ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঐক্যের ডাক আমেরিকার আত্মা পুনরুদ্ধার করতে হবে জাতির মেরুদন্ড মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে পুনর্গঠন করতে হবে

শ্রদ্ধা ফেরাতে হবে ॥ জয়ের পর বাইডেনের প্রথম ভাষণ

প্রকাশিত: ২২:২০, ৯ নভেম্বর ২০২০

শ্রদ্ধা ফেরাতে হবে ॥ জয়ের পর বাইডেনের প্রথম ভাষণ

তানিয়া হক ভূঁইয়া ॥ বহু নাটকীয়তা, জল্পনা-কল্পনা, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা শেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শনিবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার শাসনামালের ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর প্রথম ভাষণেই তাই তিনি ঐক্যের ডাক দিলেন। অন্যদিকে বর্তমান রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে পদত্যাগের হিড়িক শুরু হয়ে গেছে। আর ট্রাম্প প্রশাসনের উপদেষ্টা ও তার জামাতা জ্যারেড কুশনার ট্রাম্পকে পরাজয় মেনে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। যদিও ট্রাম্পের আইনজীবী ঘোষণা দিয়েছেন সোমবার থেকে তারা আইনী লড়াই শুরু করবেন। এছাড়া মিশিগান ও পেনসিলভানিয়াতে ট্রাম্প-সমর্থকরা বিক্ষোভ করেছে। তারা জর্জিয়া, মিশিগান ও পেনসিলভানিয়াতে সশস্ত্র অবস্থায় রাস্তায় নেমেছে। সংঘাতের আশঙ্কায় নিরাপত্তা জোরদার ও ন্যাশনাল গার্ড বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে হোয়াইট হাউসের বাইরে জমায়েত উচ্ছ্বসিত বাইডেন সমর্থকদের। খবর বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা, রয়টার্স, গার্ডিয়ান, পলিটিকো, দ্য হিল, ফক্স নিউজ ও লস এ্যাঞ্জেলেস টাইমসের। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম ভাষণে বাইডেন সকল বিভেদ ভুলে ঐক্য ও সহনশীল সমাজ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে উদ্দীপ্ত এক ভাষণে যারা তাকে ভোট দিয়েছেন, যারা তাকে ভোট দেননি, ডেমোক্র্যাট, রিপাবলিকান সবাইকে শত্রুতা ভুলে সহযোগিতার সম্পর্ক তৈরির আহ্বান জানান তিনি। তিনি ঐক্য শব্দটির ওপর বারবার বিশেষ গুরুত্ব দেন। যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক সময়ে যে ধরনের বিভেদ ও তিক্ততা তৈরি হয়েছে সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করছিলেন তিনি। তিনি বলেন, আমরা কি হতে চাই সে নিয়ে জোরালো সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এসেছে। আমরা যদি একে অপরকে সহযোগিতা না করার সিদ্ধান্ত নিতে পারি, তাহলে সহযোগিতা করার সিদ্ধান্তও নিতে পারি। ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আমিও বেশ কয়েকবার হেরেছি, আমি আপনার হতাশা বুঝতে পারছি। পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গদের মৃত্যুকে ঘিরে সহিংস আন্দোলন, করোনাভাইরাসে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যুর অভিজ্ঞতা না ভুলে নতুন সমাজ গড়তে সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে বলেন তিনি। কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারী প্রতিরোধে নেতৃত্ব দিতে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞানীদের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করার ঘোষণা দেন। জলবায়ুু পরিবর্তন মোকাবেলার গুরুত্ব উল্লেখ করেন। তিনি তার ভোটার, প্রচার ক্যাম্পের কর্মী, নির্বাচনে নানা ধরনের কাজে যারা অংশ নিয়েছেন, নিজের পরিবার, বন্ধু ও সহকর্মীদের ধন্যবাদ জানান। দেশটির কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীকে বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা যেভাবে আমার সঙ্গে ছিলেন, সেভাবেই আমিও আপনাদের পাশেই থাকব। সব হিংসা-বিভেদ ভুলে ঐক্য ও সহনশীল সমাজ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন জোসেফ রবিনেট বাইডেন। ভাষণে তিনি বলেন, যারা আমাকে ভোট দিয়েছেন, আর যারা দেননি আমি সবার জন্য কাজ করব। আমি যুক্তরাষ্ট্রের মূল শক্তির পুনর্গঠন করতে চাই। