ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মুগ্ধপাঠে ‘নিহারণ’

প্রকাশিত: ২১:৩৭, ১১ জুন ২০২১

মুগ্ধপাঠে ‘নিহারণ’

কবি বঙ্গ রাখাল সম্পাদিত নিহারণ প্রকাশিত হয়েছে- বর্ষ ৮, সংখ্যা ৪, প্রচ্ছদ- আইয়ুব আল আমিন, মূল্য-৩০। এই সংখ্যায় রয়েছে কবিতা, প্রবন্ধ, অনুবাদ এবং গল্প। নিহারণ এমন একটি লিটলম্যাগ যা পাঠে পাঠক মনে সাহিত্যের তৃপ্তি পাবেন এ কথা জোর দিয়েই বলা যায়। এর আকৃতি অল্প পরিসর হলেও নানাবিধ সাহিত্য কাগজ-এর মাঝে নিহারণের জায়গা সুদৃঢ়। বাংলাদেশে অসংখ্য লিটলম্যাগাজিন বা ছোট কাগজ রয়েছে আবার তা ঝরেও গেছে। অনেকে চেঁচামেচি করেন ছোট কাগজ বলে কিন্তু সত্যিকার অর্থে কোন লিটলম্যাগ নেই, যা আছে তা সংকলন। এখানে যেন নিহারণ পড়ে আমি সেই সিন্ধুর সন্ধান পেয়েছি। একই সঙ্গে এ কথাও বলতে চাই পাঠক এটি পড়তে গিয়ে একটুও ক্লান্ত হবেন না। প্রথমেই শফিক আজিজ- এর প্রবন্ধ ‘প্রাচ্যে প্রাচ্যদর্শন ও উল্টো পুরাণ আখ্যান’ পাঠে মুগ্ধ হয়েছি। শফিক আজিজ তার এই লেখার মাধ্যমে বাংলাদেশের নাট্য ও সৃজনশীলতা বিস্তৃত করছেন, একেবারে খুঁটে খুঁটে বিষয়গুলো লিখেছেন। ঐতিহ্যবাহী বাঙলা নাট্যে একই সঙ্গে নৃত্যগীত, কৃত্য, কথা, বর্ণনা, কাব্য, রাগ রাগিণী, কাহিনী পরিবেশনার যে ধারা সমন্বিত এই অখণ্ড শিল্পধারার বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করেই তিনি শিল্প সাধনায় ব্রতী হলেন- এবং বাংলা নাটকে এক নব অধ্যায়ের সূচনা করলেন- সেলিম আল দীন সেসমব কথায় বলার চেষ্টা করেছেন। দ্বিতীয় প্রবন্ধটি কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের দ্াড়াও সুন্দর কাব্যগ্রন্থের, ‘আছে ও নেই’ এই কবিতা নিয়ে মামুন রশীদ -এর প্রবন্ধ অত্যন্ত ভাল লেগেছে কবিতার প্রথম কয়েকটি লাইন- ‘হাওড়া স্টেশনের প্লাফর্মে দাঁড়িয়ে আছে সেই পাগলটি/পৃথিবীর সমস্ত পাগলের রাজা হয়ে/সে উলঙ্গ, কেননা উন্মাদ উলঙ্গ হতে পারে, তাতে’। হামীম রায়হান এর একটি প্রবন্ধ - বাঙালী ঐতিহ্য ধারক সাহিত্যবিশারদ আমি কাঙ্গালের ব্যবসায়ী। পুরাতন পুঁথি কঙ্কালের মতো কিন্তু আমি তার ভেতর যুগ যুগান্তরের রক্ত ধমনী ও নিঃশ্বাসের প্রবাহধ্বনি শুনিয়াছি। আমার বিশ্বাস সে যুগের শিল্প স্রষ্টাদের পক্ষে যা সত্য ছিল, আজ তার বিশেষ ব্যতিক্রম যে নাই, পুঁথি ও সাহিত্য জীবন নিয়ে এমনই চিন্তা ছিল আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদের। হামীম রায়হান যথাযথ সম্মান দেখিয়েছেন বিশারদকে এবং তার লেখা পাঠকের হৃদয়ে গেঁথে থাকবে বলে আমি মনে করি। সজল দেউরী কলম ধরেছেন শুধু ক্ষমতায়ন নয়, চাই সমতায়ন- সূচনা করেন, একুশ শতাব্দীর পূর্বেকার সময়ে বঙ্গ নারীর জীবন ব্যবস্থা পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্টভাবে বলা চলে- সে সময়ে নারীর জন্মকেই আজন্ম পাপ হিসেবে বিবেচনা করা হত, কেননা তখনকার সময়ে পুরুষেরা নারীদের প্রতি তেমন আচরণ করত যেমন একটি যন্ত্রের সঙ্গে করা হয়। সজল দেউরী নারী-পুরুষ সমান অধিকার নিয়ে বিভিন্ন উদাহরণ, সত্য বাণী এবং ব্যাখ্যা, চুলচেড়া বিশ্লেষণ করেছেন। এবার শুরু হয়েছে একটি অনুবাদ কবিতা, সত্যি বলছি, আমি জীবনটা ডুবিয়ে দিয়েছি কবিতায়, তাই কবিতার প্রতি আমি আহত পাখি, গুলি খেয়ে পাখা ঝাপটাতে থাকি। ডেনিস ব্রুটার্সের কবিতা অনুবাদ করেছেন শফিক সেলিম-সকলেই মানুষ/মানবতার বীজ তাদের অন্তরে/সকলের মাঝে আমি এক ভিনদেশী পথিক। কবি মজিদ মাহমুদের কবিতা ‘পথের বাঁকে’ কতটা পথ হাঁটলাম-যতটা ব্যথা তুমি একাই বিছিয়েছ কবি মজিদ মাহমুদ কবিতায় প্রণয়ের ব্যথার বাণী প্রথম চরণেই যা আমি পড়ে মুগ্ধ হয়েছি। কবি রকিবুল হাসানের কবিতা ‘সব জলে ভেসে যায়’, আজাদুর রহমান, শীলা বিশ্বাস, কিং সউদ তাদের কবিতাগুলো পড়ে মুগ্ধছি মন্ত্রমুগ্ধের মতো। বঙ্গ রাখালের কবিতা ‘বাংলাদেশ মানে রক্তে নিমজ্জিত রাজপথ’। কবি শফিক হাসান এর ‘জঠর’ কবিতা তুলে এনেছেন- বাবা মা মাত্র-ই চক্রবন্দী স্বপ্নগুচ্ছ/কখনও সেগুলো নিছক রূপকথার/সন্তান ‘মানুষ ’ হবে, মুছবে দুর্দশা চিত্র। শাজান শীলন, মনিরুজ্জামান পলাশ, ফারুক আফিনদী, অপু শেখ, তুষার প্রসূন, ইমামুল মোত্তাকিন এবং আমিনুর রহমানদের কবিতাও অনেক ভাল লেগেছে। মামুন মুস্তাফার গল্প ‘জঙ্গি মেয়ে ও বেহালা বাদন’। নিহারণ পড়ে, আমি মুগ্ধ- নিহারণ বেঁচে থাকুক, চলতে থাকুক। রহিম ইবনে বাহাজ
×