ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রেনে জন্ম নেয়া ‘মিতালী’ বাড়ি গেলো ট্রেনে করেই

প্রকাশিত: ১৭:৪২, ৭ এপ্রিল ২০২১

ট্রেনে জন্ম নেয়া ‘মিতালী’ বাড়ি গেলো ট্রেনে করেই

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ দিনাজপুরে চলন্ত আন্তঃ নগর ট্রেনে জম্ম নেয়া নবজাতক শিশু ও তার মাকে বিশেষ একটি গ্যাংকার ট্রেনযোগে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে রেলওয়ে বিভাগ।আজ বুধবার দুপুর ২টার দিকে দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে একটি গ্যাংকার ট্রেনে শিশু মিতালি ও তার পরিবারকে বাড়িতে পাঠানো হয়। এ সময় বাংলাদেশ রেলওয়ে লালমনিরহাট বিভাগীয় ব্যবস্থাপক শাহ সুফী নুর মোহাম্মদ ও দিনাজপুর রেল স্টেশনের সুপার জিয়াউর রহমানসহ রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। শিশু মিতালীর মা মুক্তি পারভীন বলেন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আমাদের যে উপকার করলো, আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবো। আমার বিপদের সময় তারা অনেক করেছে। আমার মেয়ের নাম তারা ‘মিতালী’ রেখেছে। এতে আমি অনেক খুশি। বাংলাদেশ রেলওয়ে লালমনিরহাট বিভাগীয় ব্যবস্থাপক শাহী সুফি নুর মোহাম্মদ বলেন, মুক্তি পারভীন এবং তার নবজাতক পুরোপুরি সুস্থ। আমরা গ্যাংকার নিয়ে চেকিংয়ে বেরিয়েছিলাম যে, আমাদের রেলওয়ের লোকজনরা করোনাকালীন সময়ে অলস সময় পার করছেন কি না সেটা দেখতে। পাশাপাশি রেললাইন ও অন্যান্য কোনো মেরামতের কাজ রয়েছে কি না তা যাচাই করার জন্য। এরইমধ্যে আমরা যখন জানতে পারলাম গত ৪ এপ্রিল ট্রেনে জন্ম নেয়া নবজাতক ও তার মাকে হাসাপাতাল থেকে ছুটি দেয়া হবে, তখন করোনাকালীন সময়ে লকডাউনের মধ্যে মা ও সন্তানের যাতায়াতের জন্য অন্য যেকোনো মাধ্যমের চেয়ে ট্রেন নিরাপদ বলে মনে হলো। আর যেহেতু আমাদের সুযোগ রয়েছে তাই আমরা এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মা ও নবজাতককে আমাদের গ্যাংকারে করে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। তিনি বলেন, সম্ভবত এটাই প্রথম কোনো ট্রেনের নামে সন্তানের নাম রাখা হলো। আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম, তার বাবা-মা এতে রাজি হয়েছে। দিনাজপুর স্টেশন সুপার এবিএম জিয়াউর রহমান জানান, গত রবিবার ট্রেনটি দিনাজপুরে আসার পর ঘটনাটি জেনে আমি ট্রেনটি আটকে রাখি। ট্রেনটি নির্ধারিত সময়ের ১৭ মিনিট পর ছেড়ে যায়। আমরা সকল প্রকার সহযোগীতা দিয়ে প্রসূতি মা মুক্তি পারভীন ও নবজাতককে নিরাপদে ট্রেন থেকে নামিয়ে বিনা ভাড়ায় অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছি। পরবর্তীতে বিষয়টি রেলওয়ে লালমনিরহাট বিভাগীয় ব্যবস্থাপক শাহ সুফী নুর মোহাম্মদকে জানাই। তিনি আমাকে শিশু সন্তানটির নাম মিতালী রাখার জন্য বলেন। রেল সুপার বলেন, রবিবার দুপুরে রেলওয়ের একটি গ্যাংকার ট্রেনে শিশু মিতালি ও তার পরিবারের অন্যানদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেই। গ্যাংকারটি রেললাইন রক্ষণাবেক্ষণ কাজে নিয়োজিত ছিলো। প্রসঙ্গত, গত ৪ এপ্রিল দ্রুতযান ট্রেনে কন্যা সন্তান জন্ম দেন মুক্তি পারভীন। সেই সময় চিকিৎসার জন্য মা মুক্তি পারভীন ও তার স্বামী মনসুর আলী দিনাজপুরে আসছিলেন। তাকে ট্রেনের মধ্যে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সব ধরনের সহায়তা দিয়ে সন্তান ভূমিষ্টে সহায়তা করে। সেদিন ওই ট্রেনে নতুন অতিথির আগমনের জন্য আন্তঃনগর দ্রুতযান ট্রেন নির্ধারিত সময়ের ১৩ মিনিট পর দিনাজপুর স্টেশন ছেড়ে গিয়েছিল। প্রসূতি মা মুক্তি পারভীন ও তার নবজাতক শিশুটিকে দিনাজপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের গাইনী ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছিলো। তখন থেকেই মা ও নবজাতক শিশু মিতালী চিকিৎসাধীন ছিলেন। বাড়িতে যাওয়ার সময় মুক্তি পারভীনের সঙ্গে ছিলেন স্বামী মনসুর আলী ও বড় মেয়ে মুসফি (২)। এ সময় দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশনে এক আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। রেলওয়ের স্টাফরা সবাই হাত নেড়ে নবজাতক ও তার পরিবারকে বিদায় জানান।
×