ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

বৈষম্যের বিরুদ্ধে

তমাল

প্রকাশিত: ১৮:০৪, ৯ জুলাই ২০২৫

বৈষম্যের বিরুদ্ধে

২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। গত বছর এই মাসেই সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহালের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলন শুধু একটি প্রতিবাদ নয়, বরং একটি গণ-অভ্যুত্থানে রূপান্তরিত হয়, যা শেষ পর্যন্ত তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটায়। এই আন্দোলন ছিল বৈষম্য, দুর্নীতি এবং স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভের প্রকাশ।
জুলাইয়ের শুরুতে, ৫ জুন ২০২৪-এ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রায়ে সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা রাজপথে নামে। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধের কর্মসূচি শুরু হয়। ১ জুলাই থেকে এই আন্দোলন তীব্রতর হয়, যখন শিক্ষার্থীরা শাহবাগ অবরোধ করে এবং ২০১৮ সালের কোটা সংস্কারের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবি জানায়।
আন্দোলনের গতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের দমন-পীড়নও তীব্র হয়। ১৪ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘রাজাকারের নাতি-পুতি’ মন্তব্য আন্দোলনকে আরও উত্তপ্ত করে। শিক্ষার্থীরা ‘তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার’ স্লোগানে স্লোগানে রাজপথ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ১৫ জুলাই থেকে সংঘর্ষ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়, যখন ছাত্রলীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। ১৬ জুলাই রংপুরে আবু সাঈদের শাহাদাত এবং পরবর্তীতে সারাদেশে পুলিশ ও সরকার সমর্থকদের গুলিতে শত শত মানুষের প্রাণহানি ঘটে। জাতিসংঘের তথ্যমতে, এই সময়ে কমপক্ষে ৬৫০ জন নিহত হয়, যার মধ্যে ৭০ জন শিশু।
১৮-১৯ জুলাই সরকার ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দিলেও জনগণের ক্ষোভ থামানো যায়নি। ১৯ জুলাই একদিনেই ১৪৮ জন নিহত হয়, যা এই আন্দোলনের সবচেয়ে রক্তাক্ত দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়। শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে আন্দোলন এক দফা দাবিতে রূপান্তরিত হয় শেখ হাসিনার পদত্যাগ। ৫ আগস্ট, লাখো মানুষের চাপে শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করেন এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।
এই আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি বৈপ্লবিক মুহূর্ত। এটি কেবল কোটা সংস্কারের দাবি নয়, বরং দীর্ঘদিনের দুর্নীতি, বৈষম্য ও অগণতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে জনগণের জাগরণ। তবে এই বিজয়ের পেছনে হাজারো শহীদ ও আহতদের ত্যাগ এবং তাদের পরিবারের কান্না আমাদের মনে করিয়ে দেয়, স্বাধীনতা ও ন্যায়ের মূল্য কতটা গভীর।

উত্তর বাড্ডা, ঢাকা থেকে

প্যানেল/মো.

×