ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২

আবার মব সন্ত্রাস

প্রকাশিত: ২০:২১, ৫ জুলাই ২০২৫

আবার মব সন্ত্রাস

বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) কুমিল্লার মুরাদনগরের ভাঙ্গরা বাজারের করইবাড়ি গ্রামে মা, ছেলেমেয়েসহ একই পরিবারের ৩ জনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া নিহতের আরেক মেয়ে গণপিটুনির শিকার হলে প্রথমে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে তার অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, হত্যাকাণ্ডের শিকার পরিবারটি প্রায় তিন দশক ধরে মাদকের কারবারে জড়িত। নিহতদের পরিবারের বিরুদ্ধে থানায় মামলা রয়েছে। তাদের কর্মকাণ্ডে স্থানীয় অনেকেই হয়রানির শিকার হয়েছেন। ফলে এলাকার লোকজন তাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে। একটি পরিবারের ওপর হাজার মানুষের সহিংস আক্রামণ সামাজিক অবক্ষয়ের চূড়ান্ত রূপ। ঘটনার পর গ্রেপ্তার আতঙ্কে এলাকা প্রায় পুরুষশূন্য। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পুলিশের অভিযান চলছে। ইতোমধ্যে ঘটনার ৩৯ ঘণ্টা পর থানায় মামলা হয়েছে এবং সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত আট জনকে গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া গিয়েছে।
মুরাদনগরের মব সন্ত্রাসের নেপথ্যে জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততা স্থানীয় ক্ষমতাকেন্দ্রীক রাজনীতির অতি কদর্য রূপ।
ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থার পর থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নানা কারণে সংঘবদ্ধ হয়ে মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে, যা উদ্বেগজনক। কাউকে গণপিটুনি দেওয়া হচ্ছে, কারও বাসায় ঢুকে লুটপাট করা হচ্ছে, কোথাও থানা ঘেরাও করা হচ্ছে, পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে, কাউকে বাধ্য করা হচ্ছে পদত্যাগে। এসব কর্মকাণ্ড সমাজে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। মব জাস্টিস বা মব ভায়োলেন্স কোনো সভ্য সমাজে কাম্য নয়। এই পাশবিক সংস্কৃতি সমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। এতে অনেক নির্দোষ মানুষের মৃত্যু হতে পারে। এই অপসংস্কৃতি বেড়ে চলার কারণ বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা ও আস্থাহীনতা। 
দেশে মব সন্ত্রাস রোধে সরকার, প্রশাসন, মিডিয়া এবং সাধারণ নাগরিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আইনের শাসন অন্যতম আলোকবর্তিকা, যেখানে ন্যায়বিচারের নির্মল প্রভা প্রতিটি মানুষের দুয়ারে পৌঁছাতে পারে। জনতার উত্তপ্ত রোষ ক্ষণিকের দাবানল সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু তা কেবল ধ্বংসের পথ দেখায়। সুবিচারের শীতল স্পর্শ সেখানে অধরা থেকে যায়। তাই আসুন সবাই সমাজের বিদ্যমান নানা অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই এবং আস্থা রাখি।

প্যানেল

×