
চীনের বন্দরনগরী তিয়ানজিনে প্রায় এক দশক ধরে অর্ধসমাপ্ত পড়ে থাকা ৫৯৭ মিটার (১,৯৫৯ ফুট) উচ্চতার ‘গোল্ডিন ফাইন্যান্স ১১৭’ নামের সুউচ্চ ভবনের নির্মাণকাজ পুনরায় শুরু হতে চলেছে আগামী সপ্তাহেই, এমনটাই জানিয়েছে চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম।
২০০৮ সালে নির্মাণকাজ শুরু হওয়া ভবনটি ২০১৫ সালে চূড়ায় পৌঁছায়, কিন্তু চীনা শেয়ারবাজারে ধস এবং বিনিয়োগকারীর দেউলিয়া দশার কারণে তখনই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ২০২৭ সালের মধ্যে এটি সম্পন্ন হওয়ার আশা করা হচ্ছে।
‘হোটেল সহ অফিস ভবন’ থেকে শহরের পরিচয়
-
১১৭ তলা বিশিষ্ট এই ভবনটির নকশায় রয়েছে তিনটি অফিস জোন এবং উপরতলায় একটি পাঁচ তারকা হোটেল।
-
ভবনটির ‘ওয়াকিং স্টিক’ ডিজাইনের মাথায় রয়েছে ডায়মন্ড আকৃতির অ্যাট্রিয়াম, যেখানে থাকবে সুইমিং পুল এবং পর্যবেক্ষণ ডেক।
-
ভূমিকম্প এবং তীব্র বাতাস প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়েছে মেগা কলাম প্রযুক্তি।
নাম পরিবর্তন এবং নতুন বিনিয়োগ
নতুন নির্মাণ অনুমোদনে ভবনের নাম থেকে আগের ডেভেলপার গোল্ডিন প্রপার্টিজ এর নাম বাদ দেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অনুমতিতে প্রায় ৫৬৯ মিলিয়ন ইউয়ান (৭৮ মিলিয়ন ডলার) ব্যয়ের উল্লেখ রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ডেভেলপার পান সুতং, এক সময় হংকংয়ের অন্যতম ধনী ব্যবসায়ী ছিলেন। কিন্তু বাজারধসের পর প্রতিষ্ঠানটি লিকুইডেশনে চলে যায়।
রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপে স্থিতিশীলতা আনার চেষ্টা
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই প্রকল্প পুনরায় শুরুর পেছনে রয়েছে চীনের কেন্দ্রীয় সরকারের রিয়েল এস্টেট খাতে স্থিতিশীলতা ফেরানোর প্রয়াস।
ডিউক ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের অধ্যাপক কিয়াও শিটং জানান, এটি কেবল ভবন নির্মাণ নয়—বরং অর্থনীতিতে আস্থা ফিরিয়ে আনার সংকেত। তিনি বলেন, “এই প্রকল্প হয়তো লাভজনক নয়, কিন্তু এর গুরুত্ব প্রতীকী এবং রাজনৈতিক।”
অধরাই থেকে যাবে পুরনো স্বপ্ন?
২০১৫ সালে গোল্ডিন ফাইন্যান্স ১১৭ যখন চূড়ায় পৌঁছায়, তখন এটি হওয়ার কথা ছিল চীনের সর্বোচ্চ ভবন। কিন্তু এত বছরে এটি পেছনে ফেলেছে সাংহাই টাওয়ার, পিং আন ফাইন্যান্স সেন্টার এবং তিয়ানজিন CTF ফাইন্যান্স সেন্টার। এখন এটি সম্পন্ন হলেও চীনে তৃতীয় এবং বিশ্বে ষষ্ঠ সর্বোচ্চ ভবন হবে।
তবে চলমান সৌদি আরবের জেদ্দা টাওয়ার এবং দুবাইয়ের বুর্জ আজিজি সম্পন্ন হলে এর অবস্থান হবে বিশ্বে অষ্টম।
ভবিষ্যৎ কি উজ্জ্বল না অনিশ্চিত?
যদিও নতুন অনুমোদনে ভবনের আশপাশের বাণিজ্যিক করিডোর নির্মাণের কথাও রয়েছে, তবু অনেকে আশঙ্কা করছেন বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে কে সেখানে অফিস বা হোটেল নেবে?
বিশেষজ্ঞ কিয়াও শিটং বলেন, “এত বড় বিনিয়োগ... কিন্তু সত্যি বলতে, আমি জানি না কে ওই ভবনে জায়গা ভাড়া নেবে বা কিনবে।”
‘ভ্যানিটি প্রজেক্টে’ ফেরা নয়, বরং শহরের মর্যাদা রক্ষা
যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ লিভারপুলের অধ্যাপক ফেই চেন বলেন, এটি শহরের চিত্র এবং মর্যাদা রক্ষার বিষয়। তবে এটি মানেই নয় যে পুরনো মতো ভ্যানিটি প্রকল্পের যুগ ফিরে এসেছে। তিনি বলেন, “এই প্রকল্পগুলো স্থানীয় সরকারের শহর উন্নয়নের চেষ্টা—বিশ্বমঞ্চে নিজের অবস্থান জানানো।”
Jahan