ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মেয়র তাপসের সঙ্গে বৈঠকে সিদ্ধান্ত

নবেম্বরেই মাটির নিচে ইন্টারনেট ও ক্যাবল লাইন

প্রকাশিত: ২২:০২, ১৯ অক্টোবর ২০২০

নবেম্বরেই মাটির নিচে ইন্টারনেট ও ক্যাবল লাইন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রবিবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) ও ক্যাবল অপারেটার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) নেতাদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে আগামী নবেম্বরের মধ্যে মাটির নিচে তার প্রতিস্থাপন করতে হবে। বৈঠকে আইএসপিবি ও কোয়াব নেতৃবৃন্দ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মাটির নিচ দিয়ে তার প্রতিস্থাপন করার অঙ্গীকার করেছেন। নগর ভবনে আয়োজিত এই বৈঠকে মেয়র বলেন, ইন্টারনেট ও ক্যাবল টিভির ঝুলন্ত তার মাটির নিচে প্রতিস্থাপন করতে হবে। বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) তার অপসারণের অভিযান বন্ধ রাখা হবে। যদি নবেম্বরের মধ্যে মাটির নিচ দিয়ে তার প্রতিস্থাপন করতে না পারেন-তাহলে আবার তার কাটা অভিযান চালিয়ে মহানগরীকে তারের জঞ্জাল মুক্ত করব। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে সড়কে ঝুলন্ত তার অপসারণে আপাতত অভিযান পরিচালনা করা হবে না। সংশ্লিষ্টরা নিজ খরচে মাটির নিচ দিয়ে তারের সংযোগ নেবেন। নবেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। এরচেয়ে বেশি সময় নেয়া হলে আবার তার অপসারণের অভিযান শুরু হবে। বৈঠকে আইএসপিএবির সভাপতি এম এ হাকিম বলেন, আজ থেকেই ঝুলন্ত তার নামিয়ে মাটির নিচ দিয়ে সংযোগের কাজ শুরু করা হবে। আশা করি, নবেম্বরের মধ্যেই আমরা এই কাজ শেষ করতে পারব। এর আগে ঝুলন্ত তার অপসারণের প্রতিবাদে রবিবার থেকে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখার কর্মসূচী ঘোষণা করেছিল আইএসপিএবি এবং কোয়াব। দুই মন্ত্রীর মধ্যস্থতায় ওই কর্মসূচী রবিবার সন্ধ্যায়ই স্থগিত ঘোষণা করা হয়। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, কোয়াব এবং আইএসপিএবি নেতৃবৃন্দ জুম মিটিংয়ে যুক্ত হয়ে সমঝোতায় আসেন। মোস্তাফা জব্বার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবকে জানান। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে সার্বিক বিষয় তুলে ধরবেন। আশা করি আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে দ্রুত পদক্ষেপ পাব। আপনারা ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেন। এমন আশ্বাস পেয়ে আইএসপি ও কোয়াব নেতৃবৃন্দ ধর্মঘট স্থগিত করেন। মিটিংয়ে পলক বলেন, আশা করি আমরা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে একটা যৌক্তিক সমাধানে আসতে পারব। আইএসপিদের এই সমস্যা দীর্ঘদিনের। বিষয়টি এবার একটি চূড়ান্ত পর্যায়ে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। গত সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্থায়ী সমাধান না করা পর্যন্ত কোন ঝুলন্ত ক্যাবল অপসারণ না করাসহ পাঁচ দফা দাবি জানায় আইএসপিএবি ও কোয়াব। তাদের দাবির মধ্যে ছিল আইএসপিএপি, কোয়াব, বিটিআরসি, এনটিটিএন এবং সিটি কর্পোরেশন সমন্বয়ে ‘লাস্ট মেল ক্যাবল’ স্থাপন করা হয়েছে কি না। তা নিশ্চিত করার জন্য একটি কমিটির মাধ্যমে সরেজমিনে তদন্তের ব্যবস্থা করা। