরিহারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে গোয়েন্দা সংস্থাসহ বাজার মনিটরিং এজেন্সিগুলোকে নিয়মিতভাবে নজর রাখতে হবে। ব্যবসায়ীদের এলসি করার ক্ষেত্রে নির্দেশ দিতে হবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে। মহামারী করোনার সময় বেসরকারী চাকরিজীবীদের বেতন অর্ধেক হয়ে গেছে। অনেকে চাকরি থেকে ছাঁটাই হয়েছেন। সব কিছু স্বাভাবিক হলেও এখনও কর্মসংস্থান বাড়েনি। বেতন-ভাতাও এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক হয়নি। ফলে এ অবস্থায় একযোগে সব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সত্যিই কষ্টে আছে মানুষ। অনেক নিত্য পণ্যের দামই এখন স্বল্প আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষকে খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রে কাটছাঁট করতে হচ্ছে। স্কুল-কলেজ খুলে গেছে। সেখানেও ব্যয় বেড়ে গেছে। ফলে সাধারণ মানুষের পক্ষে সংসার সামলানো কষ্টকর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সর্বশেষ, এক বাণিজ্যমন্ত্রীর আমলে তিন দফায় দেশে পেঁয়াজ নিয়ে কেলেঙ্কারি। এ নজির দেশের অন্য কোন বাণিজ্যমন্ত্রীর আমলে নেই। বিএনপি সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদের সময়ে দেশে দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিক অবস্থায় চড়া ছিল। তার পুরো আমলেই ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে চড়া দামে পণ্য বিক্রি করে মুনাফা করে গেছে। কারণ তার আগের আওয়ামী লীগ আমলে ব্যবসায়ীরা এ ধরনের কারসাজি করার সুযোগ পায়নি সরকারের সর্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের কারণে। ওই সরকারের আমলে অবশ্য একবার পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের দ্রæত হস্তক্ষেপের কারণে এক সপ্তাহের মধ্যে বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসে। কিন্তু বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে হ্যাটট্রিক করলেন। ক্রিকেটে এ ধরনের হ্যাটট্রিক করলে হয় তো ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়ে যেতেন। কিন্তু বাজারে পণ্য মূল্যের ক্ষেত্রে এ ধরনের হ্যাটট্রিক করলে কি পুরস্কার দেয়া যায় তার বিচারের ভার ভোক্তাদের হাতেই ছেড়ে দিলাম। লেখক : সাংবাদিক
×