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষকে টেনে তুলতে চাই। যুক্তরাষ্ট্রকে এমনভাবে গড়ে তুলতে চাই, যাকে সারাবিশ্ব সম্মান করবে। নিজের নির্বাচনী প্রচার সদর দফতর থেকে দেয়া বিজয়ী ভাষণে বাইডেন আরও বলেন, এখন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘সারিয়ে তোলার’ সময়। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ‘আত্মা’কে ফিরিয়ে আনতে চান, দেশকে ‘বিভক্ত না করে ঐক্যবদ্ধ’ করতে চান। ভোটের মাঠে তুমুল লড়াই আর অনেক তিক্ততার পর ব্যাটল গ্রাউন্ড অঙ্গরাজ্য পেনসিলভানিয়ায় জয়ের মধ্য দিয়ে শনিবার বাইডেনের ২৭৩টি ইলেকটোরাল ভোট নিশ্চিত হয়। তাতেই ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে হারিয়ে বাইডেনের হোয়াইট হাউসে যাওয়া নিশ্চিত হয়ে যায়। কয়েক ঘণ্টা পর উইলমিংটনে উৎসবমুখর সমর্থকদের সামনে ভাষণ দিতে গিয়ে বাইডেন বলেন, আমি এমন একজন প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, যিনি বিভক্ত নয়, ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করবেন; যিনি লাল অঙ্গরাজ্য বা নীল অঙ্গরাজ্য দেখবেন না, শুধু যুক্তরাষ্ট্রকে দেখবেন। আমি চাই আমেরিকার আত্মাকে ফিরিয়ে আনতে, এই জাতির মেরুদণ্ড মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে পুনর্গঠন করতে এবং আমেরিকার প্রতি ফের পুরো বিশ্বের শ্রদ্ধা ফিরিয়ে আনতে, এখানে বাড়িতে আমাদের মধ্যে একতা ফিরিয়ে আনতে। নির্বাচনে যারা তাকে ভোট দেননি তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এখন কর্কশ রাজনৈতিক বাগাড়ম্বর দূরে ঠেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার সময়, আবার একে অপরের দিকে তাকান, ফের একে অপরের কথা শোনেন আর এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের প্রতিপক্ষকে শত্রু হিসেবে বিবেচনা বন্ধ করুন। নবনির্বাচিত এই প্রেসিডেন্ট জানান, জানুয়ারিতে তার অভিষেকের দিন থেকেই যেন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা যায় তা নিশ্চিত করতে তিনি তার করোনাভাইরাস রেসপন্স কমিটি গঠন করে রাখবেন। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মনুষ কথা বলেছে। তারা আমাদের সুস্পষ্ট বিজয় এনে দিয়েছেন। এটা জনগণের বিজয়। এই জাতির ইতিহাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আমরা সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছি, সাত কোটি ৪০ লাখ ভোট। আমার ওপর আপনাদের এই আস্থা ও বিশ্বাসের জন্য আমি কৃতজ্ঞ। কোটি কোটি আমেরিকান আমার দৃষ্টিভঙ্গির পক্ষে ভোট দিয়েছেন। এটি আমার জীবদ্দশায় এক অনন্য সম্মান। যে দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ রায় দিয়েছে তাকে বাস্তবে পরিণত করাই এখন আমাদের কাজ। বাইডেনের জয়ের খবর যখন প্রকাশ হচ্ছিল, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তখন ছিলেন ভার্জিনিয়ার স্টার্লিংয়ে গলফ কোর্সে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ভোটের হার দেখেই বিজিত প্রার্থী হার স্বীকার করে নেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখনও তা করেননি বরং তিনি মামলা করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। ১৯৯০ দশকের পর ট্রাম্পই যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট, যাকে এক মেয়াদ দায়িত্ব পালন শেষে হোয়াইট হাউস ছাড়তে হচ্ছে। এদিকে শনিবার বাইডেনের বিজয় ভাষণের এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি হার মেনে নেবেন না; বরং আইনী লড়াই চালিয়ে যাবেন। কমলা হ্যারিসের আশাবাদ ॥ মার্কিন জনগণ আমেরিকার জন্য নতুন দিনের সূচনা করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নব-নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা দেবী হ্যারিস। তিনি বলেছেন, গণতন্ত্র যখন ঝুঁকিতে, নির্বাচনে ব্যালটের মাধ্যমে নতুন নেতা নির্বাচন করে আমেরিকার জনগণ নতুন দিনের সূচনা করেছেন। রবিবার সকালে ডেলাওয়ার অঙ্গরাজ্যর উইলমিংটন শহর থেকে দেয়া ভাষণে কমলা এ কথা বলেন। দেশটির প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা ভাষণে বলেন, চার বছর ধরে মার্কিন জনগণ সমতা, ন্যায়বিচারসহ ধরিত্রী রক্ষার জন্য রাজপথে লড়াই করেছেন। তারপর ভোট দিয়েছেন। আপনারা স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। আপনারা আশা, ঐক্য, শালীনতা, বিজ্ঞান ও সত্যকে বেছে নিয়েছেন। আপনারা প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনকে বেছে নিয়েছেন। মার্কিন জনগণের উদ্দেশে কমলা বলেন, আমাদের দেশকে যারা সুন্দরভাবে গড়ে তুলেছেন, সেই আমেরিকান জনগণকে ধন্যবাদ। ট্রাম্প-সমর্থকদের বিক্ষোভ ॥ প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেনের বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পর পেনসিলভানিয়া ও মিশিগানের মতো ‘ব্যাটল গ্রাউন্ড’ অঙ্গরাজ্যগুলোতে বিক্ষোভ শুরু করেছে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমর্থকরা। শনিবার থেকে শত শত বিক্ষোভকারী জড়ো হয়ে নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করেন। একে মিডিয়ার কারসাজি বলে উল্লেখ করেন তারা। বাইডেনের জয় নিশ্চিত হওয়ার পর পরই পেনসিলভানিয়ার হারিসবার্গে স্টেট ক্যাপিটল বিল্ডিং-এ বিক্ষোভ শুরু করেন শত শত ট্রাম্প-সমর্থক। ইয়র্কটাউন স্টেট রিপ্রেজেন্টেটিভ মাইক জোন্স বলেন, আমাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে যে প্রত্যেকটি বৈধ ভোট পাওয়া গেছে এবং নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। আমরা যদি দেশকে সমাজতন্ত্রের দিকে ঠেলে দিই, তার মানে এ নয় যে বামরা আমাদেরকে ছাড়িয়ে গেছে বরং এর কারণ হলো ভাল নারী-পুরুষরা কিছু করে দেখাতে পারেননি। অনেকে আবার অভিযোগ করেছেন, শুরু থেকেই মিডিয়া ও বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো ট্রাম্পের পিছু নিয়েছে। হারিসবার্গের বাসিন্দা ম্যারি ওয়ালেস বলেন, মিডিয়াই নির্বাচনের ফল ঘোষণা করেছে। সরকার ভোটকে স্বীকৃতি দেয়নি। সুতরাং এখনও যে কোন কিছু ঘটারই সম্ভাবনা আছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প আরও চার বছর থাকুন। এর বেশি কিছু চাই না আমি। বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মিলিশিয়া গ্রুপ এ্যাংগ্রি ভাইকিং প্যাট্রিয়টস অব আমেরিকা এবং পেনসিলভানিয়া থ্রি পারসেন্টারসকে দেখা গেছে। এ্যাংগ্রি ভাইকিংসের ডিলান স্টিন্সে বলেন, আমি পুরোপুরিভাবে আশাবাদী যে বিষয়টি সুপ্রীমকোর্টে গড়াবে। এটা কোন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব নয়। এটা সাধারণ বোধের বিষয়। আমি পুরোপুরিভাবে আশা করছি, ট্রাম্প এ ফল চ্যালেঞ্জ করবেন এবং তা তার করা উচিত। আরেক সুইং স্টেট মিশিগানেও বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে ট্রাম্প সমর্থকদের। ২০১৬ সালে এ অঙ্গরাজ্যটিতে ট্রাম্প জয় পেলেও এবার সেখানে বিজয়ী হয়েছেন বাইডেন। ফল প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিতে থাকেন-‘আমরা জিতে গেছি’ ‘আরও চার বছর আছি’। অস্ত্র হাতে রাস্তায় ট্রাম্প সমর্থকরা ॥ ট্রাম্পের সশস্ত্র সমর্থকরা দেশটির বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের রাজপথে নেমে মহড়া দিচ্ছে। জর্জিয়া, এ্যারিজোনা ও পেনসিলভানিয়ার মতো যেসব দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যে বাইডেন হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর জয়লাভ করেছেন সেসব অঙ্গরাজ্যের রাস্তায় এ ধরনের সশস্ত্র ট্রাম্প সমর্থককে মহড়া দিতে দেখা গেছে। এতে সংঘাতের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্কাই নিউজের বিশেষ প্রতিনিধি এ্যালেক্স ক্রফোর্ড ছবিসহ এ ধরনের ভারি অস্ত্রে সজ্জিত মানুষের ছবি প্রকাশ করেছেন। তিনি জানাচ্ছেন, সশস্ত্র ব্যক্তিরা বলছিল, তারা যুদ্ধে যাচ্ছে বলেই তাদের কাছে ভারি অস্ত্র রয়েছে। জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের ভারি অস্ত্রে সজ্জিত এসব মানুষ বলছিল, নিরাপত্তাগত কারণে এবং ‘বাইডেনের হাত থেকে আমেরিকাকে রক্ষা করতেই’ তারা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে। ট্রাম্পের এসব সমর্থকের কেউ কেউ ‘বাইডেন দেশকে ধ্বংস করে ফেলবেন’ বলেও অভিযোগ করেন। এ্যারিজোনা ও পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের রাজপথ থেকেও একই ধরনের দৃশ্য চোখে পড়ার খবর এসেছে। রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ের পর বিজয়ী হন বাইডেন। উচ্ছ্বসিত বাইডেন সমর্থকরা ॥ বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার খবরে হোয়াইট হাউসের বাইরে জমায়েত হয়েছে উচ্ছ্বসিত বাইডেন সমর্থকরা। সেখানে জড়ো হয়ে বিজয় উদ্যাপনে মেতেছে হাজারো বাইডেন সমর্থক। ডেমোক্র্যাট সমর্থকদের পদভারে মুখরিত পুরো এলাকা। হোয়াইট হাউসের বাইরের রাস্তায় এখন উৎসবের আমেজ। গাড়ির হর্ন ও বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে নিজেদের উচ্ছ্বাসের জানান দেন বাইডেন সমর্থকরা। গান-বাজনা আর শ্যাম্পেইনের বোতল নিয়ে উল্লাস করতে দেখা যায় তাদের। সমবেত জনতার অনেকের হাতেই ছিল মার্কিন পতাকা। সমকামীদের পতাকা নিয়েও সেখানে হাজির হন অনেকে। কেউবা আবার এসেছিল ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার লেখা টি-শার্ট পরে। ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার প্লাজা এলাকায় বিজয় উদ্যাপন করছিলেন অবসরপ্রাপ্ত অনুবাদক বার্নাডেট এটিনি। দিনভর নাচ-গানের মধ্য দিয়ে দিবসটি উদ্যাপনের পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। বার্নাডেট এটিনি বলেন, ট্রাম্প জামানার ভয়াবহ দুঃস্বপ্নের দিনগুলো থেকে মুক্তি পেতে বহু কাঠখড় পোহাতে হয়েছে। করোনা মহামারীর মধ্যেই এদিন হোয়াইট হাউসের বাইরে সমবেত হন বাইডেন সমর্থকরা। তবে তাদের বেশিরভাগেরই মাস্ক ছিল। উচ্ছ্বসিত ডেমোক্র্যাটদের ভিড় এতটাই বেশি ছিল যে, মানুষের উপচেপড়া ভিড়ে এক পর্যায়ে ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ট্রাম্পের কর্মকর্তাদের পদত্যাগের হিড়িক ॥ ট্রাম্প প্রশাসনের একের পর এক কর্মকর্তা পদত্যাগ করছেন। সম্প্রতি দেশটির জাতীয় পরমাণু নিরাপত্তা প্রশাসনের (এনএনএসএ) প্রধান এবং পরমাণু জ্বালানি নিরাপত্তা বিষয়ক সহকারী মন্ত্রী লিসা গর্ডন হ্যাজারটি পদত্যাগ করেছেন। ট্রাম্পের ভোটে হেরে যাওয়ার আভাস এবং তার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির কারণে নির্বাচনী প্রচার শিবির ও হোয়াইট হাউসের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা সরে যাচ্ছেন বলে হোয়াইট হাউসের ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন। মার্কিন জ্বালানি মন্ত্রণালয় এক প্রেস বিজ্ঞাপ্তির মাধ্যমে লিসার পদত্যাগের কথা জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, লিসা গর্ডন পদত্যাগপত্র জমা দেন এবং এর পরপরই তা কার্যকর করা হয়। এরই মধ্যে সংস্থার উপপ্রধান উইলিয়াম বুকলেসকে ভারপ্রাপ্ত প্রধানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। উইলিয়াম বুকলেস গত দেড় বছর ধরে এ সংস্থার উপপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। লিসার পদত্যাগের পর মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, লিসা এনএনএসএর অবকাঠামোকে আধুনিকায়ন এবং বিশ্বমানের শক্তিশালী কর্মী বাহিনী তৈরির দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়া তিনি এনএনএসএর প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড এবং সংস্থায় কর্মরত ৫০ হাজার কর্মী বাহিনীর কাজের মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছেন। এর আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে মতবিরোধের জের ধরে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর মন্ত্রিসভার সদস্যরা পদত্যাগ করে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের জন্য পথ সহজ করে দেন। তবে এসপারের বিষয়ে জল্পনা ছিল যে, নির্বাচনের পর ট্রাম্প তাকে বরখাস্ত করতে পারেন। সেক্ষেত্রে এসপার আগেই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। এর আগের মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিসও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে পদত্যাগ করেন। এছাড়া, মার্কিন প্রশাসনের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আরও অনেক উর্ধতন কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন কিংবা তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে। ট্রাম্পের আমলে যত মন্ত্রী ও শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাকে বহিষ্কার অথবা পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে আমেরিকার ইতিহাসে তা নজিরবিহীন। মার্কিন নির্বাচন কমিশনের দাবি ॥ যুক্তরাষ্ট্রেও ফেডারেল নির্বাচন কমিশন গত ৩ নবেম্বরের নির্বাচনে কোন ধরনের জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়ে দিয়েছেন। দেশটির ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান পার্টি নির্বাচনে জালিয়াতি হয়েছে বলে একাধিকবার অভিযোগ করেছে। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা এলেন উয়েনট্রব নির্বাচনে জালিয়াতির প্রমাণ মেলেনি বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, আমি আমেরিকানদের জানাতে চাই যে, চলতি বছরের নির্বাচনে সত্যিই কোন ধরনের জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারের শুরু থেকেই ডাকযোগে ভোটে জালিয়াতি হতে পারে বলে আশঙ্কা জানিয়ে আসছিলেন। ভোট গ্রহণের দিন থেকে রিপাবলিকান শিবির নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট পার্টি চুরির চেষ্টা করছে বলে বার বার অভিযোগ তুলেছে। যদিও নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোন ধরনের প্রমাণ হাজির করতে পারেনি রিপাবলিকানরা। স্থানীয় সময় শনিবার সকালে মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে এলেন উয়েনট্রব বলেন, দেশজুড়ে কেন্দ্রীয়, স্থানীয় এবং ভোট কর্মকর্তারা সত্যিই কঠোর পরিশ্রম করেছেন। নির্বাচন যেভাবে সম্পন্ন হয়েছে; তাতে খুব সামান্যই অভিযোগ উঠেছে। তিনি বলেন, বাস্তবসম্মত অভিযোগ খুব কম এসেছে। কোন ধরনের ভোট জালিয়াতির প্রমাণ মেলেনি। অবৈধ ভোট গ্রহণের কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আসলে এটার জন্য শুধু আমার কথা শুনলেই হবে না। কারণ দেশজুড়ে সাধারণ মানুষ, নিরপেক্ষ নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা নির্বাচনী প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করছেন। নির্বাচন কিভাবে সম্পন্ন হয়েছে সারাদেশের মানুষ সেটি দেখেছেন। উইনট্রব বলেন, আসলেই নির্বাচনে জালিয়াতির কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। জালিয়াতির প্রমাণ হিসেবেও অভিযোগের সঙ্গে কোন কিছু উপস্থাপন করা হয়নি। দেশটির মোট ২৪ কোটি ভোটারের মধ্যে ১৯ কোটি নির্বাচনে ভোট দেয়ার জন্য নিবন্ধন করেছিলেন। করোনা মহামারীর কারণে জনসমাগম এড়াতে এবার দেশটিতে আগাম ভোটের পরিমাণ বেশি ছিল। ভোট গ্রহণ হলেও এখনও হাজার হাজার ভোট গণনা বাকি রয়েছে। হার না মানা বাইডেন ॥ শৈশবে তোতলামির কারণে সহপাঠী ও বন্ধুদের কাছে হাসির পাত্র হওয়া, ব্যক্তিগত জীবনে ভয়াবহ ট্র্যাজেডি, প্রথমবার হোয়াইট হাউসে পৌঁছানোর দৌড়ে নেমে বক্তৃতা চুরির দায় মাথায় নিয়ে সরে দাঁড়ানো কিংবা প্রার্থী হওয়ার লড়াইয়ে নেমে ব্যর্থ হওয়া। এসবের কোনটিই যুক্তরাষ্ট্রে নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের লক্ষ্য পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। হার না মানার মানসিকতা আর নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার অদম্য চেষ্টতেই শেষ পর্যন্ত হোয়াইট হাউসে যাওয়ার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ করলেন তিনি। বাইডেনের প্রথম স্ত্রী নেইলিয়া তাদের বিয়ের আগে ১৯৬৪ সালে তার এক বান্ধবীকে হবু বরের প্রশংসা করতে গিয়ে বলছিলেন, ৩০ বছর বয়সের মধ্যেই সে (বাইডেন) সিনেটর হতে যাচ্ছে এবং একদিন সে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হবে। ১৯৭২ সালে ২৯ বছর বয়সে ডেলওয়ারের সিনেটর নির্বাচিত হয়ে সেই কথা রাখেন বাইডেন। ১৯৮৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য তিনি প্রথমবার প্রার্থী মনোনয়নের দৌড়ে নামার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ১৯৮৭ সালের ৯ জুন ওই ঘোষণার পর প্রতিদ্বন্দ্বীদের পেছনে ফেলে তিনি তরতর করে এগিয়েও যাচ্ছিলেন। কিন্তু তিন মাসের মাথায় বক্তৃতা চুরি করার কেলেঙ্কারি স্বীকার করে তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। তারপর ২০০৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী হওয়ার মনোনয়নের দৌড়ে নেমেছিলেন বাইডেন। সেবার বারাক ওবামার কাছে হেরে যান। পরে তিনি ওবামার রানিং মেট হন এবং তার আমলে আট বছর ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের সেরা ভাইস-প্রেসিডেন্টের তকমা দিয়েছিলেন বাইডেনকে। এবার ৭৭ বছর বয়সে এসে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন। বাইডেনই এখন হবেন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট। বয়সের কারণে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে তিনি শারীরিকভাবে দুই মেয়াদে ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকতে সক্ষম হবেন কিনা। তাছাড়া, করোনাভাইরাস মহামারীর এই সময়ে তার সামনে আছে নানা অনিশ্চয়তা এবং চ্যালেঞ্জও। বাইডেনের প্রথম ১০০ দিনের চ্যালেঞ্জ ॥ হোয়াইট হাউসে যাওয়ার পর প্রথমেই বাইডেনকে সবচেয়ে বড় যে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে সেটা নিশ্চিতভাবেই করোনাভাইরাস। মহামারী নিয়ন্ত্রণে চরম ব্যর্থতার জেরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি আমেরিকানরা আস্থা হারান। এই আস্থাহীনতার জেরেই হয়ত হার দেখতে হলো ট্রাম্পকে। জনগণের মনে সরকার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব এখন বাইডেনের কাঁধে। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে কোভিড-১৯ মহামারীর যে ধাক্কা লেগেছে সেটাও তাকে সামাল দিতে হবে। মহামারীর কারণে দেশটির দুই কোটি মানুষ কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থা থেকে দেশকে উদ্ধারে বাইডেনকে ঐতিহাসিক কিছু করতে হবে বলে মনে করেন ডেমোক্র্যাটিক কর্মী সৈকত চক্রবর্তী। তিনি বলেন, তার হাতে মহামারী এবং মন্দা মোকাবেলার দায়িত্ব তুলে দেয়া হয়েছে। তাকে মূলত এসব সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে বের করতেই বেছে নেয়া হয়েছে। তাই এখন তাকে বড় কিছু করতে হবে। