ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

তৃতীয় লিঙ্গের আবাসন

প্রকাশিত: ২০:৫৪, ১০ জুন ২০২১

তৃতীয় লিঙ্গের আবাসন

দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর অতি ক্ষুদ্র একটি অংশ তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। সংখ্যায় নগণ্য হলেও তাদের আচরণ ও বিচরণ এত বেশি দৃশ্যমান হয় যা অন্যদের বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয় অনেক সময়। তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে জন্ম নেয়ার দায় তাদের সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হয় অত্যন্ত বিপন্ন অবস্থায়। স্থায়ী আবাস কেন্দ্র ব্যতিরেকে যত্রতত্র ঘুরে বেড়ানো এবং যেখানে আহার সেখানেই নিদ্রা এমন যাপিত জীবনে তারা শুধু অভ্যস্তই নয়, মানিয়ে নিতেও তৎপর। জন্মদাত্রী মায়ের কাছেও তাদের সেভাবে থাকা সম্ভব হয় না। তাদের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্যগুলো শারীরিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বৈকল্যের নিরিখেই গড়ে ওঠে। ব্যবহারে সংযত কিংবা শালীনতা ছাড়াও দৃষ্টিকটুভাবে বাকবিতÐা ও বিরক্তিকর হয়ে ওঠে প্রায়ই। ফলে ভাসমান এই অসহায় শ্রেণীটি সভ্য সমাজের একটা অংশ হয়েও মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য হয়। ফলে প্রতিদিনের জীবন-জীবিকার তাড়নায় তাকে পথে-প্রান্তরে, এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়াতে হয়। অসহ্য যানজটের মধ্যে থেমে থাকা গাড়ির ফাঁক ফোকড়ে তাদের রুজি রোজগারের ব্যবস্থা করাও প্রতিদিনের কর্মযোগ। স্থায়ী কোন সম্মানজনক পেশায় তাদের অনুপ্রবেশে যে মাত্রায় বিধিনিষেধÑসেখানে তারা সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে হিমশিম খায়। তাদের আয়ের প্রধান উৎস বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন পর্যায়ে চাঁদা আদায় করা। বাস কিংবা ট্রেনেও তাদের অবাধ গতিবিধি যাত্রীদের অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলে দেয়। কিংবা বিভিন্ন আবাসিক এলাকার সামনে-চারপাশে টহল দিয়ে বেড়ায় যাতে কোন নবজাতকের সন্ধান মেলে। খোঁজ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটা বড় অঙ্কের চাঁদা দাবি করাই শুধু নয়, আদায় করতেও ছাড়ে না। সেখানে আরও চমকপ্রদ ব্যাপার হলো পুত্র সন্তান হলে তার দাম হয় দ্বিগুণ কন্যা শিশুর চাইতে। এমন ছন্নছাড়া যাযাবরের মতো ঘুরে বেড়ানো এই তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন যজ্ঞের বিভিন্ন কর্ম প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কিছু সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে গণমাধ্যমে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার আকাক্সিক্ষত স্বপ্নের দুয়ারে পৌঁছাতে আশ্রয়ণ কর্মযোগ এক অবধারিত উন্নয়ন ধারা। যা গ্রামে গঞ্জে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবারিত করে গৃহহীনদের ঘর বানিয়ে দেয়া হয়। তেমন কর্মযোগের ধারায় তৃতীয় লিঙ্গের স্বল্প সংখ্যক মানুষের মাঝে স্থায়ী-আবাসন গড়ে দেয়ার খবরও সংশ্লিষ্টদের আশ্বস্ত করেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সহায়তায় ভ‚মি মন্ত্রণালয়ের গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প-২ এর আওতায় ৪০টি ঘরের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে তা তৃতীয় লিঙ্গের মাঝে হস্তান্তর করা হয়েছে শেরপুরে। জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব চাবি ও জমির কাগজ তৃতীয় লিঙ্গের হাতে তুলে দিয়ে দাফতরিক কর্ম সম্পাদন করেন। জেলা কর্তৃপক্ষের আরও কিছু দায়দায়িত্বও দৃশ্যমান হয়। তাদের ব্যবহারের জন্য হাঁড়ি-পাতিল, থাকার জন্য বিছানা ও চাদর তুলে দিয়ে অনন্য এক দায়িত্ব পালন সত্যিই এক দৃষ্টান্ত। স্থায়ী একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়ে তৃতীয় লিঙ্গের এই ক্ষুদ্র গোষ্ঠী আনন্দে অভিভূত। দীর্ঘদিনের অবহেলা, বঞ্চনা, বিড়ম্বনার আবর্তে পড়া এই অসহায় মানুষগুলো সত্যিই একটি স্থায়ী আবাস পেয়ে খুশীর চাইতে নিশ্চিত নিরাপত্তায় উদ্বেলিত। সরকারের পক্ষ থেকে এক ভিন্ন মাত্রার উদাহরণ উপস্থাপন করে যে নতুন কর্মধারা সূচিত হলো, তা সারাদেশে সম্প্রসারণের উদ্যোগ সময়ের অনিবার্য দাবি। করোনা কালের চরম দুঃসময়ে তারা জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে খাদ্য ও অর্থ সহায়তা পেয়েছে। শুধু থাকার ব্যবস্থা নয়, শ্রম বিনিয়োগ করে খাদ্য পণ্য উৎপাদনের সুযোগও থাকছে বসত বাড়ির এলাকায়। ৪০ শতক জমির ওপর একটি পুকুর এবং খালি জায়গায় আবাদ করে শাকসবজি ফলানোর সুযোগও তারা পাবে। ৮ একরের একটি খাস সরকারী জমিও সংযুক্ত আছে। প্রয়োজনে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের তা লিজ দেয়ার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। পুরো আবাসন এলাকার চারপাশে বৃক্ষরোপণ করে জায়গাটিকে পরিবেশবান্ধব করার বিষয়টিও দৃষ্টিনন্দন।
×