ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভোগ্যপণ্যের বাজার স্বাভাবিক রাখতে চাল আমদানি : অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১৯:৩৪, ৭ এপ্রিল ২০২১

ভোগ্যপণ্যের বাজার স্বাভাবিক রাখতে চাল আমদানি : অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ভোগ্যপণ্যের বাজার স্বাভাবিক রাখতে চাল আমদানি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, প্রয়োজনের অতিরিক্ত চাল ও গম কেনা হচ্ছে না। বেশি চাল কেনা হলে দেশের কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজন মতো চাল আমদানি করা হচ্ছে। করোনা সংক্রমণরোধে দ্বিতীয় দফা বিধিনিষেধের কারণে কাজ হারানো নিম্নআয়ের মানুষের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যখন যে ব্যবস্থা প্রয়োজন সেটা নেয়া হবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। সরকারের গুদামে মজুদ বাড়াতে আরও দেড় লাখ টন চাল আমদানিসহ ১ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ের ছয় ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। এলক্ষ্যে সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনে ক্রয় সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। বুধবার দুপুরে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ভার্চ্যুয়ালি অর্থনৈতিক বিষয়ক সংক্রান্ত ও সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব বলেন। অর্থমন্ত্রী জানান, প্রয়োজনের অতিরিক্ত চাল ও গম কেনা হচ্ছে না। সরকারের বেশি চাল ও গম কেনার ইচ্ছাও নেই। কারণ বেশি চাল কিনলে আমাদের কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। তবে ভোগ্যপণ্যের বাজার স্বাভাবিক রাখতে এ বছর বেশি চাল আমদানি করতে হয়েছে। চাল আমদানি হচ্ছে বলেই চালের দাম আর বাড়েনি। এখন ভোক্তারা ন্যায্যমূলে চাল কিনতে পারছেন। অর্থমন্ত্রী এর আগে চাল সংক্রান্ত এক বৈঠকে জানিয়েছিলেন, এ বছর আগাম দুদফা বন্যার কারণে ধান উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে চাল আমদানির প্রয়োজন পড়ে। তবে এবার ধানের ফলন ভাল হলে আমাদের আর আমদানিতে যেতে হবে না। সরকারের মজুদ বাড়াতে দেড় লাখ টন চাল আমদানি ॥ অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় সরকারী পর্যায়ে ভারতের একটি কৃষি বিষয়ক সরকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১ লাখ টন চাল আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অন্য দিকে ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির সভায় ভারতের বেসরকারী কোম্পানি পি কে এগ্রি লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের কাছ থেকে ৫০ হাজার টন চাল আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে প্রায় ১৭৫ কোটি টাকা। সরকার গত জানুয়ারি থেকে চাল আমদানির উদ্যোগ নিলেও মজুত দিন দিন কমছে। গত ৪ এপ্রিলে খাদ্যের মজুত ছিল ৪ লাখ ৮৮ হাজার টন, যার মধ্যে চাল ছিল ৩ লাখ ৯৯ হাজার টন। গত ২৪ মার্চ ভারত থেকে ৫০ হাজার টন চাল আমদানির প্রস্তাবের অনুমোদন দেয় সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বৈঠকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন খাদ্য অধিদফতর কর্তৃক মেসার্স পিকে এগ্রি লিংক প্রাইভেট লিমিটেড এর কাছ থেকে ৫০ হাজার টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রতিটন চালের দাম পড়বে ৪১১ দশমিক ৯৩ মার্কিন ডলার। এতে মোট ব্যয় হবে ১৭৪ কোটি ৬৫ লাখ ৮৩ হাজার ২০০ টাকা। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর অনেক বেশি চাল আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে, সেই চাল কি ঠিকমতো দেশে ঢুকছে কিনা জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, চাল আমাদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে আমাদের যতটুকু প্রয়োজন সেই পরিমাণ। কিন্তু সেখান থেকে যখন কোন সরবরাহকারী তা সময় মতো দিতে পারে না তখন আমরা এটাকে পরিবর্তন করে আরেক জায়গায় চলে যাই। তিনি বলেন, খাদ্য মন্ত্রণালয় কৃষি মন্ত্রণালয়কে সাথে নিয়ে একদম ইন্টিগ্রিটেড ওয়েতে দেখে কি পরিমাণ চাল দরকার। এগুলো নির্ধারন হয় আমাদের বর্তমান ও আগামীর প্রয়োজন সামনে রেখে। আমাদেও পরবর্তী ফসল কখন আসবে, সেটিকে মাথায় রেখে আমাদের কাজটি করতে হয়। করোনার সংক্রমণে দেশজুড়ে দ্বিতীয় দফা বিধিনিষেধে কাজ হারানো নিম্নআয়ের মানুষের জন্য সরকার কী ব্যবস্থা নিচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, জনগণের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যখন যে ব্যবস্থা প্রয়োজন সেটা নেওয়া হবে। সেটা আপনাদের নিশ্চিত করতে পারি। এ বিষয়ে সরকারে আরেকটা উইং কাজ করে তারা আরও বলতে পারবেন। গত বছর সরকারের সব প্রণোদনা প্যাকেজ আপনার মন্ত্রণালয় থেকে ঘোষণা করা হয়েছে এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্যাকেজগুলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ফিক্সডআপ করে দিয়েছিলেন, আমরা উনার পক্ষে বাস্তবায়ন করেছি। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, দেশের মানুষের যাতে কল্যাণ হয়, ক্ষতি না হয়, আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে সেটাই করা হবে। ছয় ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন ॥ অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র ১২তম এবং সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র ১৪তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য ২টি এবং ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য ৮টি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। এরমধ্যে ক্রয় সংক্রান্ত কমিটিতে উপস্থাপিত প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ৪টি, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ১টি, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ১টি, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ১টি এবং সেতু বিভাগের ১টি প্রস্তাব ছিল। এরমধ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের একটি ক্রয় প্রস্তাবে কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়নি। এছাড়া গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন গণপূর্ত অধিদপ্তর অপর একটি প্রস্তাবে পুনঃদরপত্রের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ অনুমোদিত ৬ টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ১ হাজার ৫৬৬ কোটি ৭১ লাখ ৭৯ হাজার ১৬০ টাকা। তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনে নীতিগত অনুমোদন ॥ বাংলাদেশ ৩য় সাবমেরিন ক্যাবল -এ যুক্ত হতে যাচ্ছে। এলক্ষ্যে সবমেরিন ক্যাবল স্থাপনে সংশ্লিষ্ট অংশের ক্রয় কাজের জন্য রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে এ সংক্রান্ত ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। বৈঠকে কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সংযুক্ত ছিলেন। বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড.শাহিদা আক্তার অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. শাহিদা আক্তার বলেন, বৈঠকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অধীন বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃক তৃতীয় সবামেরিন ক্যাবল স্থাপন সংশ্লিষ্ট অংশের ক্রয় কাজ রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে জনস্বার্থে এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৬ কনসোর্টিয়ামের নিজস্ব ক্রয় প্রক্রিয়া অনুযায়ী ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে অতিরিক্ত সচিব জানান। সড়ক ও মহাসড়ক উন্নয়নে তিন প্রস্তাব অনুমোদন ॥ শরীয়তপুর-ইব্রাহিমপুর ফেরী ঘাট পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন ও আশুগঞ্জ নদীবন্দর- সরাইল- ধরখার- আখাউড়া স্থলবন্দর মহাসড়ককে চার লেনে জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণের পূর্তকাজের তিনটি পৃথক প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৯৮ কোটি ৬০ লাখ ৭৩ হাজার ৬৩৯ টাকা। ড. শাহিদা আক্তার বলেন, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অধীন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কর্তৃক ‘শরীয়তপুর (মনোহর বাজার)-ইব্রাহিমপুর ফেরী ঘাট পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং-ডব্লিউপি-২ এর পূর্ত কাজের অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। কাজটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে (১) রিলায়েবল বিল্ডার্স লিমিটেড,(২) এমডি ময়েনউদ্দিন (বাঁশি) রিমিটেড এবং (৩) ওরিয়েন্ট ট্রেডিং অ্যান্ডবিল্ডার্স লিমিটেড। প্রকল্পে ব্যয় হবে ১০৩ কোটি ৩৭ লাখ ৪৪ হাজার ৩৬ টাকা। তিনি বলেন, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অধীন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কর্তৃক ‘শরীয়তপুর (মনোহর বাজার)- ইব্রাহিমপুর ফেরী ঘাট পর্যন্তসড়ক উন্নয়ন’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং-ডব্লিউপি-০৩ এর পূর্ত কাজ যৌথভাবে (১)এমডি বদরুল ইকবাল লিমিটেড(২)হাসান টেকনো বিল্ডার্স লিমিটেড এবং (৩)ওয়েস্টার কন্সট্রাকশন অ্যান্ড শিপিং কোম্পানি লিমিটেড বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পে ব্যয় হবে ১০৬ কোটি ৮৪ লাখ ৭০ হাজার ৯১৫ টাকা। তিনি বলেন, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অধীন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কর্তৃক ‘আশুগঞ্জ নদীবন্দর- সরাইল- ধরখার- আখাউড়া স্থলবন্দর মহাসড়ককে চার লেনে জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং ডব্লিউপি-০৩ এর পূর্ত কাজ সম্পাদন এবং রক্ষণাবেক্ষণ কাজে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ভারতের আফকন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড এর দরপত্রে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে ব্যয় হবে ৭৮৮ কোটি ৩৮ লক্ষ ৫৮ হাজার ৬৮৮ টাকা। মেঘনায় সেতু নির্মাণে ৬ পরামর্শ প্রতিষ্ঠান নিয়োগ ॥ মেঘনা নদীর উপর শরীয়তপুর-চাঁদপুর সড়কে ও গজারিয়া মুন্সিগঞ্জ সড়কে সেতু নির্মাণে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা এবং মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে ৬ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ২৪৩ কোটি ১৮ লাখ ৫৯ হাজার ৫৬৩ টাকা। সেতু বিভাগের অধীন সেতু কর্তৃপক্ষ কর্তৃক চাঁদপুর ও শরীয়তপুর জেলার মধ্যবর্তী মেঘনা নদীর উপর শরীয়তপুর-চাঁদপুর সড়কে ও গজারিয়া মুন্সিগঞ্জ সড়কে সেতু নির্মাণে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা এবং মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে যৌথভাবে (১)স্পেনের টেকনিকা ওয়াই.প্রয়েকটস এস.এ (২) জাপানের নিপ্পন কোই কোম্পানি লিমিটেড (৩)দক্ষিণ কোরিয়ার দোহওয়া ইঞ্জিনিয়ার্স কোম্পানি লিমিটেড, (৪)বাংলাদেশের ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালট্যান্ট লিমিটেড (৫) বিসিএল অ্যাসোসিয়েটস এবং (৬) ডেভ কনসালট্যান্ট লিমিটেডকে নিয়োগের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে ব্যয় হবে ২৪৩ কোটি ১৮ লাখ ৫৯ হাজার ৫৬৩ টাকা।
×