
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলসহ বেশ কয়েকটি জেলা বর্তমানে ভয়াবহ বন্যার কবলে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুধু ঘরবাড়ি ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি করে না—মানুষের জীবনে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। বন্যাকবলিত মানুষগুলোর কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে নিরাপদ আশ্রয়, খাবার এবং বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা। এর সঙ্গে যুক্ত হয় এক অদৃশ্য ভয়—জীবাণুবাহী রোগের সংক্রমণ।
বন্যার পানিতে কী ঝুঁকি?
বন্যার সময় ময়লা-আবর্জনা, পয়োনিষ্কাশন, মানুষ ও পশুপাখির মলমূত্র একাকার হয়ে যায়। ফলে পানিতে ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও পরজীবী, যা থেকে সৃষ্টি হয় টাইফয়েড, কলেরা, আমাশয়, হেপাটাইটিস ‘এ’ ও ‘ই’-এর মতো পানিবাহিত রোগ। পাশাপাশি, মশা-মাছি এবং অন্যান্য কীটপতঙ্গ থেকে ছড়ায় ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া ও চিকুনগুনিয়ার মতো রোগ।
পানিকে কিভাবে নিরাপদ করবেন?
১. ফুটিয়ে পান করুন: বন্যার সময় যে কোনো পানিই নিরাপদ নয়। পানি ভালোভাবে ৩০ মিনিট ফুটিয়ে ঠান্ডা করে পান করাই সবচেয়ে নিরাপদ উপায়।
২. টিউবওয়েলের পরিচ্ছন্নতা: বন্যার পানিতে টিউবওয়েল তলিয়ে গেলে এক কলস পানিতে ৩–৪ চা চামচ ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে টিউবওয়েলের ভেতর ঢেলে আধা ঘণ্টা রেখে দিন। এরপর ৩০ মিনিট টানা চাপ দিয়ে পানি বের করে ফেলুন।
৩. বিকল্পে হ্যালোজেন ট্যাবলেট: পানি ফুটানোর সুযোগ না থাকলে হ্যালোজেন ট্যাবলেট ব্যবহার করতে পারেন। প্রতি দেড় লিটারে ৭.৫ মি.লি. গ্রাম হ্যালো ট্যাব আধা ঘণ্টা রেখে দিন, পানি বিশুদ্ধ হবে।
৪. ট্যাংক পরিষ্কার: ঘরের পানির ট্যাংকে প্রতি ১০০০ লিটারে ২৫০ গ্রাম ব্লিচিং পাউডার দিয়ে এক ঘণ্টা রাখলে বেশিরভাগ ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়। তবে ভাইরাসজনিত জীবাণুর জন্য পানি ফুটিয়ে নেওয়াই উত্তম।
মানসিক স্বাস্থ্যকেও গুরুত্ব দিন
শুধু শারীরিক স্বাস্থ্য নয়, বন্যার প্রভাব পড়ে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও। বাড়িঘর হারানো, জীবিকা বন্ধ হয়ে যাওয়া, ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা—সব মিলিয়ে আক্রান্তদের মাঝে দেখা দেয় দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও বিষণ্নতা। অনেক সময় তা কাউন্সেলিং ছাড়া কাটিয়ে ওঠা কঠিন হয়ে পড়ে।
উপসংহার: বিপদে সাহস রাখুন
বন্যা আমাদের বারবার বিপদে ফেলে, কিন্তু প্রতিবারই আমরা ঘুরে দাঁড়াই। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। সংক্রমণ ও রোগ থেকে বাঁচতে চাই সচেতনতা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সহায়তা গ্রহণ। পাশাপাশি মানসিকভাবে দৃঢ় থাকা, ধৈর্য ধরা এবং আশাবাদী থাকা জরুরি।
জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য প্রয়োজন সতর্কতা ও সাহস। বন্যা যত ভয়াবহই হোক না কেন, সম্মিলিত চেষ্টায় এবং সচেতনতার মাধ্যমে আমরা এর প্রভাব কাটিয়ে উঠতেই পারি।
আঁখি