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে উপ-শ্রমমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা ক্রিস লিউ বলেন, ‘এখনকার পরিস্থিতি অনেকটা ২০০৯ সালের মতো। সেবার মহামন্দার মধ্যে আমরা ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলাম। এখন যে অবস্থা চলছে সেটাকে মন্দা বলা যায় এবং এবার তার সঙ্গে জনস্বাস্থ্য বিষয়ে আরও কঠিন একটি চ্যালেঞ্জ যোগ হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারের সময়ই বাইডেন শিবির মহামারী নিয়ন্ত্রণে একটি বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনা দিয়েছেন। ওই পরিকল্পনার অন্যতম হলো মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা, রোগ শনাক্তে পরীক্ষা আওতা অনেক বাড়ানো, আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা মানুষদের খুঁজে বের করা এবং কোভিড-১৯ চিকিৎসা করাতে গিয়ে বড় ধরনের মেডিক্যাল বিল পরিশোধের বোঝা থেকে সাধারণ মানুষকে উদ্ধার করা। প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে বাইডেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কিছু কাজও করবেন। যার মধ্যে আছে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে পুনরায় যোগ দেয়া। বাইডেন আবার সেই চুক্তিতে ফেরার পাশাপাশি বাতাসের মান বাড়ানো এবং গ্রীন হাউস গ্যাস কমানোর জন্য নানা পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টার মধ্য দিয়ে বিশ্ব উষ্ণায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার পথে এগুবেন। তিনি ওবামার আমলে করা স্বাস্থ্যবীমা ‘এ্যাফোরডেবল কেয়ার এ্যাক্ট’ আইনের আওতাও বাড়াবেন। স্বাস্থ্য বীমার আওতা আরও বাড়াতে চান বাইডেন। তিনি ৯৭ শতাংশ আমেরিকানকে এই বীমার আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেছেন। অভিবাসনে ট্রাম্পের নীতি বদলে দেবেন বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের আশ্রয়প্রার্থনার বর্তমান নীতি পাল্টে দেবেন তিনি। শরণার্থীদের আটকে রাখার ট্রাম্পের যে নীতিতে বহু পরিবারকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে সেই নীতিরও অবসান ঘটাবেন তিনি। ট্রাম্প খাদ্য স্ট্যাম্প, মেডিকেইড এবং অন্যান্য জনকল্যাণমুখী প্রকল্পের সুবিধা ভোগকারী অভিবাসীদের নাগরিকত্ব না দেয়ার যে নতুন নিয়ম চালু করেছিলেন তাও বাইডেন উল্টে দেবেন। ড্রিমার ও তাদের পরিবারের অনুকূলে কাজ করবেন বাইডেন। যে ন্যাশনাল ইমার্জেন্সির আওতায় মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল তোলার জন্য প্রতিরক্ষা খাত থেকে অর্থ বরাদ্দ হয় তারও অবসান ঘটাবেন তিনি। বিশ্ব নেতাদের প্রতিক্রিয়া ॥ বৈশ্বিক নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টেকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন অথবা টুইট করেছেন; জাস্টিন ট্রুডো, যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় কানাডা সরকারের পক্ষ থেকে আমি জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিসকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক অসাধারণ- বিশ্ব মঞ্চে যা অনন্য। যেভাবে আমরা একসঙ্গে বিশ্বের বৃহত্তম চ্যালেঞ্জগুলো সামলিয়েছি তেমনি নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাইডেন, নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারিস, তাদের প্রশাসন ও যুক্তরাষ্ট্রে কংগ্রেসের সঙ্গে কাজ করার জন্য অপেক্ষা করে আছি আমি। জার্মানির চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেল, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে ভবিষ্যতে সহযোগিতার প্রত্যাশায় আছি। আমরা যদি আমাদের সময়ের বিশাল চ্যালেঞ্জগুলোর মোকাবেলা করতে চাই তাহলে আটলান্টিকের দুই পারের সম্পর্ক অটুট রাখার বিকল্প নেই। