ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চামড়া শিল্পের সুরক্ষায়

প্রকাশিত: ২০:০৭, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১

চামড়া শিল্পের সুরক্ষায়

পবিত্র ঈদ-উল-আজহায় প্রতিবছর কোরবানির চামড়ার দাম নির্ধারণসহ বেচাকেনা নিয়ে নানা তুঘলকি কাণ্ড তথা ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে এক শ্রেণীর ট্যানারি মালিক ও চামড়া ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়ে সরকার দাম বেঁধে দিলেও প্রায়ই তা কার্যকর হয় না। ফলে কাঁচা চামড়ার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা প্রায়ই বঞ্চিত হন চামড়ার ন্যায্য দাম থেকে। সংরক্ষণ ও লবণজাতকরণের অভাবে এ সময়ে বিপুল পরিমাণের কাঁচা চামড়া ফেলে দেয়াসহ মাটিচাপা দেয়ার ঘটনাও ঘটে। প্রতিবেশী দেশে কাঁচা চামড়া বা ব্লু লেদার পাচারের খবরও আছে। অথচ চামড়া শিল্পের সুরক্ষায় এবং দাম নিশ্চিতকরণে এ সময়ে স্বল্পসুদে বিপুল অঙ্কের অর্থ ঋণ দিয়ে থাকে ব্যাংকগুলো। চামড়া শিল্পের মালিকরা প্রায়ই এর অপব্যবহার করে থাকেন। ফলে পোশাক খাতের পরেই দ্বিতীয় বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের রফতানি পণ্য হওয়া সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে পারছেন না চামড়া ব্যবসায়ীরা। এর জন্য সাভারের চামড়া শিল্পনগরীর অসম্পূর্ণ ইটিপি তথা বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও দায়ী অনেকাংশে। অতঃপর কাঁচা চামড়ার দাম নিশ্চিতকরণসহ চামড়া শিল্পের সুরক্ষায় সরকার কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে কমিউনিটি পর্যায়ে প্রান্তিক ক্ষুদ্র চামড়া ব্যবসায়ীদের জন্য চামড়া সংরক্ষণাগার নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে (পিপিপি) সারাদেশে নির্মাণ করা হবে ছয় শ’ ছোট-বড় গুদাম, যাতে তিন মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে কাঁচা চামড়া। এতে সরকারী ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হযেছে ৭৫-১০০ কোটি টাকা। আগামী কোরবানির ঈদের আগে চামড়ার হাট হিসেবে খ্যাত ঢাকার সাভার, চট্টগ্রাম, নাটোর ও কুষ্টিয়ায় কাঁচা চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও গুদামজাত করার জন্য নির্মাণ করা হবে ৪টি মডেল গুদাম। পরে এর আওতায় ছয় শ’ গুদাম নির্মাণ করা হবে সারাদেশে। প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়ন হলে প্রতিবছর চামড়া নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিকদের দৌরাত্ম্য ও কারসাজি বন্ধ হতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। আইআইএফসি ও বুয়েট এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা ও সক্ষমতা যাচাই করে দেবে সমীক্ষা প্রতিবেদন। এর পাশাপাশি সাভারের চামড়া শিল্পনগরীর ইটিপির আধুনিকায়ন ও সংস্কারসহ বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও শত ভাগ পরিবেশবান্ধব হওয়া বাঞ্ছনীয় অবশ্যই। যাতে সন্নিহিত নদী-জলাশয়-কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত ও দূষিত না হতে পারে কোন অবস্থাতেই। প্রতিবছর ট্যানারি মালিক, আড়তদার, চামড়া রফতানিকারক ও লবণ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট চামড়ার দাম নিয়ে কারসাজি করে থাকে। ফলে কাঁচা চামড়া নিয়ে খুচরা ব্যবসায়ীদের বিপাকে পড়তে হয়। কয়েক বছর ধরেই ঈদ-উল-আজহায় আগের বছরের চেয়ে কমিয়ে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ীরা পানির দরে কাঁচা চামড়া কেনার সুযোগ পাচ্ছেন। কোরবানির পশুর চামড়া মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের হাত ঘুরে ঢাকার আড়তে আসে। আড়তদাররা এসব চামড়া কিনে সাভারের ট্যানারি শিল্পনগরীতে সরবরাহ করে থাকেন। স্থানীয় ব্যবসায়ী, ঢাকার আড়তদার ও ট্যানারি মালিক- এই তিন পক্ষের মধ্যে বড় অঙ্কের লেনদেন হয়ে থাকে। দেশে প্রতিবছর যে পরিমাণ পশুর চামড়া সংগ্রহ করা হয়, তার ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ আসে ঈদ-উল-আজহায়। চামড়ার দাম না বাড়ানোয় ট্যানারি মালিক ও এ শিল্প খাতে সংশ্লিষ্টরা লাভবান হলেও এতিম, অসহায়, এমনকি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন। কোরবানির চামড়া দেশের অমূল্য সম্পদ। সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্পের স্বার্থে কোরবানির চামড়া নিয়ে অসাধু বাণিজ্য বন্ধ করা জরুরী। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গৃহীত প্রকল্পটি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হলে এ থেকে সুফল পাওয়া যাবে বলেই প্রত্যাশা।
×