ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন

প্রকাশিত: ২০:৩৪, ৫ মে ২০২১

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন

ভারতের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা এবার যথেষ্ট বেশিই ছিল। এখানে মমতা ব্যানার্জীর তৃণমূল কংগ্রেস বিগত দুই মেয়াদে সরকার গঠন করেছে। এবার কেন্দ্রীয় সরকার ও রাষ্ট্রযন্ত্র যেন সর্বাত্মক লড়াইয়ে নেমেছিল মমতাকে হারিয়ে পশ্চিমবঙ্গের দখল নিতে। নির্বাচনী প্রচার শুরু হওয়ার পর ১৫ বার এখানে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ৬২ বার এসেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। রীতিমতো যুদ্ধংদেহী মনোভাব। কেন্দ্রীয় সরকার সার্বিক প্রভাব বিস্তার করতে চেয়েছে ভোটারদের ওপর। কিন্তু ফল হয়েছে উল্টোই। মমতার দল এবার যত ভোট পেয়েছে বিগত কোন নির্বাচনেই সে পরিমাণ ভোট পায়নি। মমতা ঝড়ের প্রতিপক্ষ হিসেবে নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহ ম্যাজিকের কথা জোরেশোরে প্রচার করা হয়েছিল। অথচ চূড়ান্ত বিচারে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠনের নিরঙ্কুশ রায় পেয়েছেন মমতা ব্যানার্জী। অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের নাগরিকরা একদিকে যেমন স্থিতিশীলতার পক্ষে থেকেছে, অন্যদিকে তারা সাম্প্রদায়িকতাকেও রুখে দিয়েছে। ফলে আসল ম্যাজিক দেখালেন মমতাই। বিজেপি উড়ে গেল বাঙালীর ঝড়ে। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গেই ভোট হয়েছে ভারতের আরও চারটি রাজ্যে- তামিলনাড়ু, কেরালা, পন্ডিচেরি ও অসমে। কিন্তু সর্বভারতীয় স্তরেও গণমাধ্যমের মনোযোগের কেন্দ্রে ছিল পশ্চিমবঙ্গ। কারণ এবারের নির্বাচনে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বনাম প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি! গত প্রায় দুই মাস ম্যারাথন ভোটগ্রহণ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। এ সময়ে পায়ে আঘাত পেয়ে হুইলচেয়ারে ঘুরে প্রচারণা চালান মুখ্যমন্ত্রী মমতা। বিজয়ের বরমাল্য তার কণ্ঠেই এলো। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতির পালে হাওয়ার বদল ঘটেছে বারবার। একেকটি ঢেউ এসে একেক যুগ পার করেছে বলা চলে। পশ্চিমবঙ্গ তিন দশক বামদের ঘাঁটি ছিল। সেই বামদের সরিয়ে পরপর দুইবার ক্ষমতায় আসে তৃণমূল কংগ্রেস। এবার বিজেপিকে হারিয়ে তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসছে দলটি। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পশ্চিমবঙ্গে জয় না পেলেও বড় ভিত্তি পেয়েছে বিজেপি। তারা প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসছে। যেখানে কিছুদিন আগেও তাদের দাঁড়ানোর জায়গা ছিল না, সেখানে তারা শক্ত ভিত্তি পেয়েছে, এটা সত্য। অধুনা করোনা কাঁপিয়ে দিচ্ছে ভারতকে। কমপক্ষে ১৯টি দেশে ছড়িয়েছে করোনার ভারতীয় ভয়ঙ্কর ধরন। টানা ১০ দিন ধরে দেশটিতে সংক্রমণ তিন লাখের উর্ধে। সংক্রমণ ও মৃত্যুতে যেমন রেকর্ড হচ্ছে, তেমনি সঙ্কট বাড়ছে স্বাস্থ্যসেবা খাতে। ভারতজুড়ে হাসপাতালগুলোয় শয্যাসঙ্কট দেখা দিয়েছে। শয্যা না পেয়ে হাসপাতালে আঙ্গিনায় সেবা নেয়ার চেষ্টা করছেন অনেক রোগী। তীব্র সঙ্কট রয়েছে অক্সিজেনেরও। এই সঙ্কটের অভিযোগ যাচ্ছে নির্বাচনের ঘাড়েও। বলা হচ্ছে, নির্বাচনী প্রচার ও ভোটগ্রহণের কারণে কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ বেড়েছে। আর মোদি ও অমিত শাহ এই মহামারীর চেয়ে নির্বাচনকে গুরুত্ব দিয়েছেন বেশি। নাগরিকরা এটিকে ভালভাবে নেয়নি। তার প্রভাব পড়েছে ভোটের ফলে। দুই-তৃতীয়াংশের অধিক আসনে মমতা ব্যানার্জীর দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিজয়ের পেছনে অনেক কারণই রয়েছে। তবে মমতার দেয়াল লিখন ‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়’ কথাটির মধ্যে ‘বহিরাগত’দের পশ্চিমবঙ্গে স্থান না দেয়ার স্পষ্ট বার্তা ছিল। এ দফা অন্তত বাংলার মেয়েরই বিজয় নিশ্চিত হলো।
×