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় জো বাইডেনকে ও তার ঐতিহাসিক কৃতিত্বের জন্য কমলা হ্যারিসকে অভিনন্দন। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র এবং আমি জলবায়ু পরিবর্তন থেকে বাণিজ্য ও নিরাপত্তার মতো আমাদের অংশীদারিত্ব মূলক অগ্রাধিকারগুলো নিয়ে একসঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করার জন্য সামনে তাকিয়ে আছি। জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা, জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিসকে উষ্ণ অভিনন্দন। জাপান-যুক্তরাষ্ট্রের মৈত্রী আরও শক্তিশালী করে তুলতে ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল ও এর বাইরে শান্তি, স্বাধীনতা ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে আপনাদের সঙ্গে কাজ করার অপেক্ষায় আছি। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, আমেরিকানরা তাদের প্রেসিডেন্ট বেছে নিয়েছে। অভিনন্দন জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিস! আজকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের অনেক কিছু করার আছে। একসঙ্গে কাজ করা যাক! ভারতের প্রধানমনন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, আপনার দর্শনীয় বিজয়ের জন্য আপনাকে অভিনন্দন জো বাইডেন! ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে আপনার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ও অমূল্য ছিল। ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য ফের একসঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করার জন্য অপেক্ষা করে আছি আমি। কমলা হ্যারিসকে নিয়ে নরেন্দ্র মোদি, আন্তরিক অভিনন্দন কমলা হ্যারিস। আপনার সাফল্য অনন্য এবং বিপুল গর্বের বিষয়, যা শুধু আপনার মায়ের বোনদের জন্যই নয় বরং সব ইন্ডিয়ান-আমেরিকানদের জন্য। আমার বিশ্বাস আপনার সমর্থন ও নেতৃত্বে ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের প্রাণবন্ত মৈত্রী আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, জো আমাদের মধ্যে প্রায় ৪০ বছরের দীর্ঘ ও উষ্ণ ব্যক্তিগত সম্পর্ক আছে আর আমি তোমাকে ইসরাইলের একজন মহান বন্ধু বলেই জানি। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের সঙ্গে বিদ্যমান বিশেষ মৈত্রীকে আরও শক্তিশালী করার জন্য তোমাদের উভয়ের সঙ্গে কাজ করার জন্য অপেক্ষা করছি আমি। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, অভিনন্দন জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিস। গণতন্ত্র নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন এবং অবৈধ কর স্বর্গ ও দুর্নীতিপরায়ণ নেতাদের জাতীয় সম্পদ চুরি বন্ধ করতে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে কাজ করার অপেক্ষায় আছি। পাশাপাশি আফগানিস্তান ও এই অঞ্চলের শান্তির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করে যাব আমরা। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা দেবী হ্যারিসকে অভিনন্দন জানানোর চেয়ে তার কাছে আর কিছু অধিক গর্বের নেই। বাইডেন এমন কিছু বিস্ময়কর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে হোয়াইট হাউসে ঢুকবে যা আর কোন নতুন প্রেসিডেন্টকে মুখোমুখি হতে হয়নি। বিল ক্লিনটন টুইটে লিখেছেন, আমেরিকা কথা বলেছে এবং গণতন্ত্রের জয় হয়েছে। বাইডেন ও হ্যারিস সবার জন্য কাজ করবেন এবং সবাইকে একতাবদ্ধ রাখবেন। এক বিবৃতিতে ৩৯তম প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার বলেন, তিনি ও তার স্ত্রী ডেমোক্র্যাটদের দক্ষ নির্বাচনী প্রচার এবং তারা দেশে যে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে তা দেখে তিনি গর্বিত।
×