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাসাবাড়ি, অফিস ও ব্যাংকসহ সব পর্যায়ে ইন্টারনেট ও ক্যাবল টিভি সেবার মূল্য নির্ধারণ করা। গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট ও ক্যাবল টিভি সেবা স্বল্পমূল্যে দেয়ার লক্ষ্যে এনটিটিএনের মূল্য সরকারের মাধ্যমে নির্ধারণ করা এবং গ্রাহক পর্যায়ে নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদানে নিশ্চয়তার পক্ষে এনটিটিএনগুলো সার্বিক সক্ষমতা আছে কিনা তা যাচাইয়ের ব্যবস্থা করা। বৈঠকে মন্ত্রীর আশ্বাস মেলার পর আপাতত কর্মসূচী স্থগিত করার কথা জানান আইএসপিএবি সভাপতি আবদুল হাকিম। ইন্টারনেট ও ক্যাবল টিভির ঝুলন্ত তার মাটির নিচে প্রতিস্থাপনে নবেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে আপাতত তার অপসারণের অভিযান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএসসিসি। এদিকে ফাইবার এ্যাট হোমের হেড অব পিআর এ্যান্ড গবর্নমেন্ট এ্যাফেয়ারস আব্বাস ফারুক জনকণ্ঠকে বলেন, এনটিটিএন (ন্যাশন ওয়াড টেলিযোগাযোগ ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক) লাইসেন্স আমরা নিয়েছি ২০০৯ সালে ৭ জানুয়ারি। দীর্ঘ ১১ বছর চলে গেছে। এই ১১ বছরে আমরা সারাদেশে ৫০ হাজার কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক তৈরি করেছি । দেশের ৮টি বিভাগ, ৬৪টি জেলা, ৪৯১টি উপজেলা এবং ৩০৫০টি ইউনিয়নে আমাদের নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছে। আমরা সরকারের ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছি। কারণ আমাদের তৈরি করা অবকাঠামোর ফলেই শহর ও গ্রামের মধ্যে দূরত্ব হ্রাস পেয়েছে । এই ১১ বছরে আমরা হাজার কোটি টাকা খরচ করে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করেছি। আমাদের দেয়া এনটিটিএন গাইডলাইনের বাধ্যবাধকতা পূরণ করেছি এবং এই জন্য সরকারকে দেয়া ১০ কোটি টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি আমরা ফেরত পেয়েছি। আমাদের গাইডলাইনের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে, শহরের বৈদ্যুতিক খুঁটিতে অবৈধভাবে ঝুলে থাকা তারসমূহ আমাদের শক্তিশালী ভূগর্ভস্থ নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে নেয়া। এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য, আমরা ঢাকা শহরে এক হাজার ৮শ’ কিলোমিটার মেশ নেটওয়ার্ক তৈরি করেছি। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের উল্লেখিত প্রধান প্রধান সড়ক ও সেকেন্ডারি সড়কগুলোতে আমাদের নেটওয়ার্ক পৌঁছে গেছে । তাছাড়া ঢাকা শহরে গুরুত্বপূর্ণ ৬টি এলাকা মতিঝিল, কাওরানবাজার, নিকেতন, গুলশান, বনানী ও মহাখালী ডিওএইচএস এ প্রতিটি বিল্ডিংয়ে আমাদের অপটিক্যাল ফাইবারের সংযোগ রয়েছে । কিন্তু অন্ত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, যে আমাদের তৈরিকৃত নেটওয়ার্কের ১০ভাগ ও ব্যবহার হচ্ছে না। যেসব বিল্ডিং এর নিচে আমাদের নেটওয়ার্ক রয়েছে, কিন্তু ওই সব বিল্ডিংয়ের জানালা-দরজা-ছাদ দিয়ে ওভারহেড ক্যাবল ঢুকেছে । এতে যে শুধু এনটিটিএন অপারেটররাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা কিন্ত না। এতে সরকারের ও ক্ষতি হচ্ছে। কারণ সরকার আমাদের রেভেনিউ পার্টনার। আমরা বর্তমানে বিনিয়োগের ঝুঁকিতে রয়েছি। ভবিষ্যতে যে আমরা ঢাকা শহরে অলিতে গলিতে নেটওয়ার্ক তৈরি করব কি না, তা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে আছে।
×